নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নবদিগন্ত উন্মোচন, একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষ সাধনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বমানে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২০ দফা সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
রাষ্ট্রপতির কাছে সম্প্রতি ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ‘৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০’ পেশ করা হয়।
করোনার মতো পরিস্থিতিতে ব্লেন্ডেড এডুকেশন, চৌর্যবৃত্তি রোধে নীতিমালাসহ বাছাইকৃত মেধাবীদের মাস্টার্স ডিগ্রিতে ভর্তির মতো সুপারিশ করেছে ইউজিসি।
১. দেশে উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদার ওপর গুরুত্বারোপ করে বর্তমান সরকার দেশের প্রতি জেলায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। ফলে বর্তমানে দেশে পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মোট ১৫৭টি। এছাড়া আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান। এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত কলেবর ও উদ্ভূত নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইউজিসির দায়িত্ব ও কর্তব্য অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এমতাবস্থায় বিদ্যমান অবকাঠামো ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে তদারকি করা কমিশনের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে। উপরন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনের আইনি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত অনুভূত হচ্ছে। কাজেই আর্থিক বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিসহ কমিশনকে আইনগতভাবে অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করা অতীব জরুরি।
২. দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরি করতে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি, উন্নতমানের গবেষণা করার জন্য সেন্ট্রাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও গবেষণার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র চিহ্নিত করার জন্য ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। সরকার অনুমোদিত উচ্চ শিক্সার কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউজিসি’র উদ্যোগে এই তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যেতে পারে।
৩. বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অবস্থান এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য কমিশন, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত উদ্যোগ ও কার্যক্রম ছিল করা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে বৈশ্বিক র্যাংকিং নির্ধারণী সূচকের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। উপরন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যান যথাসময়ে কমিশন এবং বৈশ্বিক র্যাংকিং কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করাও প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
৪. তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসারের ফলে গ্র্যাজুয়েটদের চতুর্থ-শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। চতুর্থ-শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইউনিভার্সিটি ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোলাবরেশন বৃদ্ধিসহ চাহিদাভিত্তিক, উদ্দেশ্যমুখী ও ফোকাস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম চালুর মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারে।
৫. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-২০৩০) বাস্তবায়নে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে মানসম্পন্ন কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এসডিজি-৪ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষা খাতে ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের অবকাঠামোগত ও গবেষণাগারের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য আর্থিক বরাদ্দ রাখার পাশাপাশি ফলাফলভিত্তিক কারিকুলাম প্রণয়ন করা যেতে পারে।
৬. দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টিগ্রেটেড ইউনিভার্সিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট প্লাটফর্ম তৈরির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং সফটওয়ার প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের আর্থিক বিধি-বিধান অনুসরণ করা জরুরি। ইচ্ছেমতো আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের বিদ্যমান আর্থিক নিয়মাবলির ব্যত্যয় ঘটছে, যা কমিশনের কাছে মনে হয়েছে। এ কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন সমুন্নত রেখে একটি ‘সমন্বিত আর্থিক নীতিমালা ও ম্যানুয়েল’ প্রণয়নের জন্য ইউজিসি কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে।
৮. দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারি বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.৮৭ শতাংশ, যা যেকোনো বিচারেই অপ্রতুল। কাজেই জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষায় খাতওয়ারি বরাদ্দ চিহ্নিত করে কমিশনের চাহিদা অর্থ সংস্থানের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। অধিকন্তু সরকার অনুমোদিত স্ট্রাটেজিক প্ল্যান অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২% এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৬% বরাদ্দ রাখার বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া অতি জরুরি।
৯. উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি ও সমুন্নত রাখতে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নয়ন একটি অভিন্ন নীতিমালার ভিত্তিতে হওয়া সমীচীন। এ লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে ন্যূনতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নির্ধারণী নির্দেশিকা’ অনুমোদন করেছে। এ নির্দেশিকার আলোকে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারে।
১০. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বিদ্যমান ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’ যথেষ্ট নয় বিধায় এটিকে আরো যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের চাকরির সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার নিমিত্ত উপযুক্ত বেতন কাঠামো এবং চাকরি প্রবিধানমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।
১১. ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’ অনুযায়ী ইউজিসি নির্ধারিত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং ফরম পূরণ করে আর্থিক বিষয়সমূহ সুনির্দিষ্ট করে একটি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে ইউজিসির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নেওয়ার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।
১২. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি ফি, টিউশন ফি, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্নতা তথা অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট, প্রশংসাপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ উচ্চহারে ফি নিয়ে থাকে। এমনকি কোনো যৌক্তিক কারণ ব্যতিরেকেই প্রতি বছর টিউশন ফি ও ভর্তি ফিসহ অন্যান্য ফি বৃদ্ধি করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। যেহেতু দেশের সকল অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সমান নয়, সেহেতু শিক্ষার্থীদের প্রদেয় বিভিন্ন প্রকার ফি ও চার্জ একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে নির্দেশনা দিতে পারে।
১৩. অস্থিত্বহীন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসে ব্যাচেলর, মাস্টার্স, এমফিল; এমনকি পিএইচডি পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তির খবর প্রায়শই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাময়িক অনুমতিপত্র বা সনদপত্র গ্রহণ ব্যতীত বাংলাদেশে কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন বা পরিচালনা সম্পূর্ণ অবৈধ। গুণগত উচ্চশিক্ষার প্রসারে সীমিত পরিসরে স্বনামধন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অবকাঠামোগত ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তবে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন ও পরিচালনার পাশাপাশি নিয়মিত তদারকির জন্য বিদ্যমান বিধিমালা ‘বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনা বিধিমালা, ২০১৪’-এর সংশোধন করা প্রয়োজন। কেননা, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস স্থাপন বিদ্যমান বিধিমালা, ২০১৪ ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি দেশের বেসরকারি পর্যায়ে ক্রমবিকাশমান উচ্চশিক্ষা খাতে ব্যাপক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।
১৪. দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলোচনাক্রমে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সমস্যা ও চাহিদার কথা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে জানাতে পারবে। চাহিদার নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার পাশাপাশি উদ্ভূত সমস্যার উপায় বের করে দিবেন। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠান উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে পণ্যের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য আনয়ন করতে সক্ষম হবে। এ ধরনের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ আর্থিকভাবে সাবলম্বী হয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব বাজেটের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
১৫. দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গবেষণায় প্লেজিয়ারিজম বা চৌর্যবৃত্তির ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। প্লেজিয়ারিজম নিয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় গবেষণাপত্রে চুরির বিষয়টি সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। তাই প্লেজিয়ারিজম বিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা আবশ্যক। তদুপরি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণাকর্মের মান নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার (যেমন: টার্নিটিন) ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা এবং বাংলা গবেষণাপত্র ও পুস্তকের জন্য এ ধরনের উন্নতমানের সফটওয়্যার তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ উদ্যোগ নিতে পারে।
১৬. দেশের কোনো কোনো পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সান্ধ্যকালীন/উইকেন্ড/এক্সিকিউটিভ প্রভৃতি কোর্স পরিচালিত হচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের কোর্স পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে বিধায় সান্ধ্যকালীন/উইকেন্ড/এক্সিকিউটিভ জাতীয় সকল কোর্স বন্ধ হওয়া জরুরি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ইউজিসি’র পূর্বানুমোদনক্রমে ডিপ্লোমা, শর্ট কোর্স, ভোকেশনাল ও ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনা করা যেতে পারে।
১৭. দেশে উচ্চশিক্ষাস্তরে চার বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রিকে ‘প্রান্তিক’ ডিগ্রি হিসেবে গণ্য করা। হয়। কাজেই মাস্টার্স পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম কেবলমাত্র বাছাইকৃত মেধাবী স্নাতকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা বাঞ্ছনীয়। অধিকন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ও অনার্স কলেজসমূহে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। ফলে এ সকল প্রতিষ্ঠানে মাস্টার্স পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষাদান সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সরাসরি মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ না রেখে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অবতীর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর স্নাতকোত্তর গবেষণা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্কলারশিপ/টিচিং এসিস্ট্যান্টশিপ/ফেলোশিপের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে সরকার একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে।
১৮. বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সকল প্রকার যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বুলিং, র্যাগিং, মাদকাসক্তি ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধি চর্চার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা অতি জরুরি। অধিকন্তু বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের কোনো শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যাতে বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সেজন্য সরকার নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
১৯. শ্রেণিকক্ষ শিক্ষা অধিক অংশগ্রহণমূলক করার জন্য সশরীর ও অনলাইন উভয় ধারার শিক্ষা সমন্বিত করে দেশের উচ্চশিক্ষার জন্য ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। ব্লেন্ডেড লার্নিং নীতিমালায় যেকোনো বিষয়ে ভার্চ্যুয়ালি এবং সরাসরি শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের যুক্তিসংগত হার নির্ধারণ করতে হবে। তাছাড়া কোনো শিক্ষার্থী সশরীর পাঠদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলে রেকর্ডেড ক্লাস থেকে পাঠ সম্পন্ন করার সুযোগ রাখা যেতে পারে। উপরন্তু শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের সুযোগ রাখার পাশাপাশি বিদ্যমান পরীক্ষাপদ্ধতিতে যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
২০. সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাপূর্ণ শিক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এ সকল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ রাখার পাশাপাশি বিশেষ ভর্তির নির্দেশিকা তৈরি, কারিকুলাম প্রণয়ন ভিন্নভাবে পরীক্ষা নেওয়াসহ তাদের সুরক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। সমাজের পিছিয়ে পড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে।
Discussion about this post