তারিকুল ইসলাম
আশরাফুল আলম। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন অনুষদভুক্ত আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজে ভর্তি হন।
শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষাবর্ষে আইন অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএ (৩ দশমিক ৫৯) ধারী শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন আশরাফুল আলম। মেধার স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদকের দাবিদার তিনি। শিক্ষা জীবনে ভালো ফলাফলের স্বীকৃতি প্রতিটা শিক্ষার্থী মনেই আবেগের সঞ্চার জোগায়। আর সেটা যদি হয় রাষ্ট্র প্রধানের কাছ থেকে কোনো স্বীকৃতি, তখন প্রত্যাশা বেড়ে হয় দ্বিগুণ। আশরাফুলের মনেও সেটার ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু গত ০৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোনীত প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদকের তালিকা আশরাফুলকে হতবাক করে দেয়। কারণ সেখানে তার জায়গায় স্থান হয়েছে অনুষদের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের রুবাইয়া ইয়াসমিন নামে এক শিক্ষার্থীর। ভাগ্যের মার-প্যাচে পড়ে অনুষদের প্রথম হয়েও আশরাফুল পাচ্ছেন না সেই স্বীকৃতি।
ঠিক ভাগ্য বললেও হয়তো ভুল হবে। কারণ তার এ স্বীকৃতি না পাওয়ার পেছনে বিভাগের সময় মতো ফলাফল প্রকাশ ব্যর্থ হওয়াটাও অনেকাংশে দায়ী। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার পর ২০১৭ সালে তাদের অনার্সের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ফলাফল ২০১৭-১৮ সাল পেরিয়ে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে প্রকাশিত হয়। সময় মতো ফলাফল প্রকাশ হলে আইন অনুষদে ওই শিক্ষাবর্ষ থেকে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত হতেন আশরাফুল আলম।
তারপরও ২০১৯ সালের প্রথম দিকে অনার্সের ফলাফল প্রকাশিত অনুষদে প্রথম হওয়ার সুবাদে এ বছর স্বর্ণপদক পাওয়ার দাবিদার ছিলেন তিনি। কিন্তু বিপত্তি বাধে ২০১৯ সালে আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীক নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদকের জন্য গত ২০ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইউজিসি। সেখানে অনুষদগুলোর মধ্যে থেকে ২০১৯ সালে প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে পদক দেওয়া হবে বলে জানায়।
২০১৯ সালের শেষের দিকে আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হয়। যেখানে রুবাইয়া ইয়াসমিনের প্রাপ্ত সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫৯। তবে আইন অনুষদের ওই শিক্ষাবর্ষ থেকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ রুবাইয়া ইয়াসমিনের নয়।
আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ইলিয়াস আলমগীর ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আইন অনুষদে প্রথম হন। যেখানে তার প্রাপ্ত সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬২। তবে তার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। অন্যদিকে, রুবাইয়ার ফলাফল আগের বছর প্রকাশ হয়।
অনুষদে পৃথক দুই শিক্ষাবর্ষের ২০১৯ সালে প্রকাশিত সর্বোচ্চ ফলাফল দু’জনের (আশরাফুল ও রুবাইয়া) সমান হয়। ফলে ইউজিসির নিয়মানুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসির প্রাপ্ত জিপিএর ভিত্তিতে দু’জনের মধ্যে থেকে মনোনয়ন নির্ধারণ করা হয়। সে ভিত্তিতে স্বর্ণ পদকের জন্য মনোনীত হন রুবাইয়া। আর অনুষদের প্রথম হয়েও বঞ্চিত হন আশরাফুল।
আশরাফুলের মতো একইভাবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদভুক্ত ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের একজন, জীব বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজনসহ ধর্মতত্ত্ব অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘মেধার মূল্যায়নে অনুষদে আমরা প্রথম হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক আমাদের প্রাপ্য। কিন্তু সেশনজট ও ফলাফল প্রকাশে বিভাগের ব্যর্থতায় আমরা এ পদক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। যা কাম্য নয়। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি শাখার কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী আমরা প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণ পদকের তালিকা পাঠিয়েছি। নীতিমালা অনুযায়ী, একই বর্ষে একাধিক ফলাফল প্রকাশিত হলে সর্বোচ্চ রেজাল্টপ্রাপ্তকে মনোনীত করা হয়। সেই হিসেবে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম বাদ পড়েছে। ’
অন্যদিকে, ফলাফল সময় মতো প্রকাশ না হওয়ায় সে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আইন অনুষদের সর্বোচ্চ সিজিপিএপ্রাপ্ত আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ইলিয়াস আলমগীর। তার প্রাপ্ত সিজিপিত্র- ৩ দমশিক ৬২। কিন্তু বিভাগের সেশনজটের কারণে তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ২০২০ সালে। যা প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে।
আবার একই বছরে আইন অনুষদের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকাশিত ফলাফলে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের অন্য কোনো শিক্ষার্থী তার চেয়ে বেশি সিজিপিএ পেলে ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী ২০২০ সালের স্বর্ণ পদকের জন্য ওই শিক্ষার্থীই মনোনীত হতে পারে বলে জানা গেছে। সে অনুযায়ী স্বাভাবিকতই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে অনুষদে প্রথম হয়েও পদক থেকে বঞ্চিত হবে ইলিয়াছ আলমগীর।
আইন অনুষদের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ইলিয়াছ আলমগীর বলেন, ‘সেশনজট প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর জন্য অভিশাপ। এর দৃষ্টান্ত হলো স্বর্ণ পদকের যোগ্য হয়েও সেটা বঞ্চিত হওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত প্রকৃত অনুষদ প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীকে পদক দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া। ’
তবে পদক থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা, সে বিষয়টি নিয়ে বসবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত আবেদন পেলে প্রশাসন আন্তরিকভাবে দেখবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সবকিছু দেখে বিষয়টি নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের ফলাফলসহ যাবতীয় বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে আসুক। ’
ইউজিসির রিসার্চ সাপোর্ট অ্যান্ড ডিভিশন বিভাগের পরিচালক মো. কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফল প্রকাশ যে বছরেই হোক না কেন, আমরা প্রতি বছরের (ইউজিসি কতৃক নির্দিষ্ট বছরে অনার্সের ফলাফলের ভিত্তিতে) জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তালিকা চেয়ে থাকি। আমাদের একটা নির্দিষ্ট গাইড লাইন আছে, সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে তালিকা পাঠায়। ’
সেশনজটের কারণে পদক থেকে বঞ্চিত হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কামাল হোসেন বলেন, ‘যদি কোনো প্রাথী মনে করেন যে, তিনি বাদ পড়ছেন, তবে আমাদের কাছে লিখিতভাবে জানানো হোক। ইউজিসি যদি কোনো শিক্ষার্থী অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লিখিত পান, সেক্ষেত্রে কমিশন ব্যবস্থা নেবে’। সৌজন্যে-বাংলানিউজ
Discussion about this post