শিক্ষার আলো ডেস্ক
নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষার বাইরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের সময় কাটে বটতলা, ডেইরি গেট, প্রান্তিক গেট, বিশ মাইল প্রভৃতি এলাকায়। এ বিশেষ জায়গাগুলোতে শিক্ষার্থী ছাড়াও বহিরাগতদের সমাগম থাকলেও কোনো শৌচাগার ব্যবস্থা নেই। এমনকি আশপাশে নেই কোনো পাবলিক টয়লেটও। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খাবার খেতে আসা ছাত্রী ও নারী বহিরাগতদের মধ্যে অনেকেই বাধ্য হয়ে ছেলেদের হলের অভ্যর্থনা কক্ষের শৌচাগার ব্যবহার করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার পাশাপাশি দিনে তিনবেলা খাওয়ার জন্য বটতলায় আসি। কখনো ওয়াশরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হলে কাছে থাকা ছেলেদের হলে যেতে হয়। প্রথম দিকে সংকোচবোধ হলেও এখন আর তেমনটা মনে হয় না। তবে অনেক ছাত্রী ও বহিরাগত নারীদের জন্য এটা বিব্রতকর।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে (ডেইরি গেট) গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি শৌচাগার আছে। যার যাওয়া-আসার রাস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর কাছেও অজানা। শৌচাগারটির প্রতিটি দরজার নিচের অংশ মরিচায় খেয়ে ফেলেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষা যায় না। ময়লা, আবর্জনা ও টিস্যুর স্তূপে ঢাকা প্রস্রাবখানা। পানির ব্যবস্থাও নেই।
ডেইরি গেট এলাকার বাজার কর্তৃপক্ষের শৌচাগার
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ শৌচাগারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। সেখানকার দোকান মালিকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বছর দশেক আগে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থে সেটা বানানো হয়। দোকানপাটের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সেটা খুব একটা চোখে পড়ে না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি চালক বাবুল বলেন, ‘ঢাকা থেকে স্যারদের নিয়ে আসছি। এখানকার দোকানে খাইলাম। বাথরুমের তলব করলে দোকানদার এদিকে আসতে বলল। এসে দেখি পানি নাই।’
ডেইরি গেট এলাকার বাজার কর্তৃপক্ষের শৌচাগার
ডেইরি গেট দোকান মালিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আকবর আলী বলেন, এ শৌচাগারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা পানিও নেই না। আমাদের নিজস্ব মোটর দিয়ে পানি উঠাই। দোকানদারদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে বিদ্যুৎ বিল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসছি।
স্থানীয় দোকানের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, ‘দোকানদার, বাইরের লোকজন তো আছেই। এছাড়া এবার ভর্তি পরীক্ষার সময় অনেক চাপ গেছে এই ওয়াশরুমের ওপর। বিশেষ করে ছাত্রী আর নারীরা বাধ্য হয়ে এই ওয়াশরুম ব্যবহার করেছেন। উপায় তো নাই। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলেই ভালো ওয়াশরুম বানাতে পারে। এতে সবার উপকার হইতো।’
অন্যদিকে, প্রান্তিক গেটে (জয় বাংলা গেট) একটা শৌচাগার দৃশ্যমান। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেটাও সেখানকার দোকানদাররা নিজেদের টাকায় সেটা তৈরি করেছে। নিজ অর্থেই রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন।
এছাড়া ডেইরি গেটে কেনাকাটা করতে আসা শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের অনেককেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের শৌচাগার ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এতেও পোহাতে হয় ভোগান্তি। দিনের অনেকটা সময় বন্ধ থাকে এসব শৌচাগার।
ডেইরি গেট এলাকার বাজার কর্তৃপক্ষের শৌচাগার
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বহিরাগত বলেন, ‘ঢাকায় কাজ করি। সুযোগ পেলেই বউ-বাচ্চা নিয়ে ভার্সিটিতে বেড়াতে আসি। কিন্তু ওয়াশরুমের প্রয়োজন হলে ঝামেলায় পড়ে যাই। ঘুরতে আসা লোকদের জন্য টয়লেট ব্যবস্থা নাই। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয় অথচ টয়লেটে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করা লাগে। এছাড়া ধর্মীয় কারণে মসজিদের ওয়াশরুম ব্যবহার করতেও খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টেট) আ. রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা তো আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই ছিল না। ওয়াশরুম তৈরি তো একটা পরিকল্পনার ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় তো পরিকল্পনা ছাড়া বরাদ্দ দেয় না।’
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আসলে এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা। পরবর্তী মিটিংয়ে বিষয়টি তুলে ধরবো। আশা করছি এর একটা সমাধান আসবে। তবে এসব জায়গায় ওয়াশরুম বানানোর চেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post