শিক্ষার আলো ডেস্ক
এই প্রথমবারের মতো দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। পরীক্ষার প্রায় তিন মাস পার হলেও এখনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। মেধাতালিকা প্রকাশ করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাচ্ছে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এখনো মেধাতলিকাই প্রকাশ করতে পারে নি।ফলে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ক্লাস শুরু করতে কতদিন লাগবে অজানা শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার কাছেই।
গত ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান বিভাগের ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু করে গুচ্ছ কমিটি। পরে ২৪ অক্টোবর মানবিক বিভাগের ‘বি’ ইউনিট এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্য বিভাগের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ইউনিটের ফল প্রকাশ হয় ২০ অক্টোবর। ২৬ অক্টোবর বি ইউনিট এবং ৩ নভেম্বর সি ইউনিটের ফল প্রকাশ হয়।
বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ করার পরও আসন খালি থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। শুরুর দিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, বুয়েট ও মেডিকেলের ভর্তি কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি। তখন গুচ্ছ কমিটি জানিয়েছিল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বুয়েটসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোপুরি শেষ হয়নি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি এখন ভর্তি করায় পরে দেখা যাবে ওই শিক্ষার্থী বুয়েটেও চান্স পেয়েছে তখন সে বুয়েটেই ভর্তি হবে। আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনটাও খালি হয়ে যাবে। যাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে সেজন্য সময় নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষার্থী না পাওয়ায় গুচ্ছভুক্ত বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে ধীর গতি এনেছে। বারবার মেধাতালিকা প্রকাশ ও ভর্তি কার্যক্রম দীর্ঘায়িত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
যদিও শিক্ষার্থীরা এর জন্য গুচ্ছের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে। তারা বলছেন, ফল প্রকাশের পর লম্বা সময় নিয়ে ভর্তি করাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অপেক্ষা করলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় নিয়ে পড়তে পারার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না তারা। যার কারণে অনেকেই বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়ে গেছেন। তারা আরও জানান, বাড়ি থেকে অনেক দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চেয়ে বাড়ির পাশে কলেজগুলোতে পড়াও অনেক ভালো। সেজন্য আসন খালি থাকছে বলে জানান তারা। আগামীবার থেকে শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিল করার দাবি জানিয়ে বলেন, আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হলে আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার একটা সুযোগ থাকে।
এদিকে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে না পারায় কবে থেকে ক্লাস শুরু করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেবিষয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ও কুবির কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আগামী ২৬ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হবে। ২৫ তারিখের আগেই ফাঁকা আসনগুলো পূরণ হয়ে যাবে।
অপরদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, আমরা ৫ম মেধাতালিকার ভর্তি কার্যক্রম শেষে এক নোটিশে মেরিট পজিশন অনুযায়ী বাকি সকল শিক্ষার্থীকে ডাকবো। যারা সঠিকভাবে তাদের কাগজপত্র জমা দিবে তাদেরকেই আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। কাগজপত্র জমা দেওয়া এবং ভর্তির জন্য সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচদিন সময় দেওয়া হবে। আর এই সকল প্রক্রিয়া আমরা অবশ্যই ক্লাস শুরু হওয়ার আগে সম্পন্ন করবো।
তথ্য মতে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি রয়েছে ১ হাজার আটটি আসন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১২০টি আসন, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৯৩টি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬২৬টি এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ইউনিটে ৭০৪টি আসন খালি রয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ইউনিটে ১ হাজার ৩৯৫টি আসনে মাত্র ২৫৪ জন ভর্তি হয়েছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনটি ইউনিটে ১ হাজার ৪০টি আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৫০৭ জন শিক্ষার্থী। ফলে এই তিন ইউনিটে ফাঁকা রয়েছে আরও ৫৩৩টি আসন।
Discussion about this post