বিশেষ প্রতিবেদক
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উদাসীনতার কারণে চার মাস পার হলেও সরকারি বেতনের টাকা ছাড় হয়নি । তাই, সংকটে পড়েছেন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রায় ১০ হাজার শিক্ষক। শিক্ষকদের দাবি, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। টাকা না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছেন না। মান-সম্মান রক্ষায় ত্রাণের জন্য কারও কাছে হাত পাততেও পারছেন না। সবমিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। দ্রুত বেতন ছাড় না করলে পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন যাপন করতে হবে। তারা দ্রুত এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বেতন ছাড় করার দাবি জানিয়েছেন।
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সরকারি অনুদানের টাকা তিন মাস পর পর মাদরাসা অধিদপ্তর থেকে ছাড় করা হয়। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে শিক্ষকদের বেতন ছাড় করা হয়েছে। সে হিসাবে ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন মার্চ মাসে ছাড়ের কথা ছিল। কিন্ন্তু মার্চ মাস পার হয়ে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষেও শিক্ষকরা বেতনের টাকা পাননি।
ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এখন ঘর থেকে বের হতে পারছি না। না পারি টিউশনি করতে। শিক্ষক হিসেবে কারও কাছে হাত পাততেও পারছি না। বাধ্য হয়ে কখনও আধাবেলা, কখনও না খেয়ে দিন চলছে।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের মহাসচিব মো. শামছুল আলম অভিযোগ করেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী আমরা বেতন পাচ্ছি না। আগে তিন মাস পর পর বিল ছাড়তো। সর্বশেষ চার মাস পর বিল ছাড় করেছে। এখন চার মাস পার হলে গেলেও আমরা বেতন পাইনি। অথচ নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে প্রতিমাসে বেতন ছাড়ের।
ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের জনবল কাঠামো ও নীতিমালা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের১৮ নভেম্বর জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ । নীতিমালা অনুযায়ী সরকার অনুমোদিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের প্রতিমাসে এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট ওর্ডার) ছাড় করার কথা। কিন্তু এসব মাদরাসার শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার নীতিমালাটি জারি করে। ইবতেদায়ী প্রধানদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সমান বেতন স্কেল তথা ১১তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। আর ইবতেদায়ী সহকারী ও ক্বারীদের বেতন ১৬তম গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ ও মাদরাসা অধিদপ্তরের উদাসীনতার কারণে নীতিমালাটি কার্যকর করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা দ্রুত বেতন ছাড়ের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে ১৭ মার্চ হঠাৎ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, আমরা মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ছাড়ের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
Discussion about this post