শিক্ষার আলো ডেস্ক
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণের সুযোগের দাবি না মানলে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং পরবর্তীতে অনশন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণের সুযোগ দাবিতে আন্দোলনরত এইচএসসি- ২০২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘ঢাবিতে সেকেন্ড টাইম চাই’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানান এইচএসসি- ২০২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাঁরা বলেন, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের একাধিকবার অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগের মধ্য দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একের অধিক ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ না দেওয়ার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হলেও ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয় না। যেখানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু দ্বিতীয়বার নয়, একাধিকবার স্নাতক শিক্ষা গ্রহণের জন্য ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের আইআইটিতে ৩/৪ বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়। তাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একাধিকবার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাহলে আমাদের দেশে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে না কেন?
তারা আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রী দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে তার ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। সুতরাং আমরাও মনে করি, ঢাবি প্রশাসনের দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ বন্ধের কারণগুলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভিত্তিহীন। দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বন্ধ রাখার কারণে দেশের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছোটবেলা থেকে লালন করা স্বপ্নের ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক চেষ্টা-পরিশ্রম করা সত্ত্বেও হেরে যাওয়া শিক্ষার্থীরা আর কোনো সুযোগ না পাওয়ায় হতাশায় ভেঙে পড়েছে। অনেকেই আত্মহত্যার মতো মহাপাপের পথ বেছে নিয়েছে। যদি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতো, তাহলে অনেক শিক্ষার্থীই এ পথ বেছে নিতো না। সুতরাং মানবিক দিক বিচার করে হলেও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।
পৃথীবির অন্যান্য দেশে অনেকবার পরীক্ষা দেওয়া যায় তার মধ্যে আমাদের দেশে মেডিকেল এ ২য় বার পরীক্ষা দেওয়ার সু্যোগ আছে আরো কিছু জায়গায় আছে, তাহলে ঢাকা,চট্রগ্রাম, রাজশাহী তে কেন না? আমাদের এই ডিজিটাল বাংলাদেশে এটা ছাত্রছাত্রীদের মোলিক অধিকারের মতো আরেকবার পরীক্ষা দিতে দেওয়া, তাহলে কেন নয় আমাদের ২য় বার পরীক্ষা?
তাদের দাবি, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দিলে প্রথমবার ভর্তিচ্ছুদের কোনো অসুবিধা হবে না, কারণ তারাও দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভালো বিষয়ে ভর্তি সুযোগ পাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অজুহাতে দ্বিতীয়বার পরিক্ষা নিতে চায় না, কিন্তু তাদের দাবি প্রশ্ন তৈরি এবং কেন্দ্রে বিলিকরণে যেহেতু ঢাবি প্রশাসন জড়িত থাকে তাই এটি ফাঁস হওয়ার সাথেও প্রশাসনই জড়িত তাই এর দায়ও প্রশাসনেরই নেয়া উচিত।
ঢাবি কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয়বার পরীক্ষা নিলে আসন ফাঁকা হওয়ার কথা বলে থাকে- এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, আসন যাতে ফাঁকা না হয় সেজন্য ঢাবি প্রসাশন চাইলে অধ্যয়নরতদের দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বাতিল করতে পারে।
তারা জানায়, তাদের এই দাবির পক্ষে শিক্ষামন্ত্রীও তার ব্যক্তিগত মতামত জানিয়েছেন। তাই ঢাবি প্রশাসনেরও বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা উচিত বলে জানায় তারা।দেশের অন্য যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যায় না, সেগুলোতেও দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
উপস্থিত ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকেই আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। আমরা আত্মীয়স্বজন এমনকি নিজের পরিবারের সদস্যদের সামনে মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের মধ্যে কেউ মেধাক্রমে পিছিয়ে থাকার কারণে ভালো সাবজেক্ট পাইনি।‘আবার কেউ করোনার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেনি। এ দেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরাও আপিলের জন্য সেকেন্ড চান্স পায়। তাহলে আমরা কেন ঢাবিতে আরেকবার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাব না?’
২য় বার পরীক্ষার ক্ষেত্রে নম্বর কর্তনের বিরোধিতা করে সংগ্রাম খান বলেন, জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য়বার ভর্তি পরীক্ষায় কোন নম্বর কাটা হয়না। এপরও মেধাবী বাছাইয়ে বা চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশে কোন সমস্যা হয়নি।২য় বার পরীক্ষার সুযোগ দিয়ে তারা সবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছেন।আমাদের সাথে গুচ্ছে সেকেন্ড টাইমাররা এক্সাম দিয়েছিল তারা ২ বছর সময় পেয়েছিল প্রস্তুতির জন্য, তাছাড়া ও ভর্তিতে তাদের ১ মার্ক ও কাটা হয় নাই ।তাই উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই যেন অতি দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এটি অনেকগুলি ছাত্রছাত্রীর জীবনমরণের প্রশ্ন!
অপর শিক্ষার্থী মো. জিসান বলেন,আসলে করোনাকালীন সময়ে অটোপাশ এর মাধ্যমে ২০ ব্যাচ শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।২০ ব্যাচ যেনো এক অবহেলিত ব্যাচ।এই অটোপাশ এর কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে এ+ নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যন্ত সীট পাচ্ছে না।মেধাবীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা যে দিবে তাও হয়ে ওঠে নি।কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও সকলকে পর্বের জিপিএ বাতিল করে জিপিএ বাড়িয়ে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেছে।এর পরিপ্রেক্ষিতে সকলের জীবন যেনো এক ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে।কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত না হতে পারায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা পরিবার এবং সমাজের চাপে পরে দৈনিক আত্মহত্যা, মাদক গ্রহণ সহ নানারকম ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।যা দেশ এবং সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।এসকল শিক্ষার্থীরা যেনো আবার বই এবং পড়ার টেবিলকে আপন করতে পারে তাই তারা আর একটিবার সুযোগ চাচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ২০২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. রাফি হাছান, মো. সংগ্রাম খান, নজরুল ইসলাম নিলয়,এম ডি সানি আলম, ঋতু আক্তার , মো. কাওছার, মো. ফেরদৌস, মো. পারভেজ এবং মাহমুদুল হাছান খান।
Discussion about this post