শিক্ষার আলো ডেস্ক
উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) চলছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। অবরোধমূলক আন্দোলন থেকে সরে এলেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পাসে এ মিছিল বের করেন আন্দোলনরতরা।আন্দোলনের ধারাবাহিকাতায় শিক্ষার্থীরা এদিন গোলচত্বর থেকে একটি মিছিল শুরু করে উপাচার্যের বাসভবন, আইআইসিটি ভবন, প্রশাসনিক ভবন, একাডেমিক ভবন ‘ই’ হয়ে পুনরায় গোলচত্বরে এসে শেষ হয়। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
অন্যদিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম, তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেশনজট ও ক্লাস-পরীক্ষা চালু নিয়ে শঙ্কা। তবে করোনাকালে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক জনবল নিয়ে চলমান রয়েছে দাফতরিক কার্যক্রম।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারের উচ্চ মহলের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের প্রদত্ত আশ্বাসের ১৩দিন পেরিয়ে গেলেও কোনও সুরাহা হয়নি। এ জন্য সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ শিক্ষকরাও চাচ্ছেন সরকারে পক্ষ থেকে একটি সিদ্ধান্ত জানানোর মাধ্যমে যেন পরিস্থিতির দ্রুত স্বাভাবিক করা হয়।
আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র ও অনশনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনশন ভাঙানোর অর্ধমাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনও আমাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস ও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের প্রতিশ্রুতির ১২দিন পেরিয়ে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশে পুনরায় স্বাভাবিক করতে সরকার অতিসত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আন্দোলনকারী ৩০০ শিক্ষার্থী ও সাবেক পাঁচ শিক্ষার্থীর ওপর দায়ের করা পৃথক দুই মিথ্যা মামলাও এখনও প্রত্যাহার করা হয়নি, বন্ধ রয়েছে বহু শিক্ষার্থীর বিকাশ, নগদসহ মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। আমরা চাই, মামলা দুটি প্রত্যাহার ও সবার মোবাইল ব্যাংকিং চালুসহ আমাদের মূল দাবি উপাচার্য পদত্যাগ করানোর জন্য দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, এ ধরনের আন্দোলনে প্রতিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরা। তৈরি হয় মাসের পর মাসের অচলাবস্থা ও সেশনজট। যেখানে চার বছরে স্নাতক ও এক বছরে স্নাতকোত্তর শেষ হওয়ার কথা, সেখানে স্নাতক শেষ করতেই ৫-৬ বছর লেগে গেছে। ফলে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষে চাকরির বয়স নিয়ে পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত পরিস্থিতি ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেশনজটের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কিছু শিক্ষার্থীর বক্তব্য এমন যে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলুক তবুও ক্লাস-পরীক্ষা চালু থাকুক।
শিক্ষকরাও চাইছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসুক। এ বিষয়ে শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন, যেহেতু বিষয়টা সরকার দেখছেন, সেহেতু আমাদের সরকারের প্রতি আহ্বান, যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।আমরা আশা করছি দ্রুতই সরকারের নীতি নির্ধারণ পর্যায় থেকে একটা সমাধান আসবে।
শিক্ষার পরিবেশ ফিরিতে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে চলমান পরিস্থিতি, তা নিয়ে সরকার আলোচনা করছে। আর ক্লাস-পরীক্ষাও যে বন্ধ রয়েছে তাও সবাই জানেন। ক্লাস-পরীক্ষা চালু নিয়ে এখনও কোনও নির্দেশনা পাননি বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি একটি হলের প্রভোস্টকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এদিন রাতে প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রীরা। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রীদের ওপর হামলা চালালে পরের দিন এর প্রতিবাদ ও একই দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। এদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন তারা। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটাসহ তাদেরকে লক্ষ্য করে শর্টগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়ে পুলিশ। এর প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি আরও উত্তাল হলে ওই দিন রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও হল বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই থেকেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
Discussion about this post