শিক্ষার আলো ডেস্ক
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) তিন দফার আন্দোলনে পুলিশি হামলায় ৪০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। সে সময় পুলিশের ছররা গুলির আঘাতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডু ঢাকায় চিকিৎসা শেষে গত শুক্রবার ক্যাম্পাসে ফিরেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ১৫ দিন চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি।সিলেটে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডান হাতে অস্ত্রোপচার শেষে মাত্র ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা যায়। শরীরে আরও ৭৫টি স্প্লিন্টার নিয়ে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী।
জানা যায়, সজল কুণ্ডু স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না বলে কখনও টিউশনি, কখনও হলে হলে মিষ্টি ও চা বিক্রি করেছেন তিনি। কখনও আবার স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় মেসে মেসে খাবার বিক্রি করেছেন। সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
সজল কুণ্ডু বলেন, ‘বাবা মারা গেছেন, অসুস্থ মাকে নিয়ে অসচ্ছল পরিবার আমার। সম্প্র্রতি কিছু ঋণ করে ছোট ব্যবসা শুরু করেছিলাম, পড়াশোনা শেষে চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। স্বপ্ন ছিল আমার উপার্জনে পরিবারে সুদিন আসবে। এলোমেলো হয়ে গেল আমার স্বপ্নগুলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর মধ্যেই ডান হাতে অস্ত্রোপচার করে ৪টি স্প্লিন্টার অপসারণ করা হয়েছে। এখনও আমার সারা শরীরের ৭৫টিরও বেশি স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় দিন কাটছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, প্রাণঘাতী সংক্রমণের আশঙ্কায় তার শরীরের স্প্লিন্টার অপসারণের ঝুঁকি নিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। এসব স্প্লিন্টার শরীরে নিয়েই তাকে বাকি জীবন কাটাতে হবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে নতুন শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সজল কুণ্ডু বলেন, ‘আমাকে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী মৌখিক আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত আমার ভবিষ্যতের চিকিৎসা খরচ বহন ও এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো স্পষ্ট আশ্বাস পাইনি। আমার বাবা মৃত, মা অসুস্থ। আমার অসচ্ছল পরিবার। সম্প্রতি কিছু ঋণ করে আমি সামান্য ব্যবসা শুরু করেছিলাম, পড়াশোনা শেষ করে হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই চাকরির চেষ্টা শুরু করতাম। একটি দিনের ব্যবধানে আমার স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। সারা শরীরে অসংখ্য আঘাত ও স্প্লিন্টার নিয়ে অসহ্য শারীরিক যন্ত্রণায় সামনের বিপদসংকুল দিনগুলো কীভাবে কাটবে তার আশংকায় এখন যে আমাকে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তার দায় কে নেবে?’
Discussion about this post