মো. ফয়সল কবীর হিমুন, অনুপ কুমার বসাক
জাতিসত্তা গঠনে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য একটি মৌলিক প্রভাবক। ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে শহীদ মিনারের নকশার সময় আমাদের চেষ্টা ছিল এটি যাতে ভাষা আন্দোলনের মহান আত্মত্যাগের সঙ্গে আত্মিক সংযোগ এবং জনমানসে প্রাণস্পন্দন সৃষ্টি করে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের যে অসাধারণ ‘ওয়ান পয়েন্ট পার্সপেক্টিভ’, তা তৈরি করার মতো দূরত্ব বা কলেবর কোনোটাই এখানে ছিল না। প্ল্যানে স্তম্ভটি একটি বক্র দেয়াল, যার চারপাশ থেকে নানা সময়ে, নানা ভাবে সূর্যের আলো আপতিত হয়। তৈরি হয় অসংখ্য ‘প্রেক্ষাপট’ বা ‘পার্সপেক্টিভ’। বক্র দেয়ালে তৈরি হয় চিরচেনা বিমূর্ত ‘মা ও সন্তানের’ প্রতীতি। অন্তরে প্রথিত বিমূর্ত এ প্রতীকের উপস্থাপন জাতীয় শহীদ মিনারের স্মৃতিকে মনে করায় কিন্তু সেই সঙ্গে পুরো প্রাঙ্গণটাই সামগ্রিকভাবে একটা নতুন অভিজ্ঞতা দান করে।
অনাগত দিনের এসব অযাচিত ও অপ্রতিরোধ্য চাপ বিবেচনায় রেখেই আমাদের বক্র দেয়ালটিকে করা হয়েছে সুউচ্চ, যা নিজেই একটি ‘দৃশ্যপট’ বা ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’। ৫২ ফুট ব্যাসের একটি বৃত্তচাপ হিসেবে মাথা তুলে উঠে গেছে দেয়ালটি। ফুল অর্পণের বেদিটি করা হয়েছে উঁচু। আর অগ্রপরিসরে বা ‘ফোরগ্রাউন্ডে’ আছে ফুলের বাগান ও প্রসারিত অঙ্গন।
বাগানটি নিজে ২১ ফুট ব্যাসের একটি বৃত্ত। দেয়ালটির রুক্ষ, রক্তিম তল ভাষা আন্দোলনের সেই উত্তাল, বিক্ষুব্ধ সময় ও আত্মত্যাগের প্রতীক যার ভেতর থেকে অবমুক্ত হয়েছে মাতৃভাষার অধিকার।
বক্রতার কারণে সারাদিন সূর্যের আলোর দিক, রঙ ও উত্তাপের সঙ্গে সঙ্গে দেয়ালটি রূপ পরিবর্তন করে। সে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে দর্শনার্থীর মধ্যেও। সকালের সূর্য দেওয়াল ভেদ করে প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে পড়লে বাগানের জীবন্ত ফুলগুলোকে স্পন্দিত ও বিচ্ছুরিত করে প্রতিদিনের মতো যাত্রা শুরু করে আমাদের আলোর মিনার।
লেখক: স্থপতি মো. ফয়সল কবীর হিমুন ও স্থপতি অনুপ কুমার বসাক
Discussion about this post