নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় উপাচার্য দফতরের সম্মেলন কক্ষের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, মাতৃভাষা একটি জাতির বিশাল শক্তি। মাতৃভাষার মাধ্যমে একটি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সমৃদ্ধি লাভ করে। মাতৃভাষার জন্য জীবন দান বিশ্ব ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা।
আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি সাবজেক্ট পড়ানোর অনুমোদন পাই না ৷ অথচ এটি বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। এমনকি বিজ্ঞান বিভাগেও একটি বাংলা কোর্স রাখা প্রয়োজন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, স্কুলেও এখন বাংলা ভাষার চর্চা কমে গেছে। আমরা যেন আমাদের বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি সে ব্যবস্থা করতে হবে।
উপাচার্য বলেন, একুশের চেতনা বিশ্বদরবারে শুধুমাত্র বাঙালির মাতৃভাষাকেই প্রতিষ্ঠিত করেনি। বিশ্ব জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ মাতৃভাষাকেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৯৫২ সালে বাংলার দামাল সন্তানদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি খুঁজে পেয়েছে তাদের ভাষা-সংস্কৃতি।
তিনি আরো বলেন, একুশের চেতনা বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ আত্মপরিচয়। বাঙালি জাতি সেদিন স্বাধিকারের চেতনার যে বীজ রোপণ করেছিল তারই উদ্দীপ্ততার ধারাবাহিকায় রক্তধোয়া সোপান বেয়ে ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ও নেতৃত্বে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
এর আগে, সকাল ১০টায় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে ভাষা শহীদদের স্মরণে চবি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শোক র্যালি শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়।
আয়োজিত এই আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা সময় পরীক্ষার প্রশ্ন বাংলায় করা হতো। এরপর একটা সময় ইংরেজিতে প্রশ্ন করে সেটাকে বাংলায় অনুবাদ করে দেওয়া হতো।
অধ্যাপক বেনু কুমার দে আরও বলেন, আপনি জাপান, চীন, কোরিয়ায় বা উন্নত দেশগুলোতে যান, তারা আপনার সঙ্গে তাদের ভাষায় কথা বলবে। তারা আপনার জন্য ইংরেজি শিখবে না। বরং আপনি তাদের ভাষা শিখতে হবে। অথচ আমরা একে একে আমাদের সব দাফতরিক কাগজপত্র থেকে শুরু করে সবকিছু থেকে বাংলা উঠিয়ে দিচ্ছি। আমাদের এ চর্চা বন্ধ করা উচিৎ। প্রয়োজনে প্রণোদনা দিয়ে হলেও আমাদের বিজ্ঞরা তাদের জ্ঞানগুলো যাতে বাংলায় লিখে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
আলোচনা সভায় ‘ভাষা আন্দোলনে নারীর ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার। এছাড়া সভায় অধ্যাপক ড. এনায়েত হোসেনের লেখা ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনা’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
Discussion about this post