শিক্ষার আলো ডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নির্ধারিত সময়ের বাইরেও ভারী ট্রাক চলাচল করছে। গত চার-পাঁচদিন ধরে ফের দিনের বেলা ক্যাম্পাসে ভারী ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে রাত ১২টার পর ভারী ট্রাক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করানোর কথা বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তারা সেই কথা রাখেননি। গতকাল মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ও সন্ধ্যায়ও ক্যাম্পাসে ভারী ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন বিজ্ঞান ভবনের সামনে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল নিহত হন। ঘটনার পরপরই আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সে সময় কয়েক দফা দাবির মধ্যে ক্যাম্পাসে ভারী ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করা, পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি মাহমুদ হাবিব হিমেলের নামে বিজ্ঞান ভবনটির নামকরণের দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় দাবি মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রাত ১২টার পরে ক্যাম্পাসে ট্রাক প্রবেশ করতে দেওয়ার কথা বলেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে বিকেলে ও সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ট্রাক প্রবেশ করছে। আগে কোনো ধরনের নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াই ট্রাকগুলো ঢুকতো, এখন বাঁশি বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের সাবধান করা হচ্ছে ট্রাকের আগে আগে। তবে সব সময় নিরাপত্তাকর্মীরা থাকেন না। নির্ধারিত সময়ের (রাত ১২টার পর) আগে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করায় কয়েকটি ট্রাক ঘুরিয়েও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, একজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর এতো আন্দোলন হলো। একটা দুর্ঘটনা এতো মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেল। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে উপাচার্য স্যার সব দাবি-দাওয়া মেনে নিলেন। কিন্তু ১৫-২০ দিন যেতে না যেতেই দিনে-দুপুরে ক্যাম্পাসে ভারী ট্রাক ঢুকছে। এতে আমাদের বাকি দাবিগুলো পূরণ নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ের বাইরে ক্যাম্পাসে ভারী ট্রাক ঢুকানোকে ‘আশ্বাস ভঙ্গের সূত্রপাত’ উল্লেখ করে হিমেলের বিভাগের সহপাঠী মিঠুন চন্দ্র মহন্ত বলেন, কিছু দিন আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সামনের রাস্তায় একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির পাথরবোঝাই ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। সে সময় শিক্ষার্থীরা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।
যেই আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। উপাচার্য স্যার তখন বলেছিলেন- শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং রাস্তায় চলাচলের সুবিধার্থে ক্যাম্পাসে ভারী যানবাহন রাত ১২টার পর প্রবেশ করবে। কিন্তু হিমেলের মৃত্যুর ১৭-১৮ দিনের মাথায় যখন তখন ক্যাম্পাসে আবার ভারী ট্রাকগুলো ঢুকেছে। এটা শিক্ষার্থীদের সরল বিশ্বাসে এক প্রকার আঘাত বলা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবি বাস্তবায়ন করা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমি অবশ্যই বিষয়টা নজরে আনব। বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্বে আছে, তাদেরকে এই মুহূর্তেই আমি জানিয়ে দিচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের বাইরে ক্যাম্পাসে আর কোনো ট্রাক চলাচল করবে না। সৌজন্যে-ঢাকা পোস্ট
Discussion about this post