শিক্ষার আলো ডেস্ক
ধর্ষকদের অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে ও বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
লাগাতার আন্দোলনের পঞ্চম দিন সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআর বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অন্যন্যা রহমান।
তিনি বলেন, আজ দুপুর ১২টায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে, বিকেল সাড়ে ৪টায় মুখে কালো কাপড় ও হাত বেঁধে প্রতিবাদ জানানো হবে এবং সন্ধ্যা ৭টায় ধর্ষকদের কুশপুতুল দাহ করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সোমবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই শিক্ষার্থী (ভিকটিম) তার বন্ধুর সঙ্গে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকার হেলিপ্যাড থেকে হেঁটে বের হচ্ছিলেন। সে সময় সাত-আটজন যুবক ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইকে তাদের তুলে নেন। পরে তারা ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুকে হ্যালিপাডের পাশে নির্মাণাধীন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের বারান্দায় নিয়ে যান। সেখানে ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয় এবং সঙ্গে থাকা বন্ধুকে মারধর করা হয়। পরে খবর পেয়ে সহপাঠীরা ওই শিক্ষার্থী ও তার বন্ধুকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেন। এ ঘটনায় রাতেই জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস থেকে হেঁটে বিক্ষুব্ধ প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদর থানায় অবস্থান নেন এবং ধর্ষণে জড়িতদের বিচার চেয়ে তিন দফা দাবি ও বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত করার আল্টিমেটাম দেন। পুলিশ ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হলে শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়ায় অবস্থান নিয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ১২ ঘণ্টা মহাসড়কে অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন ২৪ ঘণ্টা মধ্যে আসামিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে অবরোধ তুলে না নেওয়ায় বহিরাগতরা তাদের ওপর হামলা করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। এতে শিক্ষক ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবিতে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে এ ঘটনায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছয়জনকে আটক করে।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবির, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানা লিপি ও মো. শরিফুর রহমানের আদালতে হাজির করলে তারা অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আদালতে স্বীকার করেছেন।
জবানবন্দি দেওয়া আসামিরা হলেন- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চরমানিকদাহ গ্রামের শাফায়েত মিয়ার ছেলে রাকিব মিয়া ওরফে ইমন (২২), শহরের মার্কাস মহল্লার বাবুল ফকিরের ছেলে পিয়াস ফকির (২৬), পরেশ বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), চান মিয়া সরদারের ছেলে মো. হেলাল সরদার (২৪), নবীনবাগের অহিদুজ্জামানের ছেলে মো. নাহিদ রায়হান (২৪) ও বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার মৌপুরা গ্রামের বিকাশ মোহন্তের ছেলে তূর্য মোহন্ত (২৬)।
Discussion about this post