শিক্ষার আলো ডেস্ক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অপবাদ দেওয়ায় গত দুই দিন ধরে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস। অপবাদের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের দাবিতে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের এক সভায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টা পাঠদান ও পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ফলে সোমবার থেকে ক্লাসে যোগদান করেননি শিক্ষকরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ক্লাসে ফিরেননি শিক্ষার্থীরাও। ফলে দুই দিন ধরে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষ।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা আরও দুই দিন বাকি থাকায় শিক্ষকদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে তারা স্বাভাবিক রেখেছেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. খোরশেদ আলম জানান, সার্জারি বিষয়ে এমবিবিএস ফেল করা শিক্ষার্থীদের পাশ করানোসহ নানা কারণে সার্জারি বিভাগের প্রধান আবুল কালাম আজাদের ওপর চাপ ছিল। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কথিত এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্রে নেমেছে। আদৌ এটির কোনো ভিত্তি নেই। তাই সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার নিশ্চিতের দাবিতে শিক্ষক, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। সঠিক বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এদিকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. তায়েবা তানজিলা মির্জা জানান, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আগামী বৃহস্পতিবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে কলেজের সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। এছাড়াও সিসি ক্যামেরায় গত ২৩ তারিখে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ফুটেজ দেখে আমরা ১ম, ২য় ও ৪র্থ ব্যাচসহ ম-৫৩ ব্যাচের ১৮ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বুধবার সকাল ১০টায় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী ওই ১৮ জনের জবানবন্দি নেওয়া হবে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার সঙ্গে যেই জড়িত হোক না কেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে এম-৫৩ ব্যাচের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।
এদিকে ম-৫৩ ব্যাচের ছাত্রীরা জানিয়েছেন, তাদের কারো সঙ্গে যৌন হয়রানির কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রশ্ন উঠেছে, মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা কারা। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষও লিখিত কোনো অভিযোগ পাননি। তবু একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
Discussion about this post