শিক্ষার আলো ডেস্ক
আগামী ৬ মার্চ পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই শতাধিক দুর্নীতি-অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে আন্দোলনের মুখে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে গোপনে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান তিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
এদিকে ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম এবং ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ট্রেজারার অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজের মেয়াদ শেষ হয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারের পদ দুটি খালি রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি পদের অভিভাবকই শূন্য। আর দফতরে প্রবেশ করতে না পারায় দাপ্তরিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না রেজিস্টার বিজন কুমার ব্রহ্মও। ফলে থমকে আছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন রিপোর্টে পাবিপ্রবির অবস্থান ৪৪তম।
অন্যদিকে ১৭ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার অফিস তালাবদ্ধসহ কর্মকর্তাদের অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে মঙ্গলবার পবিত্র শবে মেরাজের ছুটি থাকায় ক্যাম্পাসে কেউ আসেনি। তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে রেজিস্ট্রার অফিস। দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তালা খোলা হবে না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত কর্মকর্তারা।
পাবিপ্রবির অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। গত তিন দিনে রেজিস্টার বিজন কুমার ব্রহ্ম স্যারসহ দফরের অন্যান্য কর্মকর্তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আজ (গতকাল) ছুটির দিন থাকায় অবস্থান কর্মসূচি না থাকলেও অফিস তালাবদ্ধ রয়েছে।’
শিগগিরই আন্দোলনের আকার বাড়ানো হবে বলে জানিয়ে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহাগ হোসেন বলেন, ‘এখনও আমাদের দাবিগুলোর বিষয়ে কেউ কথা বলতে আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিনিধি দলও আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেনি। আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে আমরা বড় ধরনের আন্দোলনে যাব। আজ থেকে আবারও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানান, বিদায় বেলায় নিজের ভাতিজিসহ ১০২টি পদে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলছিল। চলমান আন্দোলনে লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কায় উপাচার্য গোপনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। প্রথমে তিনি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে নানা মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হলে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়ের আগেই রাজশাহীতে ফিরে গেছেন। ফলে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।
এ বিষয়ে উপাচার্য ড. এম রোস্তম আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘কী কাজ? আমার সঙ্গে আপনাদের (সাংবাদিক) আর কোনো কাজ নেই।’
পাবিপ্রবি মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. এম আবদুল আলীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মেয়াদ পূর্তির আগেই উপাচার্য মহোদয়ের চুপিসারে ক্যাম্পাস ত্যাগ আমাদের বিস্মৃত করেছে। গত চার বছর তিনি ক্ষমতা আর পদের দম্ভে নানা অনিয়ম করে বিশ্ববিদ্যালয়টির সর্বনাশ করে গেছেন। আমরা এমন একজন উপাচার্য চাই যিনি একাডেমিক-প্রশাসনিক উভয় দিক থেকে দক্ষ হবেন, যিনি মেয়াদ পূর্তির সময় চুপিসারে পালিয়ে যাবেন না, বিদায় নেবেন পুষ্পমাল্যে ভূষিত হয়ে।’
রেজিস্টার বিজন কুমার ব্রহ্ম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কর্মকর্তাদের আন্দোলনের বিষয়টি আমি উপাচার্য স্যারকে জানিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেননি। আমি রেজিস্ট্রার দফতরের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতেও পারছি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্যার চলে যাওয়ার পর আর কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেননি। আমাদের কোনো নির্দেশনাও দিচ্ছেন না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাগজপত্র রেডি করে স্বাক্ষর-অনুমোদনের জন্য উপাচার্য স্যারের রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ সৌজন্যে-ঢাকাপোষ্ট
Discussion about this post