শিক্ষার আলো ডেস্ক
নানা অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া সঠিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় ‘চুয়াডাঙ্গার ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি’ ও ‘ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি’র শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ, জমি ও গাড়ি কেনায় অনিয়ম, বিদেশ ভ্রমণ, শিক্ষার্থী ভর্তিতে অবৈধ কোটা নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটি বিষয়গুলোর তদন্ত করছে।
বন্ধ হয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি ২০১৫ সালে ১০টি প্রোগ্রামের অনুমোদন পাওয়ার আগেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এ বিষয়ে মামলা চলছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও ফরিদপুর জেলা প্রশাসন থেকে আসা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে।
অন্যদিকে প্রথম ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে উদ্বোধনী ক্লাসের মধ্য দিয়ে খুলনা বিভাগের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ‘ যাত্রা করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি চুয়াডাঙ্গা জেলা আলমডাঙ্গা সড়কে অবস্থিত। এতে কলা ও মানবিক অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান।
এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই অভিযোগ তদন্ত করা হয়। ইউজিসি শুধু কোনো ব্যাপারে সুপারিশ করতে পারে। তাই তদন্ত প্রতিবেদনে তথ্যানুসন্ধান করে সুপারিশসহ তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিসি) বিরুদ্ধে ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব, জমি কেনায় অনিয়মসহ নানা অভিযোগে তদন্ত করছে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে অপর একটি কমিটি। বিদেশে টাকা পাচার, ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে বিরোধ, শিক্ষকদের ভুয়া পিএইচডি গ্রহণ করার অভিযোগ রয়েছে প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে। এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধেও একটি কমিটি তদন্ত করছে।
ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লার বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ জমা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী কোনো ঠিকানাও নেই। আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধেও সনদ বিক্রির অভিযোগে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে তদন্ত করে নানা অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটিতে।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আমরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণার মানে অনেক বেশি জোর দিচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অনিয়ম প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। আমরা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে তাদের অনেক ছাড় দিয়ে থাকি। কিন্তু অনেকেই এর সুযোগ নিতে চান।
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, সাধারণত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য আর বেসরকারি বিওটিই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। যে কারণে যে কোনো অভিযোগের তির তাদের দিকেই থাকে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ইউজিসিতে অভিযোগ আসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অভিযোগ সাধারণত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে খতিয়ে দেখতে বলা হয়, যা আমরা তদন্ত করি। দুদকের অনুরোধেও আমরা অনেক সময়ে তদন্ত করে দেখি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন নিশ্চিতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে।
Discussion about this post