শিক্ষার আলো ডেস্ক
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নবীন শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলের রুমে ডেকে নিয়ে ভদ্রতা শেখানোর নামে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১২ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলের একটি কক্ষে ঘটে এ ঘটনা।
জানা যায়, অগ্নিবীণা হলের ২০৪ নম্বর কক্ষে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গীত বিভাগের সাগর চন্দ দে কে ডেকে নিয়ে যায় চারুকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরিচয় পর্বের নামে ডেকে নিয়ে তাকে অমানবিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাগরের সহপাঠীরা। এতে সাগর মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাত পেয়েছে, তার দাঁতও ভেঙে গেছে।
পরে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্যাতনের শিকার ছাত্র সাগর চন্দ্র দে সাংবাদিকদের জানান, এদিন বিকেলে ওই কক্ষে সাগরকে রোলিং চেয়ারে জোর করে বসিয়ে ঘোরাতে থাকেন চারুকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহান। এ সময় তাকে বারবার থামাতে বলছিলেন সাগর। কিন্তু তার কথায় কান না দিয়ে অনবরত চেয়ারটি জোরে ঘোরাতে থাকে। একপর্যায়ে চেয়ারটি উল্টে গিয়ে পড়ে যান সাগর। এতে মাথায়, নাকে-মুখে মারাত্মক আঘাত পান তিনি। এ সময় দুটি দাত ভেঙে গিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয় তার। তবে এ অবস্থাতেও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাননি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী। এমনকি সাগরের ফোন ছিনিয়ে নিয়ে আটকে রাখেন সৌমিক।
ভুক্তভোগী সাগর বলেন, ঘটনার পর আমার মোবাইলটি বারবার চাইলেও আমাকে দিতে চায়নি। তবু অনেক চেষ্টার পর মোবাইলটি নিয়ে হাশর ভাইকে মেসেঞ্জারে একটি ছবি পাঠাই এবং লিখি, ‘ভাই আমি তো শেষ, রুম নম্বর ২০৪, অগ্নিবীণা হল। তাড়াতাড়ি আসেন।’ তারপর ওই ভাই ৫ মিনিট পর এসে আমাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
খবর পেয়ে সাগরকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান ওই হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা। এ ছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মোহাম্মদ ইরফান আজিজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক তপন কুমার সরকার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দফতরের পরিচালক তপন কুমার সরকার বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থী সাগর বর্তমানে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যেহেতু সে আহত অবস্থায় আছে, তাই বর্তমানে আমরা তার সুস্থতার দিকটি নিয়ে বেশি চিন্তিত। পরবর্তীতে হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর বন্ধু আমাদের বিষয়টি জানিয়েছে। সে যেহেতু মেডিক্যালে আছে, আমাদের প্রক্টরিয়াল বডি তার খোঁজ রাখছে। ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব গ্রুপের রাজনীতি না করায় এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তার জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের স্ব-স্ব হলের বরাদ্দ সিটও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় আরও সাত জনকে সতর্ক করার পাশাপাশি হলের সিট বাতিল করা হয়েছে।
Discussion about this post