শিক্ষার আলো ডেস্ক
প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রীহলের দুয়ার খুলল; অবসান হলো শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ অপেক্ষার।বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথে লিয়াকত এভিনিউয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ১৬ তলা এ আবাসিক ভবন।
বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নিজেদের আবাসিক বাসস্থানের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘ হল আন্দোলনের ফসল এই ছাত্রীহল ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল’।
সেই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীরা উঠলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে।আজ সকাল ১১ টায় রুম নম্বর ৪০১ নং থেকে ৫১২ পর্যন্ত আসনগুলোতে মহাসমারোহে ছাত্রীরা প্রবেশ করে। গেলো বুধবার দ্বারোদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শিক্ষার্থীরা ওঠার পর হলে আসারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শামীমা বেগম বলেন, “এত বছর পরে হলটা হয়েছে; দিনটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের৷ এই হলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বটা শিক্ষার্থীদেরও নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ছাত্রদের একটি হল করার দাবি ওঠে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানের বক্তব্যে।
উপাচার্য অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, “আংশিক হলেও আমরা আবাসিক হতে পেরেছি সেজন্য আনন্দিত। বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত হবে, এটাই আমরা চাই। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব সব সমস্যার সমাধান করতে চাই৷”
গেল ২৪ ফেব্রুয়ারি এ হলের আসন বরাদ্দের জন্য ১২০০ শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। হলের তৃতীয় থেকে ১৬তলা পর্যন্ত ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আর নিচতলা ও দোতলায় করা হয়েছে ক্যান্টিন আর রিডিং রুম।
সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম হল পাওয়া এবং অনাবাসিক থেকে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপান্তরিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনে এক আনন্দের জোয়ার বয়ে চলেছে। হল পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিনের সংগ্রাম ও ত্যাগের ফসল এই ছাত্রী হল, তাই আন্দোলনকারী বড় ভাইবোন ও কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
ঐতিহ্যবাহী শিক্ষালয়টি কলেজ থাকাকালে পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাস থাকলেও পরে তা বেদখল হয়ে যায়।২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই বেদখল হল পুনরুদ্ধার ও নতুন হল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।
পরে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ৩/১ লিয়াকত এভিনিউয়ের পরিত্যক্ত জায়গাটি দখল করে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলের ব্যানার টাঙিয়ে দেয়।
এক বছর পর ২০১৩ সালের ২৫ অগাস্ট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে সেখানে এক হাজার ছাত্রীর জন্য ২০তলা দুটি টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।
পরে ওই বছরের ২২ অক্টোবর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৬তলা হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।এরইমধ্যে ২০১৪ সালে শিক্ষার্থীরা হলের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুললে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প’র অধীনে ওই বছরের ২০ অক্টোবর হলের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হয়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে হলের উদ্বোধন করেন তৎকালনী উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান।
তবে এই হল পাওয়ার আনন্দের সাথে সাথে মাথায় রাখতে হচ্ছে হলের আসন সংখ্যা মাত্র ৬২৪টি।যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেক ছাত্রীর আবাসন সংকট দূর করাও সম্ভব নয়।যেহেতু আসন সংখ্যা সীমিত সেহেতু একটা বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন যেন এই সীমিত সংখ্যক আসন কেবল তারাই পায় যাদের আসলেই প্রয়োজন।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন আবাসন বণ্টনের সময় কোনো প্রকার ক্ষমতার দাপট বা স্বজনপ্রীতি না হয়।
আমরা চাই ছাত্রী হলে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা গড়ে উঠুক। সিট বাণিজ্য দূরে থাকুক। ছাত্রী সুস্থ সাংস্কৃতি ও রাজনৈতির চর্চা করবে এই হলে।র্যাগিং বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি জারি করতে হবে রাখতে হবে হল কর্তৃপক্ষকে। এটাই এখন শিক্ষার্থীদের একমাত্র দাবী।
Discussion about this post