শিক্ষার আলো ডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেয়েদের আবাসিক হলে রাতে প্রবেশের নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ। গত ৯ মে সব হলের প্রাধ্যক্ষদের সম্মতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সকল ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষদের সর্ব সম্মতিক্রমে মেয়েদের রাতে হলে প্রবেশের সময় সাড়ে ৮টায় নির্ধারণ করা হলো।
এদিকে হলে রাতে প্রবেশের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছে আলোচনা- সমালোচনা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আবাসিক ছাত্রীরা। তারা বলছেন, হুট করে এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এমন নির্দেশনা মেয়েদের ওপর একপ্রকার চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন সিদ্ধান্ত দেখে মনে হচ্ছে মেয়েদের রাত ৮টার পর কাজ থাকে না। এমন সিদ্ধান্ত মানা যায় না।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘ছাত্রীহলে ঢুকার সময় রাত ১০ টা থেকে ৮.৩০ করার মানে কি? এটা তো শীতকাল ও না! সান্ধ্য আইন নিয়ে এত কিছুর পর কি এটা সান্ধ্য আইনের মডিফাইড ভার্সন? সন্ধ্যাই তো এখন ৭ টায়। হঠাৎ এই সিদ্ধান্তের কারণ কি??? এটা কি আসলেও যৌক্তিক?’
আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সবকিছু বরাবর চাপিয়ে দিচ্ছে নিজেদের ইচ্ছামত। হল থেকে বের হওয়ার ই দরকার নেই। এমন অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. জয়ন্তী রাণী বসাক বলেন, ‘আসলে এ সিদ্ধান্তটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকেই বলা হয়েছে যে মেয়েদের যাতে সাড়ে ৮টার মধ্যে হলে ঢুকানোর ব্যবস্থা করি। কারণ প্রায়ই দেখা যাচ্ছে ১০টার পরেও বাহিরে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। ওরা বলে হয়ত কাজের জন্য বা লাইব্রেরির কথা বলে কিন্তু এমনি এমনি প্রক্টরিয়াল বডির হাতে ধরা পড়ে। আর প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিং হয়েছে তখনই এটা বলা হয়েছে। সেইসাথে প্রক্টরিয়াল বডির অনুরোধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আসলে প্রশাসনিক ভাবেই এই বিষয়টা নিয়ে ভাবতে বলা হয়েছে। সে কারণে এ নোটিশ দেয়া হয়েছে। আবার প্রশাসন যদি বলে দরকার নাই এখন এটা তুলে নেয়া যাবে।’
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শর্মিষ্ঠা রায় জানান, ‘এ বিষয়ে আমাদের হল প্রভোস্টদের একটা মিটিং হয়েছিলো সেটা সিদ্ধান্ত এরকম ছিলো তবে এটা আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ দেয়া হয়নি।’
তাপসী রাবেয়া হলের প্রভোস্ট ও প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহব্বায়ক প্রফেসর ড. মোসা. ফেরদৌসী মহল বলেন, ‘মূলত ওটা কোন বিজ্ঞপ্তি নয়। এর আগে আমরা মেয়েদের ৬টি হলে প্রাধ্যক্ষরা বসেছিলাম যে ছুটির পর এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায় কিনা। এ নিয়ে আমরা ছুটির পর হলের মেয়েদের সাথেও কথা বলব এমনটাই বলা হয়েছিলো প্রভোস্টদের। কিন্তু ভুলক্রমে এক হলের প্রভোস্ট নোটিশ আকারে দিয়ে দিয়েছে। আমি বিকেলে গিয়ে সব প্রভোস্টদের সাথে বসব জানতে চাইব কেনও এমন সিদ্ধান্তের নোটিশ দেয়া হলো। আসলে এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি এখনো।’
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর তারেক নূর জানান, ‘এ বিষয়টা জেনেছি। হয়ত প্রভোস্ট কাউন্সিল থেকে এ সিদ্ধান্তটা এসেছে। তবে হলে প্রবেশের সময়টা কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে আমরা প্রাধ্যক্ষদের সাথে কথা বলব।’
উল্লেখ্য, এরআগে করোনায় দীর্ঘ বন্ধ শেষে গতবছরের নভেম্বরে হলের সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রীরা। এসময় তারা হলের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে সান্ধ্য আইন বাতিলের দাবি জানায়। একই সাথে আন্দোলনে নামে রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও সেসময় তাদের দাবি মেনে নিয়ে হলে প্রবেশের সময়সীমা রাত ১০টা পর্যন্ত করেছিলো হল কর্তৃপক্ষ।
Discussion about this post