টেবিলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে হরেক রকম পণ্য। এর মধ্যে আছে চিচিঙ্গা, করলা, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, চালকুমড়া, টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, আলুসহ নানান সবজি। সামাজিক দূরত্ব মেনে একে একে সেখানে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ। যাঁর যা প্রয়োজন, তিনি সেই সবজি নিয়ে যাচ্ছেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা উড়ালসড়কের নিচে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা মিলল এমন চিত্র। করোনা–পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় একদল কিশোর-তরুণ। উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘মানবতার বাজার’। এ বাজারে প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য নেওয়া ছাড়াও সুযোগ রয়েছে সেখানে সাধ্যমতো খাদ্যশস্য রেখে দেওয়ারও।
মানবতার বাজার থেকে সবজি নিয়েছেন এক নারী। তিনি জানান, নির্ধারিত কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করতে এসে এখানে তিনি মানবতার বাজার দেখতে পান। তারপর এখান থেকেই তিনি তাঁর প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যশস্য নিয়েছেন। কাজহীন এক দিনমজুর বলেন, ‘এইখান থেকে কিছু বাজার নিলাম। ঘরে বাজারঘাট কিছু নাই। কোথাও থেকে সাহায্য পাই নাই।’
কেওয়া পশ্চিমখন্ড এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। অনেক সময় প্রয়োজন থাকলেও অনেকেই খাদ্যসহায়তা চাইতে পারেন না। তাঁদের জন্য এটি ভালো একটি সুযোগ। আবার অনেকেই সাধ্যের মধ্যে অল্প কিছু খাদ্যশস্য সহযোগিতা হিসেবে দেওয়ার সুযোগ পান না। তাঁদের জন্যও এই উদ্যোগ চমৎকার।
মানবতা বাজারের উদ্যোক্তা ‘ফ্রেন্ডস সোসাইটি’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তারা মানবতার বাজার প্রতিষ্ঠা করার আগেই ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের খাবার বিতরণ করেছিলেন। এই সংগঠনের উদ্যোক্তাদের একজন রাকিবুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদ্যসামগ্রী দিতে গিয়ে একটা অভিজ্ঞতা হয়। দেখলাম, অনেকেই অভাবগ্রস্ত থাকলেও চাইতে পারেন না। এমন মানুষসহ সবার জন্য এই মানবতার বাজার। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই মানবতার বাজারের জন্য অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।রাকিবুল হাসান জানান, ১৫ এপ্রিল একটি ফান্ড গঠন করে নিত্যপণ্য কিনে মানবতার বাজারে রেখেছিলেন তাঁরা। এরপর ১৫ এপ্রিলের বাজারের জন্য সহযোগিতা করেছেন সংগঠনেরই এক সদস্য জাকির হাসান। মানবতার বাজারে প্রতিদিন নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে। ক্রমে এখানে পাওয়া যাবে চাল, ডাল, তেলসহ আরও অনেক পণ্য।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ফ্রেন্ডস সোসাইটির বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৩৮। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠনের বয়স এখন চার বছর। চার বছর ধরে তাদের সংগঠন থেকে সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন সদস্যরা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই দুঃসময়ে সংগঠনের সবাই সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নেন ব্যতিক্রমী সহযোগিতার। সেই প্রচেষ্টারই একটি অংশ মানবতার বাজার। মানবতার বাজার যত দিন প্রয়োজন, তত দিন চলমান রাখবেন তাঁরা।
Discussion about this post