নিজস্ব প্রতিবেদক
পদ্মা সেতু চালুর পরপরই বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি, লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষিতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সেই সাথে উন্মোচিত হবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার দ্বার। উৎপাদিত কৃষি পণ্য দ্রুত পরিবহনের ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এতে প্রতি বছর দারিদ্র্য নিরসন হবে ০.৮৪ ভাগ। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে দেশের দক্ষিণের ২১ জেলার প্রায় ৬ কোটি মানুষের।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক কমপ্লেক্সে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম আয়োজিত ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন ও কৃষিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রমিজ উদ্দিন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে ওই এলাকার কৃষকরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবে এবং অল্প সময়ে কৃষি পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে পারবে। ফলে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমে আসবে ব্যাপক হারে।
এছাড়াও সেতু চালু হলে খুলনা ও বাগেরহাটের মাছ, যশোরের সবজি আর গদখালীর ফুল, বরিশালের ধান ও পানসহ পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি পণ্য ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে যশোর ও ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। পটুয়াখালী থেকে প্রতি বছর প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন মাছ জেলার বাইরে রপ্তানি হয়। সেতু উদ্বোধনের ফলে মাগুরার লিচু চাষিরা আগামী বছর থেকে প্রতি মৌসুমে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বাড়তি লিচু বিক্রি করতে সক্ষম হবেন। লিচুর পাশাপাশি মাগুরায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি, ১২ হাজার হেক্টরে পেঁয়াজ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়। এসব পণ্য দ্রুত ঢাকার বাজারে পাঠানো সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, সেতু চালুর ফলে শরীয়তপুরে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত মাংস ও দুধ মাত্র ২ ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। এতদিন ফেরিঘাটের ভোগান্তির কারণে এসব মাংস ও দুধ ঢাকায় সঠিক সময়ে এনে বিক্রি সম্ভব হয়নি। পদ্মা সেতু চালু হলে পরিবহনে আর বাড়তি সময় লাগবে না।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান বলেন, চিংড়ি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি পণ্য। চিংড়ি উৎপাদনের ৯০ শতাংশের বেশি উৎপাদিত হয় খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে। সেতু চালু হলে চিংড়ি খামারের উৎপাদনশীলতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে চিংড়ি উৎপাদিত হবে এবং বিদেশে চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। রপ্তানি বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে বিশেষ করে রাজধানী শহর থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে চিংড়ির সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। কৃষক ও উৎপাদকরা তাদের উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য পাবে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীনসহ বাকৃবির গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের প্রায় ৩০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post