শিক্ষার আলো ডেস্ক
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা রোপণের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘোষণার পর নিজ উদ্যোগে কর্মস্থলে ৬৫০ তালগাছের চারা লাগিয়েছেন মো. হারুন অর রশিদ (৫৩)। এর মধ্যে কিছু ফলজ ও বনজ গাছও রয়েছে।
হারুন অর রশিদ ২০০৭ সাল থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভাষা শহিদ আবদুস সালাম হলের বাবুর্চি হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। ছোটবেলা থেকে নিজের বাড়ির আঙিনায়, সড়কের পাশে অসংখ্য বৃক্ষরোপণ করেছেন তিনি। তিনি তার বেতনের টাকা খরচ করেছেন গাছ লাগাতে গিয়ে। তবুও থেমে থাকেননি। বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাল বীজ সংগ্রহ করেছেন। এতে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে।
হারুন অর রশিদ বলেন, আমি ২০০৭ সালে বাবুর্চি পদে চাকরি নেই। তবে আমার সব সময়ই দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল। সেই চিন্তা থেকে তালগাছ লাগানোর কথা ভাবি। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় উপকূলীয় এলাকায়, তাই এখানে তালগাছ রোপণ করা সব থেকে ভালো হবে। তাই যখন যেখানে তালের বীজ পেয়েছি আমি কিনেছি অথবা খুঁজে এনেছি।
তিনি আরও বলেন, তালের বীজ পরিচর্যা করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তালগাছ লাগানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন, তারপর বিষয়টিতে ভালোভাবে জোর দেই। এখন গাছগুলো দৃশ্যমান। সবাই সুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। এতে আমার ভালো লাগে।
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, শুধু তালগাছ নয়, আমি অন্যান্য ফলজ ও বনজ গাছ রোপণ করেছি। সালাম হলের সামনে বটগাছ, সুপারিগাছ ও আমরুজ গাছ লাগিয়েছি। বটগাছগুলো এখন মানুষকে ছায়া দিচ্ছে। আমার গাছের আমরুজ এবার সব ছাত্রকে নিয়ে খেয়েছি। আমি কারও থেকে টাকা-পয়সা চাই না। ভালো লাগা, দেশের প্রতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি আন্তরিকতার কারণে গাছ লাগিয়েছি।
হারুন অর রশিদের সহকর্মী আবুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হারুন ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে তালের আঁটি এনে লাগিয়েছেন। এটা আমার ভালো লেগেছে। তাই আমি আমার বাড়ি থেকে বীজ এনে দিয়েছি। আমরা না খেলেও অন্য মানুষ খাবে। এতে আমাদের আমলনামায় সদকায়ে জারিয়া হিসেবে সাওয়াব যুক্ত হবে।
আরেক সহকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখার সাবেক সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, হারুন ভাইয়ের চাকরির পাশাপাশি এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবাসা আমাদের অবাক করেছে। এক দিন হারুন ভাই থাকবে না, তবে এই তালগাছগুলোর মাধ্যমে হারুন ভাই শত শত বছর বেঁচে থাকবেন। এমন সহকর্মী পেয়ে আমরা গর্বিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মমতাজ বেগম বলেন, মামা এতগুলো গাছ লাগিয়েছেন, এতে আমরা খুশি। এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিকে অনেকে চাকরি হিসেবে দেখে কিন্তু এটা যে পরিবার তা অনেকেই ভাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং পরিবেশের কথা ভেবে উনি যে সাড়ে ছয়শ গাছ লাগিয়েছেন তা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। উনি নিজ অর্থায়নে এবং নিজ উদ্যোগে এই কাজটা করেছেন তাই উনাকে স্যালুট জানাই। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উনার কাজের প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে সম্মাননা দেওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তালগাছ রোপণের ফলে আমাদের জীববৈচিত্র্য রক্ষা হবে। বাবুইপাখি এখানে বাসা করবে, বাদুর আসবে ফল খাওয়ার জন্য। আমাদের উপকূলের মাটি ও পরিবেশ তালগাছের জন্য অনেক উপযোগী। তালগাছগুলো যদি থাকে, তাহলে মাটির ক্ষয়রোধ হবে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।তালগাছ বজ্রপাত থেকে ক্যাম্পাসকে রক্ষা করবে এবং প্রাণনাশের সম্ভাবনা কমে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম বলেন, হারুন অর রশিদ আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবুর্চি। তার আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। ছয় শতাধিক গাছ লাগালেও টিকেছে দুই শতাধিক। এই গাছ বড় হবে, উপকূলীয় এলাকা হিসেবে সবার উপকারে আসবে। বজ্রপাতে অনেক মানুষ মারা যায়। তালগাছ বজ্রপাতের চার্জ দূরে সরিয়ে দেয়। ফলে ওই স্থানে কোনো ক্ষতি হয় না।
তিনি আরও বলেন, তালগাছ খুবই মূল্যবান গাছ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। মানুষ তালের শাঁস খায়। এছাড়া তাল পেকে গেলে পিঠা খাওয়া হয়। অনেক পয়সা খরচ করে হারুন গাছগুলো লাগিয়েছে। আমাদের অনেকেই তাকে সহযোগিতা করেছে। তালগাছ পরিপক্ক হলে হয়তো সে থাকবে না। তখন যেসব ছাত্র-ছাত্রী আসবে তারা হারুন অর রশিদের কথা জানতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে বজ্রপাতে অন্তত ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। চলতি বছরে ২০২২ সালের ৩ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৩৫ জন।সৌজন্যে-ঢাকাপোষ্ট
Discussion about this post