শিক্ষার আলো ডেস্ক
বুয়েটের ২০২১-২২ ব্যাচের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এতে ৪৫০তম হয়ে যন্ত্রকৌশল বিভাগে চান্স পেয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে হত্যার শিকার বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ।
ফাইয়াজ পোস্টে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর ইচ্ছায় বুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির সুযোগ লাভ করতে পেরেছি। আসলে এখন আমাদের অনেক খুশি হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত বাড়ির কারও মুখে তেমন খুশির ছিটেফোঁটাও দেখতে পাইনি। গতকাল যে সময় আমাদের রেজাল্ট দিয়েছে, ২০১৭ সালেও ঠিক ওই একই সময়ে ভাইয়ার রেজাল্ট দিয়েছিল। তখন আমরা চারজন একই ঘরে বসে ছিলাম। সঙ্গে চাচাও ছিল। ভাইয়ার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলেছিল, বুয়েটের রেজাল্ট দিয়েছে।সেদিনের মতো খুশি ভাইয়াকে আর কখনো দেখিনি। ঠিক যেন চোখ-মুখ দিয়ে আনন্দ দেখা যাচ্ছিল। আমিও সেদিন অনেক অনেক বেশি খুশি হয়েছিলাম। সত্যি বলতে সেদিনের আনন্দের ১০ ভাগও গতকাল নিজের রেজাল্ট দেখে পাইনি।’
স্ট্যাটাসে ফাইয়াজ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমার পরিবারের একজনও বলেনি বুয়েটে ভর্তি হতে। আসলে কারও সেটা বলার মতো সাহস নেই। আমার দাদা, ভাইয়ার রেজাল্ট শুনে পুরো এলাকায় বলে বেড়িয়েছিল, তিনি কিনা আমাকে বারবার বলছেন, তুই আর বুয়েটে যাস না। দরকার হলে রাজশাহী-খুলনা ভার্সিটিতে পড়। ওরা খুব খারাপ।’ কোথায় পড়ব জানি না এখনো। আইইউটিতে ৪১তম হয়েছিলাম, সিএসইতে ভর্তি আছি ওখানে।
ফাইয়াজ লেখেন, ‘আমাদের দুই ভাইয়ের বয়স আর ক্লাস গ্যাপ চার বছরের। তাই ভাইয়াকে ভর্তির দিনই বলছিলাম, তাহলে ব্যাপারটা এমন যে তুই বের হবি আর আমাদের ব্যাচ ঢুকবে। ভাইয়া একবার আম্মুকে বলেছিল, এখানে দেখি যার বড় ভাইও পড়ে ছোট ভাইরাও বুয়েটেই আসে। তোমার ছেলে কী করবে? ভাইয়ার আসলে অনেক আশা ছিল, আমিও ভালো কোথাও ভর্তি হব। ভাইয়ার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে বলছিল, তুমি তো সাব্বির? তুমি নাকি অনেক ভালো ছাত্র। তুমি কি বুয়েটে আসবা? তোমার ভাই তো বলে তোমারও নাকি বুয়েটে ইচ্ছা?’
ফাইয়াজ স্ট্যাটাসে জানান, ‘ভাইয়া মারা যাওয়ার পরে ওর এক স্টুডেন্ট আর তার মা বাসায় এসে বলে, তোমার ভাই কিন্তু তোমাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করত। সব সময় বলত তোমার কথা। তুমি কোথায় পড়বা এসব কথা সব সময় বলত। ভাইয়ার রেজাল্টের দিন ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিল আলহামদুলিল্লাহ লিখে, আমি আবার তখন জোর করে বলেছিলাম, আমাকে ট্যাগ করতে। হয়তো আজ উলটোটা হতো। প্রথমবারের মতো ভাইয়ার খুশি হওয়ার মতো কিছু হতে পারত এটা, কিন্তু সেটা আর হলো না। এরপর কী করব জানি না এখনও। এতদিন তো শুধু ভাইয়ার দেখানো পথেই এগিয়েছি। বলা যায়, ভাইয়ার দেখানো পথ এখান পর্যন্তই ছিল। এর পরের দিনগুলো কেমন হবে সেটা আর আমাকে দেখিয়ে যাওয়ার সুযোগ সে পায়নি। জানি না ভাইয়া কী অবস্থায় আছে, কোথায় আছে কিন্তু এখন যতটা মিস করি ততটা আগে কখনো করিনি।’
ফাইয়াজ লিখেছেন, ‘আপনারা সবাই আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এত ভালোবাসার যোগ্য আমরা কি না জানি না। আসলে আমার শিক্ষক, বন্ধু কিংবা তেমন চিনি না এমন অনেকেও আমাদের যেভাবে গত কয়েক বছর সাপোর্ট দিচ্ছেন এটা আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সবার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই।’
আবরার ফাহাদ বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।
এবার ছাট ভাই পা রাখতে যাচ্ছে বুয়েট প্রাঙ্গণে। ফলাফল নিয়ে খুশি আবরার ফাইয়াজ ও তার পরিবার। তবে নিরাপত্তা নিয়ে এখনো সন্দিহান তারা।
কারণ এই প্রাঙ্গণেই ভাই হারিয়েছেন ফাইয়াজ, সন্তান হারিয়েছেন বরকত উল্লাহ-রোকেয়া খাতুন দম্পতি। তাই ভেবেচিন্তেই নেবেন সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে আবরার ফাইয়াজের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আবরার এখন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ভর্তি আছে।
আমরা তাকে বুয়েটে ভর্তি করাব কি না তা নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করতে হবে। বুয়েটে এখনো র্যাগিং আছে কি না, নিরাপত্তা কতটুকু পাবে এসব দেখতে হবে। এরপর সিদ্ধান্ত নেব। আর ওর ইচ্ছাকেও প্রাধান্য দেব।
এ বিষয়ে আবরার ফাইয়াজ বলেন, ফল পেয়ে আমি খুশি। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ফল এখনো বাকি। আবার আইইউটিতে ভর্তি আছি। এখন পর্যন্ত কোথায় পড়ব সিদ্ধান্ত নেইনি।
তবে বুয়েটে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। ভর্তি কার্যক্রম ঈদের আগে হচ্ছে না। ১০-১৫ দিন সময় পাচ্ছি। এই সময়ে ভেবে দেখি। পরিবারের সঙ্গেও আলাপ করে দেখি। এরপর সিদ্ধান্ত নেব।
Discussion about this post