নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রত্যেক ইউনিটে প্রতিবছর কয়েক লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেন। সারা দেশ থেকে মোটামুটি মেধাবী শিক্ষার্থীরাই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার উপযোগী হন। গত কয়েক বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরীক্ষায় মাত্র ১০-২০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কৃতকার্য দেখানো হচ্ছে। কখনো কখনো ৯০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি পরীক্ষার্থীকে অকৃতকার্য দেখানো হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সদ্যঘোষিত খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীকে। বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১ লাখ ১০ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী। কৃতকার্য দেখানো হয় ১১ হাজার ৪৬৬ জনকে। অর্থাৎ ৯৯ হাজার ৯০৮ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এই ইউনিটে পাশের হার ১০ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কেন এত শিক্ষার্থী প্রতিবছর অকৃতকার্য হচ্ছেন বিষয়ে ফার্মেসি অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটসংখ্যা সীমিত। কিন্তু এখানে সবাই ভর্তি হতে চায়। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। এখানে যারা আবেদনের যোগ্যতা রাখেন তারা সবাই মেধাবী। স্কুল-কলেজের ২০ থেকে ২৪ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দেড় থেকে ২ লাখ শিক্ষার্থী এখানে আবেদন করতে পারেন। যারা আবেদনের যোগ্যতা রাখেন তাদের সবাই মেধাবী। এখান থেকে ‘ইল্যুমিনেশান’ প্রক্রিয়ায় গিয়ে মেধাবীদের মধ্য থেকে সেরা মেধাবীকে বাছাই করে নিতে হয় আমাদের।
পরীক্ষা পদ্ধতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সেরা মেধাবীদের যাচাই করতেই নেওয়া হয় ভর্তি পরীক্ষা। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি এমন করে বিন্যাস করা হয়েছে যাতে সহজেই সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীকে বাছাই করে নেওয়া যায়। এ জন্য পরীক্ষা পাশের মানদণ্ডে কিছু সূক্ষ্ম ও জটিল প্রক্রিয়া সংযোজন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আমরা একটা সূক্ষ্ম ছাঁটাই পদ্ধতি অনুসরণ করি। ১০০ নম্বরের মধ্যে আমরা পাশ নম্বর ৪০ রেখেছি। পাশের জন্য এরপরেও আরো সাতটি ধাপ রেখেছি। এ প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থী ভালো করলেও অনেক ক্ষেত্রে কোনো না কোনো ধাপে অনুত্তীর্ণ থেকে যান। যার জন্য প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ উত্তীর্ণ হতে পারেন না।
খ ইউনিটে পাশের নম্বরের বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন: মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় সমন্বিত পাশ নম্বর ৪০। এক্ষেত্রে ৬০ নম্বরে হয় এমসিকিউ পরীক্ষা। এরমধ্যে বাংলা ও ইংরেজি প্রতিটি পরীক্ষার নম্বর ১৫ করে ৩০। অন্যদিকে সাধারণজ্ঞান পরীক্ষা হয় ৩০ নম্বরে। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজিতে কেউ ৫ নম্বরের কম পেলে অকৃতকার্য বিবেচিত হন। সাধারণজ্ঞানে ৩০ নম্বরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ পেতে হবে। সবমিলিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানে ৬০ এর মধ্যে পেতে হবে ২৪। এই নম্বর না পেলে পরীক্ষার্থী অনুত্তীর্ণ বলে বিবেচিত হন। আর এমসিকিউ অংশে উত্তীর্ণ না হলে দেখা হয় না লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র। তিনি বলেন, এবার আসি লিখিত পরীক্ষায়। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা এবং ইংরেজি অংশে প্রতিটিতে ২০ করে মোট নম্বর ৪০। এর মধ্যে প্রতি অংশে পাশ নম্বর ৫। তবে উভয় অংশে ন্যূনতম ৫ করে ১০ পেলেই কোনো শিক্ষার্থীর উত্তীর্ণ হবে না। পাশ করতে হলে দুই অংশ মিলে ন্যূনতম ১১ পেতে হবে পরীক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই জটিল সমীকরণ উত্রানোর উপায় কী? জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হয় পাঠ্যবই থেকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা কোচিং নির্ভর হয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই পাঠ্যবইয়ের প্রতি কম গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ কারণে অনেকেই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে আমার উপদেশ হলো, শিক্ষাথীর্রা যেন পাঠ্যবইটি পুরোপুরি বিশদভাবে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ‘ঘ’ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, এবার ‘ঘ’ ইউনিটে আবেদন করেছেন ৭৮ হাজার ৩১ জন পরীক্ষার্থী। কিন্তু এর বিপরীতে সিট আছে মাত্র ১ হাজার ৩৩৬টি। ভর্তি করানোর সময় আমরা মাত্র ২ থেকে আড়াই হাজার সিরিয়াল পর্যন্ত কল করতে পারি। এর চাইতে বেশি পাশ করলেও তাদের নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। সেজন্য এর চেয়ে বেশি শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে আশা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের যাতে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টা থাকে আমাদের। তার জন্য কিছুটা জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় আমাদের। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, তারা যেন পাঠ্যবইকে বেশি গুরুত্ব দেন। পাঠ্যবই অনুসরণ করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়।
Discussion about this post