শিক্ষার আলো ডেস্ক
নিজের মোবাইল খুইয়ে দুই ছিনতাইকারীকে ধরে প্রশংসায় ভাসছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক ছাত্রী। তবে ওই ছাত্রীর ফোনটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
শুক্রবার (২২ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত তার মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তেজগাঁও থানার ওসি অপূর্ব হাসান বিকালে বলেন, থানায় দুজনকে (ছিনতাইকারী) ধরে দিলেও তিনি (ভুক্তভোগী) মামলা করতে রাজি হননি। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ওই দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়ন করছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার ট্রাফিক সিগনালে বাসে বসে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারিশা আক্তারের ফোন টেনে নেয় ছিনতাইকারী। সঙ্গে সঙ্গেই বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীর পিছু নেয় শিক্ষার্থী। তাকে ধরতে না পেরে হতাশ হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি। প্রধান সড়কের পাশেই ইত্তেফাকের গলিতে দাড়িয়ে থাকেন শিক্ষার্থী। ঠিক তখনই আরেক ছিনতাইকারী অন্য মানুষের মোবাইল ছিনতাই করে পালানোর সময় তাকে ঝাপটিয়ে ধরেন শিক্ষার্থী।
ছিনতাইকারীর মোবাইল কল লিস্ট থেকে তার সহযোগীকে ফোন করে কারওয়ান বাজার আসতে বলা হয়। সহযোগী আসলে প্রত্যক্ষদর্শীদের সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়। আটক করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ফোন পাওয়া যায়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সহপাঠী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের (বন্যপ্রাণী শাখা) শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সিয়াম জানান, আমরা মাস্টার্সের থিসিস কোর্সে হাতি গবেষণায় কাজ করছি। সেই কাজে মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে তানজিল বাসে বাসায় ফিরছিলাম। বিকাল সাড়ে ৫টায় কারওয়ান বাজার সিগনালে এমন ঘটনা ঘটে। পরে তেজগাঁও থানায় জিডি করি। থানায় ক্যাম্পাসের বড়ভাইরা যথেষ্ট হেল্প করেছে এবং মোবাইল উদ্ধারের আশ্বস্ত করেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার বলেন, আমার ফোনটা ছিনতাইয়ের সময় ফোনে কোনো লক ছিল না। আমার ফোনে ব্যক্তিগত অনেক ইনফরমেশন আছে। তারা ফোন ব্যবহার করে আমাকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি ফোনের চিন্তা করি না, ব্ল্যাকমেইলের চিন্তায় ঘুম আসছে না।
এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন মানবজমিন পত্রিকার ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ। কারওয়ান বাজারে দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক মানবজমিনের কার্যালয় যে ভবনে, তার নিচের গলিতে ঘটে ছিনতাইকারীকে ধরার ঘটনা।
ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই তরুণী একটা গবেষণার কাজে মিরপুর চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন। কাজ শেষ করে এক বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছিলেন। বাসে বসে উনি বোনের সঙ্গে কথা বলছিলেন, হঠাৎ জানালা থেকে কালো টি-শার্ট পরা একটা ছেলে তার ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তিনিও ছিনতাইকারীর পেছন পেছন ছুটতে ছুটতে কারওয়ান বাজারে মানবজমিনের গলিতে ঢুকে পড়েন। কিন্তু ছিনতাইকারীকে পাননি।
তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মাহমুদ জানান, কালকে ছিনতাইকারীকে যেভাবে মেয়েটি ধরেছেন, সত্যিই সে একটা সাহসিকতার কাজ করেছেন। তিনি ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেনি জিডি করেছে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ছিনতাইকারীকে মামলা দিয়েছে। তাদের নামে একাধিক মামলা আছে। আমরা ফোনটি ট্রাকিংয়ে দিয়েছি। যখনই সিম ঢুকাবে আমরা লোকেশন জানতে পারবো। আশা করি শর্ট টাইমের মধ্যেই তার ফোনটি উদ্ধার করতে পারবো।
শিক্ষার্থীর অনিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ওদের চক্রটি তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার এলাকায়। আর শিক্ষার্থী থাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। এদের চক্র ওখানে নেই। ইনসিকিউরড ফিল করার তেমন কিছু নেই। পুলিশ তার পাশে আছে।
Discussion about this post