শিক্ষার আলো ডেস্ক
সময়ের পরিসরে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবেও প্রবেশ করছে আমাদের দেশ। উন্নতদেশে পরিণত হওয়ার অন্যতম হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের রোবটিক ব্যবহার। ফলে অল্প সময়ে মানুষের কায়িক পরিশ্রম ছাড়াই বড় বড় কার্য সম্পাদন সম্ভব হবে। আর সেদিকেই নজর দিয়েছে সরকার। সরকারের এই প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন গবেষণা কাজ পরিচালনা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে বহুদূর এগিয়ে নিতে ইতোমধ্যেই নতুন নতুন গবেষণা আর উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসার ঘটাতে রুয়েট প্রশাসন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানাভাবে আরও বেশি প্রশিক্ষিত করে তুলছে। ফলে গবেষণা কার্যক্রমে পরিপূর্ণভাবে মনোনিবেশ করে দেশকে দ্রুত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কাজকে অধিকতর সহজ করার পরিকল্পনা নিয়ে রুয়েট ক্যাম্পাসে গবেষণার জন্য অত্যাধুনিক বেশকিছু ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। কিছু কার্যক্রম চলমান ছিল আগে থেকেই। এর মধ্যে রয়েছে- মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট ল্যাব, হাইভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, রাডার অ্যান্ড স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিন অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, হাই কম্পিউটিং ল্যাব, আইওটি ল্যাব, ন্যানো টেকনোলজি ল্যাব, রোবোটিক্স ল্যাব ইত্যাদি।
এছাড়াও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে দেশকে প্রবেশে সহায়তা করতে নানামুখি কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে রুয়েট প্রশাসন। এর মধ্যে অন্যতম হলো- প্রকৌশল, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা প্রকল্প আহ্বান, মঞ্জুরি প্রদান ও পরিচালনা; দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ গবেষণা কর্মসূচি গ্রহণ; মেধার স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে ফেলোশীপ, পুরস্কার ও পদক প্রবর্তন ও বিতরণ; গবেষণা উন্নয়নের জন্য কর্মশালা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন ও পরিচালনা; নিয়মিত গবেষণা পুস্তক ও জার্নাল প্রকাশ করা হয়। প্রতিবছর গবেষণা প্রকাশনার জন্য ভ্রমণভাতা, প্রকাশনা ব্যয় ও প্রকাশনা সম্মানী প্রদানসহ গবেষণায় আগ্রহী করতে বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে।
কিউএস বিশ্ব র্যাংকিংয় জায়গা করে নিতে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক গবেষণার জন্য কমিটিও করেছে। ওই কমিটি প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও একত্রিকরণের মাধ্যমে ডেটাবেজ তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গবেষণা ও শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জাপান, কানাডা, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এমওইউ চুক্তিও সাক্ষর করেছে রুয়েট। গবেষণা এগিয়ে নিতে যেখানে ২০১৮-২০১৯ গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০টি সেখানে চার বছরের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯টিতে। ফলে গবেষণা খাতের বাজেটও বেড়েছে বহুগুণ।
অত্যাধুনিক ভেন্টিলেটর তৈরী :-
শুধু গবেষণাতেই নয়; চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে গবেষকরা। মহামারি করোনার সময় গবেষণাদল প্রযুক্তির ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মূল্যে দুটি ভেন্টিলেটর তৈরি করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আয়োজিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে একটি ভেন্টিলেটর দেশের একশত প্রজেক্টের মধ্যে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পঞ্চম পুরস্কার অর্জন করে। আরেকটি ভেন্টিলেটর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য রাখা হয়েছে।
অত্যাধুনিক অটোমেটেড হুইল চেয়ার আকৃতর রোবট:-
এদিকে প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা অত্যাধুনিক হুইল চেয়ারও দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ব্যবহারকারী মুখ দিয়ে কথা বললেই চলাচল করবে এই হুইল চেয়ার। এছাড়া অর্ধেক ঠাণ্ডা ও অর্ধেক গরম থাকবে এমন ফ্রিজ তৈরিও রুয়েটের গবেষকদের একটি অভাবনীয় সাফল্য। অন্যদিকে বিদেশের মতোই তবে দেশীয় প্রযুক্তি ও উপাদান দিয়ে তেল সাশ্রয়ী গাড়ি তৈরি করেছে রুয়েট। এই লো-ফুয়েল গাড়ি জাপানে প্রতিযোগিতাতেও অংশ নেয়ার গৌরব অর্জন করে।
রুয়েটের গবেষকগণ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ উদ্ভাবন করেছেন। সাধারণ এটিএম বুথে নরমাল (চার সংখ্যা) পাসওয়ার্ড এর মাধ্যমে বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়।
তবে উন্নত প্রযুক্তির এই বুথের বিশেষত্ব হলো- এই বুথে থাকবে জটিল পাসওয়ার্ড (সংখ্যা, অক্ষর, প্রতীকের সংমিশ্রন), এটিএম বুথে টাকা তুলতে গেলে প্রয়োজন হবে এটিএম কার্ড বহনকারীর আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি। এই তিনটার যেকোনো একটি না দিলে বুথ থেকে টাকা তোলা সম্ভব হবে না। ফলে হ্যাকাররা ডেভিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করেও টাকা হাতিয়ে নিতে পারবে না। এছাড়া রুয়েটের গবেষক শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এমন কিছু রোবট তৈরী করেছেন- যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কুকুরের আকৃতিতে তৈরী রোবট:-
এমন একটি রোবট যেটি রিমোটের মাধ্যমে কন্ট্রোল করে মানুষের চেয়ে অতি দ্রুত যেকোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। এছাড়া কুকুরের স্টাইলে একটি রোবট তৈরী করা হয়েছে যেটি যখন যেভাবে প্রয়োজন সেই কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। কুকুরের স্টাইলে তৈরী এই রোবট খুলে আবার মানুষের আকৃতি তৈরী করে অন্যভাবে আলাদা কাজ করতে পারবে। এছাড়া অন্য যেকোনো আকৃতিতে এই রোবট পরিবর্তন করে প্রয়োজনমাফিক কাজে লাগানো যাবে। যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে রুয়েটের বিশেষ দল মনে করেন।
উন্নত সফটওয়্যার তৈরি:-
আবার অনেকে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ তৈরিসহ প্রোগ্রামিংয়ের নানা ক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন। এভাবে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি বাস্তবমুখী জ্ঞানও অর্জন করায় গুগোল, মাইক্রোসফট, বোয়িংসহ দেশ-বিদেশের সনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকরি করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে শিক্ষার্থীরা।
Discussion about this post