শিক্ষার আলো ডেস্ক
সমন্বিত শিক্ষা আইন অতি দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়নসহ ছয়টি দাবি জানিয়েছেন এডুকেশন ওয়াচ ও গণসাক্ষরতা অভিযান। রোববার ( ৩১ জুলাই ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজের পক্ষে এসব দাবি তুলে ধরেন ২০১০ শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে ছয়টি দাবি তুলে ধরে খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ অতি দ্রুত প্রণয়ন ও গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তুতকৃত শিক্ষা আইন, ২০১৬-এর খসড়ার ওপর প্রদত্ত সুপারিশমালার আলোকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের খসড়া পরিমার্জন করা হয়েছে কি না, বা এসংক্রান্ত কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা সবাইকে জানাতে হবে।
নতুন খসড়া আইন হয়ে থাকলে তা মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপনের আগে প্রকাশ করা জরুরি উল্লেখ করে খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘বিশেষ করে শিক্ষা অধিকার, নোট বই, গাইড বই, কোচিং বাণিজ্য রোধে প্রস্তাবিত আইনে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সাধারণ শিক্ষা, ইংরেজি মাধ্যম ও ধর্মীয় শিক্ষার মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য নিরসনে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেসব বিষয়ে নাগরিক সমাজকে জানানো এবং তাদের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও করোনার প্রতিঘাত বিবেচনায় নিয়ে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট ও আইনে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচ্য।’
এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন বলেন, ‘শিক্ষা বিষয়ে যথাযথ দিকনির্দেশনা প্রণয়নের জন্য প্রস্তাবিত “স্থায়ী শিক্ষা কমিশনের” বিষয়টি কোন অবস্থায় আছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা প্রকাশ করতে হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের অধিকার হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক একটি সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১৬ সালে একটি খসড়া আইন সবার মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশন ওয়াচের সমন্বয়ে নাগরিক সমাজের মতামত সংকলন করে আমরা তখন কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিলাম। এরপর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও আইনটির চূড়ান্ত রূপ আমরা এখনো দেখিনি।’
বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই সমন্বিত শিক্ষা আইন প্রণীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কাজী খলীকুজ্জমান। তিনি বলেন, ‘যথাযথ আইন প্রণীত না হলে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষা অধিকারের বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ও শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বর্তমান সরকার দ্রুত একটি ‘সমন্বিত শিক্ষা আইন’ প্রণয়ন করবে এটা আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে কী হচ্ছে, তা এখনো যেহেতু জানি না, তাই শিক্ষা আইন ও নীতি নিয়ে আমরা সরকারের সঙ্গে বসতে চাই। জনবান্ধব শিক্ষা আইন ও নীতি চাই। এই আইন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে প্রভাবিত করবে। তাই এটি চূড়ান্ত হওয়ার আগে সবার একসঙ্গে আবারও মতবিনিময় অত্যন্ত প্রয়োজন।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এডুকেশন ফর্মুলেশন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ, ব্লাস্টের সদস্য অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
Discussion about this post