শিক্ষার আলো ডেস্ক
শিক্ষার্থীদের যেকোনো দাবি বা যেকোনো আন্দোলনে প্রতিনিয়ত তালাবন্ধ করে দেওয়া হয় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ। এতে একদিকে যেমন বাধাগ্রস্ত হয় শিক্ষা কার্যক্রম অন্যদিকে ব্যাহত হয় দাফতরিক কাজও। শুধু শিক্ষার্থী নয়, দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একাধিকবার তালা মেরে আন্দোলন করেছেন। পাশাপাশি উপাচার্যের দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে দাপ্তরিক লোকসহ তালাবন্ধ করে রাখার প্রচলন দীর্ঘদিন ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চলে আসছে।
সম্প্রতি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালাবন্ধ করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে তারা ক্লাস রুমের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করে আসছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় এ ধরনের কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নীতিমালার ২.১১ ধারায় বলা হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে তাদের কর্মসূচির অধিকারকে বিশ্ববিদ্যালয় অস্বীকার করে না। তবে কোনো ছাত্র-ছাত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হুমকি চাপ প্রয়োগ ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে কোনো কর্মসূচিতে যোগদান বাধ্য করার উদ্যোগ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এছাড়াও কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচলে বাধাদান, শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের বাধাদান বা কোনো প্রকারের অবরোধ সৃষ্টি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথ, ভবনের বিভিন্ন দপ্তরে, পরিবহন দপ্তরে, গ্যারেজে, ফ্যাকাল্টি ভবনসমূহে বা অন্য কোনো দপ্তরে তালা লাগানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালাবন্ধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালাবন্ধ করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: ডেইলি বাংলাদেশ
এদিকে শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি আদায়ে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে অবস্থানকালে মাইক্রোফোন ও মুখে উচ্চস্বরে স্লোগান দিতে থাকে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্যক্রম ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের পরিবেশ বিনষ্ট করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় এ বিষয়টিও দণ্ডনীয় অপরাধ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
নীতিমালা ২.৪-এ বলা হয়, ক্লাস-পরীক্ষা শিক্ষা কার্যক্রম চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ভবনে পরিবেশ বিনষ্টকারী কোনো কাজ যথা- মাইক্রোফোন ব্যবহার, মিছিল করা, স্লোগান দেওয়া, শিক্ষার অনুকূল পরিবেশের পরিপন্থী এসব কাজ হতে বিরত থাকতে হবে। কেউ ব্যক্তিগত বা সাংগঠনিকভাবে এ নিয়ম ভঙ্গ করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে তালাবন্ধ করে আন্দোলনরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে দীর্ঘ পাঁচ বছর হয়ে গেলেও তারা আমাদের বিভাগের জন্য নির্দিষ্ট ক্লাসরুম নিশ্চিত করতে পারেনি। এজন্যই আমরা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো দাবি আদায়ে তালা মারার এক অপসংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এ বিষয়ে প্রচলিত নীতিমালা ও আইন আমার কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। আর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চলমান তালাবন্ধ অবস্থান কর্মসূচি সমাধানে আমরা আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
Discussion about this post