নিজস্ব প্রতিবেদক
ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (ইবাইস) ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেটসহ সকল কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধের সুপারিশ করায় ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০ জন শিক্ষকসহ মাত্র ২০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১২ সালে ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই তারা অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা চালু রয়েছে।
নিজেদের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য দাবি করে দুটি পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে। এরপর থেকেই তারা দুটি পৃথক এবং অবৈধ ক্যাম্পাস (ধানমন্ডি, উত্তরা) পরিচালনা করে আসছে, যদিও ধানমন্ডি ক্যাম্পাস সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউজিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে চ্যান্সেলর বা রাষ্ট্রপতির নিয়োগ দেয়া কোনো ব্যক্তি নেই।বর্তমানে কোনো পদেই আইনানুযায়ী বৈধভাবে কেউ নিয়োজিত নেই। ফলে বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈধ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টির সব কারিকুলাম মেয়াদোত্তীর্ণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ১৭ ও ১৯ অনুযায়ী বৈধ সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক, প্রশাসনিক, আর্থিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল এবং প্রদত্ত একাডেমিক সনদের আইনগত কোনো বৈধতা নেই।
এদিকে ইউজিসির এই সিদ্ধান্তে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে আমাদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। আর যদি বন্ধ করতেই হয় তবে সরকারের উচিত আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করা।’
ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ছয়টি বিভাগের অধীনে কমপক্ষে চার হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করে বেরিয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বৈধ প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকার অনুমোদিত পাঠ্যসূচিও ছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনে ইউজিসি জানায়, ইবাইস বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১০ অনুসরণ করেনি এবং এটি সার্টিফিকেট ব্যবসাসহ বহু অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
ইউজিসি জানতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো বৈধ ঠিকানা, কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলতে থাকলে অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ধ্বংস হবে।বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি না করাতে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে একটি জনবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুক বলেন, কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রতিবেদনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
ইউজিসি সূত্র জানায়, ইবাইস ইউনিভার্সিটি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পাঁচ বছরের জন্য অস্থায়ী সনদ পায়। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট-২০১০ অনুযায়ী, কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাথমিকভাবে তাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অস্থায়ী অনুমোদন দেওয়া হয়।
অস্থায়ী অনুমোদন পাওয়ার সাত বছরের মধ্যে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকতে হবে এবং অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর জন্য অন্যান্য শর্ত পূরণ করতে হবে। অন্যথায়, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করাসহ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু ইবাইস ইউনিভার্সিটি গ্রেস পিরিয়ড বা স্থায়ী সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করেনি।
ইউজিসি পরিচালক ওমর ফারুক বলেন, ‘মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বদলি হতে পারবে। আমরা শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে সবকিছু করব।’
২০১০ সালে সরকার ‘সার্টিফিকেট ব্যবসা’, মালিকানা বিরোধ এবং অন্যান্য অনেক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হকের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করে।
২০১৩ সালে কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করার সুপারিশ করে। ২০১৪ সালে ইউজিসি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে ছাত্র ও অভিভাবকদের সতর্ক করে।
Discussion about this post