নিজস্ব প্রতিবেদক
বুয়েটে সব ধরনের সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেওয়ার শপথ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আবরার ফাহাদের তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে বুয়েট অডিটোরিয়ামের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এই গণশপথ অনুষ্ঠিত হয়।
শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শুরু হয় গত শুক্রবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায়। শপথগ্রহণ পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী সুহাস আব্দুল্লাহ।
শপথে সকলের কল্যাণ ও নিরাপত্তার জন্য অর্পিত দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করার, বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় হওয়া প্রতিটি অন্যায়-অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে সম্মিলিতভাবে রুখে দেওয়ার, নৈতিকতার সাথে অসামঞ্জসতাপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার সমূলে উৎপাটিত করার এবং কেও যেন অত্যাচারের শিকার না হয় তা সবাই মিলে নিশ্চিত করার শপথ গ্রহণ করেন।
এই আঙিনায় আর যেন কোনও নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়। আর কোনও নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন অত্যাচারের শিকার না হয়। তা সবাই মিলে নিশ্চিত করার অংগীকার করা হয়।বুকে হাত রেখে দাঁড়িয়ে সবাই শপথ নেন।
শপথ অনুষ্ঠানের আগে প্রথমে আবরারের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শপথগ্রহণ শুরু হয়।
গত ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নৃশংসভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডের তিন বছরেও শেষ হয়নি বিচারকাজ।
এরপর থেকেই আবরার হত্যার বিচার চেয়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ১০ দফা দাবিতে চলা আন্দোলনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কয়েকটি দাবি পুরণের ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ২০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের সবাইকে সাময়িক বহিস্কার করে বুয়েট প্রশাসন।অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া মামলাটিতে ঢাকার বিচারিক আদালতে রায় হয় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর। এতে বিচারক ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে বিচারিক কার্যক্রম এখন েশেষ হয়নি।
অনুষ্ঠানে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, বুয়েটের সকল শিক্ষার্থীকে বাবা-মা অনেক আশা-ভরসা করে লেখাপড়ার জন্য পাঠান৷ সকল শিক্ষার্থীই মেধাবী এবং তারা উন্নত মানসিকতা নিয়ে ক্যাম্পাসে পা ফেলে। কিন্তু এখানে এসে ভিন্ন পরিবেশের কারণে তারা খারাপ হয়ে যায়। আমার অনুরোধ থাকবে আমার ছেলের মতো আর কারো সাথে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। কারো মায়ের বুক যেন খালি না হয় !
Discussion about this post