মাজহারুল ইসলাম শামীম
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ ফেনী সরকারি কলেজ। ১৯২২ সালের ৮ আগস্ট ফেনী কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। দক্ষিণ পূর্ব বাংলায় ৪টি কলেজের মধ্যে একটি।
এটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯২২ সালের ৮ আগস্ট ফেনী কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও কলেজ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর।
কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ফেনী হাই ইংলিশ স্কুল (বর্তমানে সরকারী পাইলট হাই স্কুল) এর সেক্রেটারি রমনী মোহন গোস্বামীর কাছ থেকে ১৯১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রেজুলেশনের মাধ্যমে অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে ফেনী ও বিরিঞ্চি মৌজায় কলেজ বোর্ড অব ট্রাষ্টিগণের পক্ষে খান বাহাদুর মৌলভী বজলুল হক ও গুরুদাস কর ১০০ টাকা ৪ কিস্তিতে পরিষদের শর্তে ৫ বিঘা ১৮ কাঠা ভূমি গ্রহণ করেন।ভূমি বুঝে পাওয়ার পর কলেজ কম্পাউন্ড ও হিন্দু-মুসলিম হোস্টেল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে কলেজ প্রতিষ্ঠার সার্বিক কার্যক্রম এগুতে থাকে।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অধ্যক্ষ ছিলেন বিরেন্দ্র লাল ভট্টাচার্য। ১৯২৬ সালে অবিভক্ত বাংলার গভর্নর স্যার ল্যান্ডস হিউ ষ্টিভেনশন আই.সি.এস, সি আই.এস বর্তমান লাল দালানটি উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬০-৬১ সালের দিকে কলেজের ডিগ্রী শাখা স্থানান্তরের জন্য ৯০নং ফলেশ্বর মৌজায় প্রায় ৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। উক্ত অধীগ্রহণকৃত ভূমিতে বর্তমানে কলেজের একটি ছাত্রাবাস রয়েছে।
১৯৪৫ সালে কলেজে দুইটি বিষয়ে অনার্স ছিল এবং দুর্লভ বই সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে অনার্স বিষয় দুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে সে স্থানে গড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিভিন্ন কারণে সে অনার্স বিষয় দুটি আর ফেরত আনা যায়নি। ১৯৭৯ সালের ৭ মে কলেজটি জাতীয়করণ অর্থাৎ সরকারি কলেজ হিসাবে অধিভুক্ত করা হয়। তখন কলেজের অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত ছিলেন মজিবুর রহমান। বর্তমানে প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীঠে ১৫ বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ পর্ব এবং ১০ বিষয়ে মাস্টার্স ১ম পর্ব চালু আছে। তবে ২২ হাজার শিক্ষার্থী অনুপাতে ১৮০ জন শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল এই কলেজে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৭২ জন শিক্ষক রয়েছে সব ডিপার্টমেন্ট মিলে।
এদিকে ফেনী সরকারি কলেজের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে গত ৩ আগস্ট এক সভায় শতবর্ষ পূর্তি উদযাপন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। সভায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মোতালেবকে আহ্বায়ক ও ফেনী সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের বর্তমান সহকারী অধ্যাপক হাবিবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। যাদের মাধ্যমে শত বর্ষ উৎযাপন সম্পূর্ণ হবে।
শত বর্ষ নিয়ে উদযাপন কমিটি এবং কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সবাই অনেক রকম পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট থেকে ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে রঙিন সব আয়োজনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই শত বর্ষ উৎযাপনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন মেধা-ভিত্তিক শিক্ষা-সহায়ক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেটি শতবর্ষ উৎযাপনকে স্মরণীয় করে রাখবে। এ ছাড়াও পুরো কলেজ ক্যাম্পাস রঙিন সাজে সজ্জিত করার জন্য ও সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি ভৌগোলিকভাবে ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, আশেপাশে এত পুরানো বৃহৎ সরকারি কলেজ নেই। এই কলেজে চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি জেলার ও শিক্ষার্থীরা এসে পড়াশোনা করে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার শিক্ষার্থীরা ও পড়াশোনা করে এই কলেজে। এদিকে নোয়াখালী এবং কুমিল্লা জেলার ও অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে এই ঐতিহ্যবাহী কলেজে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কলেজ।
মাজহারুল ইসলাম শামীম, শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।
Discussion about this post