নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়েছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ করে দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ও মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে।
পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) এর নেতৃত্বে শোক র্যালি চবি শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বর থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। অতঃপর মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে চবি উপাচার্য দপ্তরের সভাকক্ষে “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের তাৎপর্য” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর বেনু কুমার দে। চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসানের সভাপতিত্বে এবং চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক। আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল মনছুর, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, চবি মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর আবদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. সজীব কুমার ঘোষ, জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. এ কে এম রেজাউর রহমান এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. নাজনীন নাহার ইসলাম।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যবর্গ, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লক্ষ বীর বাঙালি এবং শহীদ জাতীয় চারনেতাকে বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বলেন, একটি জাতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে বুদ্ধিজীবীদের অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হয়েনার দল পরাজয় নিশ্চিত জেনে জাতিকে মেধাশূণ্য করার অসৎ উদ্দেশ্যে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। যে উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তাতে তারা সফল হতে পারেনি; পক্ষান্তরে তারা নিজেরাই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
অনুষ্ঠান শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন চবি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব অরূপ বড়ুয়া এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জনাব জেসী ডেইজী মারাক। অনুষ্ঠানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দ, অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, চবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত, দুপুর ১২:০০ টায় চবি কেন্দ্রীয় মন্দিরে গীতাপাঠ ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার চিরশান্তি ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার সদগতি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়।
Discussion about this post