শিক্ষার আলো ডেস্ক
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে ২০২২ সালের ১লা জুলাই থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চালু করা হয়েছিল স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প। এ বিমা কার্যকর হওয়ার পর থেকে এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৮১৬ জন শিক্ষার্থী সর্বমোট ৪১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১ টাকা সুবিধা পেয়েছেন। এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর ফাইল। যার অর্থের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।বিমা চলাকালে মৃত্যু হওয়ায় সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পেয়েছে ফলিত গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীর পরিবার। এছাড়াও দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা পর্যন্ত এ সুবিধা পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দুই বছর মেয়াদী স্বাস্থ্য বিমার চুক্তি প্রক্রিয়া শুরু করে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। বাৎসরিক ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে একজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে (৩ মাসে ৪ বার) ৮০ হাজার টাকা ও বহির্বিভাগে (একদিনের হলেও প্রযোজ্য) ২০ হাজার টাকা পাবেন। এছাড়া প্রতিমাসে একাধিকবার কনসালটেন্সি ফি, মেডিকেল ফি, প্যাথলজি ফি ইত্যাদি বাবদ এ অর্থ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিমা চলাকালে মৃত্যু হলে সেই শিক্ষার্থী ২ লাখ টাকা পাবেন।
অপরদিকে, বিমা সংক্রান্ত পরামর্শ এবং বিষয়গুলো তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সেল নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে এই বিমা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিমা অনলাইন সিস্টেম হওয়ায় একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ru.ac.bd প্রবেশ করলেই নিচে student insurance দেখাবে। সেখানে ক্লিক করলে শিক্ষার্থীর আইডি নং ও রেজিস্ট্রেশন নং দিলেই তার প্রোফাইল চলে আসবে। সেখানে ফরম পূরণ করে সাবমিট করলে ফরম পেয়ে যাবে বিমা কোম্পানি। যদি ফরমে ভুল তথ্য না থাকে তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে ওই শিক্ষার্থীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিমার টাকা চলে আসে। তবে বিমা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো শিক্ষার্থী রোগে আক্রান্ত হলে তারাই শুধু এই সুবিধার আওতায় আসবেন।
স্বাস্থ্য বিমা থেকে ৬৭ হাজার ৫শ টাকা সুবিধা পেয়েছন একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি একটি জটিল রোগের কারণে প্রায় ৪ মাস অসুস্থ ছিলাম। আমার সুস্থ হতে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বিমা থেকে আমি সুবিধা পেয়ে অনেক উপকৃত হয়েছি। তবে টাকা পেতে আমার অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। স্বাস্থ্য বিমায় যে জটিলতা রয়েছে তা যদি কিছুটা কমিয়ে আনা হয় তাহলে আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের আরো বেশি উপকার হবে।
এই বিষয়ে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডেপুটি ভাইস প্রেসিডেন্ট) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন ১৫-২০টি ক্লেইম জমা পড়ছে। ফলে আমাদেরকেও এ চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু এ বিমা অনলাইন সিস্টেমের আওতায় ফলে রাতেও আমাদের বাসায় কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের কিন্তু আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।
এ সুবিধা পেতে অতিরিক্ত সময় নেওয়ার কারণ নিয়ে তিনি বলেন, অনেক শিক্ষার্থী অসম্পূর্ণ কাগজপত্র দেওয়ায় দাবি (ক্লেইম) পরিশোধে সময় লাগছে। এদিকে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো ভালো করে জানে না। নিজের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার না দিয়ে অন্যের একাউন্ট দিচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পিডিএফ ফাইল প্রদান করে থাকে কিন্তু আমাদের পিডিএফ ফাইল গ্রহণযোগ্য নয়। এগুলোর জন্য অনেক সময় কিছুটা সময় লাগে। তবে সময় কমিয়ে আনার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছি।
স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে সুস্থ থেকে ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করবে এটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একমাত্র প্রত্যাশা। তবে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে অসুস্থ হতে পারে। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী হঠাৎ করে অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করা পরিবারের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বিমা চালু হওয়ায় পর থেকে এসব শিক্ষার্থী এ সুবিধার আওতায় এসে অনেক উপকৃত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী জটিল রোগে আক্রান্ত তাদেরকেও দ্রুত এ সুবিধার আওতায় আসার আহ্বান জানান তিনি।
Discussion about this post