নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)। সংশ্লিষ্টদেরকে দেওয়া এক চিঠিতে মাধ্যমিক পর্যায়ে অষ্টম, নবম ও দশম, উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার নেওয়ার জন্য আগামী ৪ মের মধ্যে পাঁচটি প্রশ্ন সম্বলিত প্রশ্নপত্র তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশুনায় সংযুক্ত রাখতে ও তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের অগ্রগতি যাচাইয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের বাড়ি গিয়ে সিলেবাস পৌঁছানো, প্রশ্ন দিয়ে বসে থেকে পরীক্ষা নেওয়া, পরে আবার খাতার মূল্যায়ন করে জানানোর কাজটি অসম্ভব হয়ে পড়বে। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চালু রাখতে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা চিন্তা করারও দাবি তোলেন তারা।
গত ২৭ এপ্রিল ইউএনও নাজমা আশরাফী স্বাক্ষরিত নির্দেশনা পত্রে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রমের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন কারণের নাসিরনগরের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারছে না। একই সঙ্গে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবিমুখ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশুনায় সংযুক্ত রাখার লক্ষে অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ের উপর সিলেবাস অনুযায়ী বিষয় ভিত্তিক পাঁচটি প্রশ্ন করে একটি প্রশ্নপত্র করে প্রণয়ন করতে হবে। পরবর্তীতে এই প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তাদের ঘরে বসে পরীক্ষা নিতে হবে এবং ১৪ দিন পর খাতা সংগ্রহ করে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে ৪ মের মধ্যে প্রশ্নপত্র দেওয়ার জন্য বলা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা চালু রাখতে উদ্যোগ নেওয়ার বিয়ষটি ভালো। কিন্তু এভাবে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন মোটেও সম্ভব নয়। এ ছাড়া আমি কারো বাড়িতে করোনা নিয়ে গেলাম নাকি কারো বাড়ি থেকে করোনা নিয়ে এলাম এর গ্যারান্টিকে দিবে। আমার মনে হয় বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান গিলমান বলেন, ‘এ ধরণের নির্দেশনার একটি চিঠি পেয়েছি। আগামী ৪ মে আমাদেরকে নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। হয়তো ওই সভায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তখন হয়তো বিকল্প প্রস্তাবও উঠতে পারে।’
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, শিক্ষার হারের দিক থেকে এমনিতেই নাসিরনগর পিছিয়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ করে তুলতে ইউএনও মহোদয় এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে ঘরে বসে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি শিক্ষকরা ভুল বুঝছেন। আগামী ৪ মে এ বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।’
ইউএনও নাজমা আশরাফী বলেন, ‘আমি অন্তত ১০ জন ভালো শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা এমন ভালো উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন তারা ফাঁকিবাজ। খোঁজ নিলে দেখতে পারবেন তারা এলাকায় নেই। আর ঘরে বসে পরীক্ষা নিতে হবে কি-না সেটা তো সভাতেও আলোচনা করা হতে পারে। আমি বলতে চাই শিক্ষকরা প্রশ্নপত্র দিয়ে আসার পর শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই পরীক্ষা দেবে। শিক্ষকদের বসে থাকতে হবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের মতামতও নেওয়া হবে।’
Discussion about this post