শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘ILET’s research and development (R & D) innovations for the leather tanning process and solid waste management’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকে যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, শিল্প মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সর্ম্পক আরও জোরদারের মাধ্যমে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে দেশের চামড়া খাতকে অনন্য উচ্চতায় নেয়া সম্ভব হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং দি এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই সেমিনার আয়োজন করে।
সেমিনারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান, এনডিসি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। দি এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ স্বাগত বক্তব্য দেন।
আইলেটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল গবেষক নতুন এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এই আবিষ্কার সফলভাবে প্রয়োগ হলে বাংলাদেশে চামড়া শিল্পের চিত্র পাল্টে দেবে বলে মনে করেন তারা।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে রপ্তানি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এ শিল্প খাতে রপ্তানি হ্রাস পাওয়ার মূল কারণ হলো বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো আন্তর্জাতিক পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স সনদ (এলডব্লিউজি) প্রাপ্ত নয়। এ সনদ প্রাপ্তির পথে মূলবাধা হলো পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করা, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব।
‘ট্যানারি শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ২০২১ সাল থেকে আমরা পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করেছি। উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে প্রস্তুতকৃত ফিনিশড লেদার দিয়ে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অধিকতর গুণগত মানসম্পন্ন চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এ পদ্ধতিটি গবেষণাগারে সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর প্রগতি ট্যানারিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলেও প্রয়োগ ইতোমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের এক নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এই প্রযুক্তিতে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ৩০ ভাগ কমিয়ে স্বল্প খরচে উদ্ভাবিত এনজাইম ব্যবহার করে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অধিকতর গুণগত মান সম্পন্ন ফিনিশড লেদার উৎপাদন করা সম্ভব।
এছাড়া, উদ্ভাবিত এই এনজাইম ব্যবহার করে আনট্যানড কঠিন বর্জ্য থেকে কম খরচে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বায়োডিজেল এবং জৈব সার প্রস্তুত করা যায়। যা দেশের নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস হতে পারে। উপাচার্য এই উদ্ভাবনের বাণিজ্যিকীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাগুলো দূর করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই উদ্ভাবন ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গবেষণায় অর্থায়ন করার জন্য উপাচার্য শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি ইতোমধ্যে প্রগতি ট্যানারিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলেও সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তিটি বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে পেটেন্ট অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা গেলে পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস এবং সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। ফলে বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো আন্তর্জার্তিক পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স সনদ লাভে সক্ষম হবে এবং দেশের চামড়া শিল্প খাত থেকে রপ্তানি আয় বাড়বে।
Discussion about this post