আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় মাস। আটকে গেছে বিদ্যালয়-গুলোর মডেল টেস্ট। এ পরিস্থিতিতে বিশেষ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক। এই শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের বাড়িতে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিয়েছেন। নিজ দায়িত্বে ঘড়ি ধরে বাড়িতে বসে ওই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার (৫ মে) রাত থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই পরীক্ষা দেওয়া শুরু হয়েছে। যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, বাচ্চারা যেন বই দেখে না লিখে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে, এ জন্য তাঁরা নিজেরাই পাহারা দিয়েছেন।
এই শিক্ষকের নাম মো. ফারুক হোসেন। তিনি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, নবম-দশম শ্রেণির ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং হিসাববিজ্ঞান পড়ান। এসব বিষয়ের মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১২০ জন। তিনি প্রাথমিকভাবে অষ্টম শ্রেণির বাংলা পরীক্ষা নিয়েছেন। এই শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৮। তারা সবাই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আজ শুক্রবার ৬৮ জনের পরীক্ষা শেষে এই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাসা থেকে উত্তরপত্র সংগ্রহ করবেন।
পর্যায়ক্রমে তিনি অন্যান্য শ্রেণির পরীক্ষাও নেবেন। তবে কোনো ফি নিচ্ছেন না। শিক্ষক ফারুক হোসেন যেসব শিক্ষার্থীকে ফোনে পেয়েছেন তাদের বাসায় প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিয়েছেন। আর যাদের ফোনে পাননি তাদের অন্যদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিয়েছেন। এই শিক্ষক নিজে ৩৫ জনের বাসায় গিয়ে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিয়েছেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নগরের সিপাইপাড়া এলাকার অভিভাবক ডেইজি বেগম বলেন, বুধবার সকাল আটটা থেকে তিনি তাঁর মেয়ের হাতে ঘড়ি দিয়ে পরীক্ষায় বসিয়ে দিয়েছিলেন। সে যাতে ফাঁকি না দিতে পারে, সে জন্য পরীক্ষার তিন ঘণ্টা সময় তিনি পাশে বসে ছিলেন। ডেইজি বেগম বলেন, মেয়ে একটু আপত্তি করছিল, অন্যরা যদি বই দেখে বা বেশি সময় নিয়ে পরীক্ষা দেয় তাহলে ওরা বেশি নম্বর পাবে। এ কথার জবাবে তিনি মেয়েকে বলেছেন, সত্যের জয় সব সময় হয়। সুতরাং তুমি সৎভাবে পরীক্ষা দেবে, এটাই বড় কথা।
লক্ষ্মীপুর এলাকার অভিভাবক মামুন হোসেন বলেন, এটা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থী পড়াশোনা থেকে দূরে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে তারা মুখস্থ করা পড়াটাও ভুলে যাবে। ফলে পরীক্ষাটা যেভাবেই নেওয়া হোক, ওরা একটু পড়াশোনার ভেতরে ঢুকবে। অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকেরাও যদি এই উদ্যোগ নেন, তাহলে ভালো হয়।
নগরের ভাটাপাড়া এলাকার অভিভাবক হাবিবা খাতুন বলেন, তাঁর মেয়ে তিন ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা শেষ করেছে। তিনি ঘড়ি ধরে বসে ছিলেন। এখন স্যার এসে খাতা নিয়ে যাবেন।
এই উদ্যোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিবেকের তাড়নায় তিনি কাজটি করছেন। বিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। নিজেরা ঘরে বসে থেকে হয়তো পড়াশোনার অতটা তাগিদ বোধ করছে না। এই সময়ে ওদের মডেল টেস্ট হয়ে যাওয়ার কথা। এই পরীক্ষা উপলক্ষে পেছনের পড়াগুলো ওরা একটু ঝালিয়ে নেবে। এর মাধ্যমে ওদের সততার পরীক্ষাটাও হয়ে যাবে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইরিন জাফর বলেন, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। ফারুক হোসেন যেটা নিজ দায়িত্বে করছেন, তিনি আশা করছেন বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকেরা এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের একটু এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।সৌজন্যে-প্রথম আলো
Discussion about this post