নিজস্ব প্রতিবেদক
ইউজিসির নির্দেশনা মেনে গত ৬ জুন থেকে অনলাইনে নেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। এখন অনলাইন পরীক্ষা গ্রহণ করছে যাতে শিক্ষার্থীদের সেশনজট কাটাতে পারে। আইআইইউসির চলমান অনলাইন পরীক্ষায় কেমন অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
কুরানিক সাইন্সেস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে ফারিহা সুলতানা। বলছেন, অনলাইন পরীক্ষা যা নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমধর্মী একটি পরীক্ষা। কখনও কল্পনাও করিনি জীবনে এমন একটি পরীক্ষার সাক্ষী হবো। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানাবো যদি তারা এই ধরনের পরীক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটু হলেও ছাড় দেয়ার মানসিকতা রাখে। কারণ যেসকল শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে তারা প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ভালোভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না।
আর সবচাইতে বড় কথা হলো করোনা পরিস্থিতির জন্য যখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হলো তখন আমরা শীট, নোট, বই কিছুই আনতে পারিনি। আর আনবই বা কি করে? কল্পনাও করতে পারিনি এতো লম্বা সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া থাকতে হবে। যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ক্যারিয়ার তথা সার্বিক দিক বিবেচনা করে অনলাইনে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যা আমরা প্রাথমিকভাবে বিচলিত হলেও এখন ভালো লাগছে এবং উপভোগ করছি।
মোহাম্মাদ মাক্কী, পড়ছেন দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে। অনলাইন ভিত্তিক পরীক্ষার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক দেখছেন তিনি। বলছেন, ইউজিসির নির্দেশনায় অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যা ভালো লাগার দিক। এখন একদিকে এটি ইতিবাচক, কারণ এর ফলে সেশন জট এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব এবং আইআইইউসি এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে যদি টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে কোনো ছাত্র-ছাত্রী যদি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে পরবর্তীতে কোনো লেইট ফি ছাড়া সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, অপর পক্ষে নেতিবাচক বেশ কিছু দিক রয়েছে। প্রথমত এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে মেরিট কাউন্ট করা কিংবা ছাত্রদের মূল্যায়ন করা যথার্থভাবে হচ্ছে না। পাশাপাশি দেশের আনাচে কানাচে বর্তমানে অবস্থানরত অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যাদের নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট ডাটা প্রাপ্তিতে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। সর্বোপরি করোনার এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ভাবেই সকলেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে।
করোনা সংকটে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আইন অনুষদের শিক্ষার্থী ফয়সাল বিন ফারুকি বলছেন, করোনা সংকটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিকল্প পদ্ধতিতে পরীক্ষা দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানায়। তবে বিকল্পভাবে পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমরা নিয়মিতই ভোগান্তির শিকার হচ্ছি অনেকেই। আমাদের অনেকের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ভালো মানের নেই, অনেকে লকডাউনের আগেই গ্রামে চলে যাওয়াতে বইপত্র নোট শীট কিছুই নিয়ে যেতে পারে নাই। ফলে তারা ভালো মানের এসাইনমেন্ট জমা দিতে পারছে না। আবার অনেকের গ্রাম নেটওয়ার্কে সমৃদ্ধ না, তারা ভাইবার ১০ মার্কসে জুম কলে কিছুই বুঝে না। ফলে উত্তর করতে পারে না। এসব বিষয় গুলো আমাদের স্যাররা যদি বিবেচনা না করে নিঃসন্দেহে অনেকেই অন্যায়ের শিকার হবে।
ইকোনমিক্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান বলছেন, ছাত্র জীবনে যত পরীক্ষা দিয়েছি তার থেকে ভার্সিটির চলতি সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা একেবারে ব্যতিক্রম। কারণ পরীক্ষা হবে অনলাইনে। সব মিলিয়ে নিজের মাথার মধ্যে পাহাড় সমান চিন্তা এসে বিরাজ করলো পরীক্ষাটা কেমন হবে? প্রশ্ন কেমন হবে? স্যারেরা বিবেচনা করবে কিনা? এইসকল বিষয় চিন্তা করতে করতে পরীক্ষাটা নাকের ডগায় চলেই আসলো।
অনলাইনে ৪০ নম্বরের রিটেন পরীক্ষা এবং ভাইভা দিতে হয়েছে ১০ নম্বরের। প্রথম দিকে ভেবেছিলাম যত কঠিন প্রশ্নই করুক না কেনো স্যারেরা, আমরা বই দেখে, গুগল বা উইকিপিডিয়া করে উত্তর খুজে ভালোই দিবো। কিন্তু ঘটলো পুরো চিন্তার বিপরীতটা। ইংলিশের প্রশ্নপত্র মেইল পেয়ে তো একদম যা-তা অবস্থা। স্যারদের মাথার কাছে গুগল বলেন আর উইকিপিডিয়া বলেন সব ব্যর্থ। এতো কঠিন প্রশ্ন ছিল তবে আত্মবিশ্বাস হারাইনি।
আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরীক্ষার এসাইনমেন্ট করেছি এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। ভয়টা যেমন ছিল, ভালো লাগাটাও ছিল। কারণ এই প্রথম এমন এসাইনমেন্টের মাধ্যমে পরীক্ষা দিচ্ছি। একে একে ৩টি বিষয় পরীক্ষা দিয়ে দিলাম। বেশ মজার ছিল বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে একজন আরেকজনকে হেল্প করে ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে খুব ভালোই ৩টি বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন করলাম। তারপর ভাইভার বিষয়টাও বেশ মজার ছিল। স্যারেরা খুব একটা কঠিন প্রশ্ন করতেন না। ভিডিও কলের মাধ্যমে ভাইভা নেয়া হতো। অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার অনুভূতিগুলো এক কথায় অন্যরকম।
প্রথম অনলাইনে পরীক্ষা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে অনলাইন পরীক্ষা গ্রহন করছি। যাতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। তবে প্রযুক্তিগত কিছু সমস্যা হলেও সেটা কাটিয়ে উঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
Discussion about this post