নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগে প্রথম ওয়েবিনার অনলাইন প্লাটফরমে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়েবিনারে প্যানেলিস্ট ছিলেন কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন।
বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী ওয়েবিনারের সভাপতি ও উদ্বোধক ছিলেন। ওয়েবিনারে প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম কৃষিখাতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের ভূমিকা এবং কৃষিঋণের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তাঁর আলোচনায় কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় সরকার প্রদত্ত কৃষিখাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজটি প্রশংসিত হয়। এছাড়াও কৃষিখাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার স্বল্পমেয়াদে বেকারত্ব তৈরি করলেও দীর্ঘ মেয়াদে তা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটায় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে অর্থনীতির বিভিন্ন নীতি নির্ধারণে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ বিবেচনা করার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিতে করোনার প্রভাবকে স্বল্পমেয়াদে এবং দীর্ঘ মেয়াদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদে লকডাউনের প্রভাবে কৃষিপণ্যের পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে supply chain disruption হয়েছে।
অন্যদিকে Demand side uncertainty প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯-এর কারণে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য মজুদ করায় কৃষিপণ্যের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে, যার ফলে পণ্যের মূল্যও হ্রাস পেয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন পরিবারভিত্তিক শ্রমের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ অত্যন্ত কম। তাই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুনরায় অংশগ্রহণ করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই। সুতরাং কোভিড-১৯-এর কারণে স্বল্পমেয়াদে কৃষি অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এই খাতের উৎপাদনে তেমন কোন সমস্যা দেখা দেবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রভাষক অর্পিতা দত্তের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রভাষক সুদীপ দে Agriculture, Fisheries & Covid-19: The case of Bangladesh শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে কৃষিখাতে উৎপাদিত পণ্যসমূহের মূল্যহ্রাস পাওয়া এবং সারাদেশে supply chain -এর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে এই প্রবন্ধে আলোকপাত করা হয়।
এছাড়াও করোনার এই সঙ্কটকালে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ, যেমন, খাদ্য-শস্যের যথোপযুক্ত মজুদ নিশ্চিতকরণ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে খাদ্য-শস্য বিতরণ এবং কৃষকদের মাঝে ফসল সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণে বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
ওয়েবিনারের প্রশ্নোত্তর পর্বে ছাত্রছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। এই পর্বে প্যানেলিস্টদ্বয় বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী ওয়েবিনারটির উদ্বোধনকালে বলেন, কৃষিখাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম একটি স্তম্ভ। কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবেলায় এই খাত আমাদের অর্থনীতির জন্য ঢাল স্বরূপ ভূমিকা পালন করছে। এই সংকটকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কৃষিপণ্যের রপ্তানির বহুমুখীকরণের উপর জোর দিতে হবে। তিনি কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবেলায় এবং সাম্প্রতিক সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ থেকে কৃষিখাতকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সময় উপযোগী এবং দূরদর্শী ভূমিকার প্রশংসা করেন।
শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ফারজানা ইয়াসমিন চৌধুরী।
Discussion about this post