শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ (৫ আগস্ট) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেনের ৮১তম জন্মদিন ।
১৯৪০ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম মহানগরে জন্মগ্রহণ করেন ড.অনুপম সেন।
পিতা বীরেন্দ্রলাল সেন ও মাতা স্নেহলতা সেন। গ্রামের বাড়ি পটিয়ার ধলঘাটে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে সমাজতত্ত্বে স্নাতক ও ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সমাজতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি এবং ১৯৭৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাশ ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রাউটলেজ অ্যান্ড কেগানপল থেকে গ্রন্থটি ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরমধ্যে কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়; সুইডেনের টিনবারজেন বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে ১ম নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত টিনবারজেনের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়), ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান, উন্নয়ন অর্থনীতি (ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স) ও রাষ্ট্র্রবিজ্ঞানের পাঠ্যতালিকায় গ্রন্থটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রফেসর সেন ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমান বুয়েটে) সমাজতত্ত্ব ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে এবং ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৭৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা সহায়ক ও টিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে পুনরায় যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালের জুন থেকে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি এ বিভাগে অধ্যাপক পদে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৬ সালে উমা সেনগুপ্তার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ড. অনুপম সেন। উমা সেনগুপ্তা গত ১১ মে দিবাগত রাত ১টা ১ মিনিটে শহরের কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারের বাসায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম ইন্দ্রানী সেন গুহ। বর্তমানে ড. সেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবদান রাখায় বিভিন্ন সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ড. অনুপম সেন। শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
প্রফেসর ড. অনুপম সেন পিএইচডি বিষয়ক গ্রন্থ ‘দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাশ ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’ ছাড়াও অনেকগুলো গ্রন্থের রচয়িতা। এরমধ্যে দি পলিটিক্যাল এলিটস অফ পাকিস্তান অ্যান্ড আদার স্যোশিওলজিক্যাল এসেস (১৯৮২, অমর প্রকাশন, দিল্লি), বাংলাদেশ: রাষ্ট্র ও সমাজ, সামাজিক অর্থনীতির স্বরূপ (১৯৮৮), বাংলাদেশ ও বাঙালি রেনেসাঁস: স্বাধীনতা চিন্তা ও আত্মানুসন্ধান (২০০২), বিলসিত শব্দগুচ্ছ (২০০২), ব্যক্তি ও রাষ্ট্র: সমাজ-বিন্যাস ও সমাজ-দর্শনের আলোকে (২০০৭), কবি শশাঙ্কমোহন সেন (২০০৭), সমাজ, সংস্কৃতি, সাহিত্য: নানা কথা, নানা ভাবনা, নানা অর্ঘ্য (২০০৭), সুন্দরের বিচার সভাতে (২০০৮), আদি-অন্ত বাঙালি, বাঙালি সত্তার ভূত-ভবিষ্যত (২০১১), বাংলাদেশ: ভাবাদর্শগত ভিত্তি ও মুক্তির স্বপ্ন (২০১১), জীবনের পথে প্রান্তরে (২০১১), বাঙালি-মনন, বাঙালি সংস্কৃতি, সাতটি বক্তৃতা (২০১৪), ইতিহাসে অবিনশ্বর (২০১৬) ও বিচিত্র ভাবনা (২০১৭) প্রভৃতি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য।
Discussion about this post