নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা বহুমাত্রিক গুণের আধারব্যক্তিত্ব উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, টেকসই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্যে সব গুণীনের যথাযথ মূল্যায়ন জরুরি। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথ ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে নারীসমাজের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। আজ সব ক্ষেত্রেই নারীসমাজ অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন। কিন্তু তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন হলে দেশ আরো দ্রুত এগিয়ে যাবে। জন্ম নেবে শিক্ষাবিদ প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়ার মতো গুণীজনরা। এ ব্যাপারে সমাজ ও রাষ্ট্রের নৈর্ব্যক্তিক ভূমিকা ও দায়িত্বশীলতা দরকার।
বুধবার (২২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলার ‘বেগম রোকেয়া পদক-২১’ প্রাপ্তিতে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
পমার নির্বাহী সভাপতি আমিনুর রশীদ কাদেরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্ত্তী, শিক্ষাবিদ ড. আনোয়োরা আলম ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।
পমার যুগ্মসম্পাদক অধ্যক্ষ বদরুল হাসান টিটু ও দিলরুবা খানম ছুটির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আবসার মাহফুজ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ জাকারিয়া, লায়ন জাহাঙ্গীর মিঞা, চবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, চবি আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মদ নুর হোসাইন, অ্যাকশন এইড’র থাইল্যন্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর তৌহিদ ইবনে ফরিদ, কাজী গোলাপ রহমান, অধ্যাপক শামসুদ্দিন শিশির, নারীনেত্রী রেহেনা চৌধুরী, নজরুল গবেষক ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, অধ্যাপক আবু তালেব বেলাল, কলামিস্ট মুহাম্মদ মুসা খান, কলামিস্ট এ কে জাহেদ চৌধুরী, গ্রিন অ্যালয়েন্স বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী সাংবাদিক সরোয়ার আমিন বাবু, প্রফেসর সুপ্রতীম বড়ুয়া, প্রাণ-প্রকৃতি সম্পাদক শারুদ নিজাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক শওকত বাঙালি, রাজনীতিক রেজাউল করিম ভুট্টো, স্বাধীন সাংস্কৃতিক একাডেমির চেয়ারম্যান হৃদয় হাসান বাবু, অধ্যক্ষ অর্পিতা নারগিস, রেজাউল করিম বাবলু, আবুল কালাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, শিক্ষাবিস্তার, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের চর্চা ও প্রসার, প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষার আন্দোলন গতিশীল করাসহ নানাক্ষেত্রেই রয়েছে তার অসামান্য অবদান। কিন্তু তিনি এক নিভৃতচারী প্রচারবিমুখ মানুষ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী এই গুণীনের জন্ম দেশের এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে। যে পরিবার শিক্ষা-সংস্কৃতি, মুক্তচিন্তা আর অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন এই জনপদের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাইলে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, অবশ্যই সোনার মানুষ তৈরি করতে হবে। আর এ জন্যে সুশিক্ষার বিস্তারে সুশিক্ষিত মানুষ তৈরি করতে হবে, যারা দেশকে ভালোবাসবে, দেশের মানুষকে ভালোবাসবে, জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে আত্মনিবেদিত হবে। এমন চিন্তা-ভাবনা থেকেই তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে একজন সত্যিকারের আদর্শ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিলে তিলে। শিক্ষার পাশাপাশি নজরুল সঙ্গীত ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও তার পারদর্শীতা অনন্যসাধারণ। বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিষয়টি অজ্ঞাত থাকলেও একসময় সঙ্গীতপিপাসু ও সঙ্গীত-সাধকদের কাছে তার যশখ্যাতি এবং সম্মান ছিল আকাশচুম্বী। শিক্ষায় দেশকে আলোকিত করার পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ এবং শুদ্ধ ও মননশীল সঙ্গীতচর্চার মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে তার অবদান অনস্বীকার্য। দেরীতে হলেও রাষ্ট্র তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বেগম রোকেয়া পদক ২০২১-এ ভূষিত করলো। আগামীতে তাকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করার দাবিও জানান বক্তারা।
বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা আজীবন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে আলোকিত মানুষ তথা সুনাগরিক তৈরির মাধ্যমে দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলায়’ পরিণত করতে অবদান রেখে যাবেন।
সংবর্ধেয় অতিথি প্রফেসর হাসিনা জাকারিয়া বেলা দেশসেবায় আজীবন নিযুক্ত থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অন্য সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণে ভূমিকা রাখার আহবান জানান।
Discussion about this post