শিক্ষার আলো ডেস্ক
এসএসসিতে সর্বোচ্চ জিপিএ (জিপিএ-৫) পেয়েও একাদশে ভর্তির প্রথম পর্যায়ের ফলাফলে কলেজে নাম আসেনি চট্টগ্রামের ৮৬৬ জন শিক্ষার্থীর। এরা সবাই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ ধারী। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এসএসসিতে জিপিএ-৫ পায় ১২ হাজার ৭৯১ জন। এর সিংহভাগই ছিল বিজ্ঞানের। এ বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ২৯১ জন। তবে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েও বিভাগটির ৮৬৬ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রথম পর্যায়ের তালিকায় কলেজ পায়নি।
গতকাল সন্ধ্যায় একাদশে ভর্তির প্রথম পর্যায়ের ফল প্রকাশিত হয়েছে। আবেদনকারীদের মাঝে চট্টগ্রামের সব মিলিয়ে ২৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রথম তালিকায় ঠাঁই পায়নি। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য চট্টগ্রামের ১ লাখ ২৪ হাজার ৭০৭ শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করে।
এর মধ্য থেকে কলেজে ভর্তির জন্য প্রথম তালিকায় নির্বাচিত হয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ১৬৭ জন। হিসেবে আরো ৬ হাজার ৫৪০ শিক্ষার্থী আবেদন করেও প্রথম তালিকায় কলেজ পায়নি। তবে সব মিলিয়ে আবেদনকারীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজারের সামান্য বেশি বলে জানিয়েছিল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ শাখা। এবার চট্টগ্রামের মোট ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করেছে। সে হিসেবে আবেদন করেও প্রথম তালিকায় ঠাঁই না পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ হাজারের বেশি।
প্রথম তালিকায় কলেজ না পাওয়ায় ভর্তির জন্য মনোনয়ন পেতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে এসব শিক্ষার্থীকে। ওই দিন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশ করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি।
এর আগে ৭ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ২য় দফায় পুনরায় আবেদন করতে হবে এসব শিক্ষার্থীকে। তবে ২য় দফায় আবেদনকালে তাদের আর আবেদন ফি দিতে হবে না। অর্থাৎ কলেজের পছন্দক্রম পরিবর্তন, নতুন কলেজ যুক্তকরণ বা কোনো কলেজ বাদ দেওয়ার মাধ্যমে আগের (প্রথম দফায় করা) আবেদনটি আপডেট বা সংশোধন করলেই চলবে। সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদনের সুযোগ থাকলেও এসব শিক্ষার্থী আবেদনে কম সংখ্যক কলেজ পছন্দ দেওয়ায় এমনটি ঘটেছে বলে মনে করেন ভর্তি প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলেন, সর্বোচ্চ দশটি কলেজে আবেদনের সুযোগ থাকলেও জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী পছন্দের ক্ষেত্রে ৫/৬টির বেশি কলেজ দেয়নি। তাদের ধারণা ছিল জিপিএ-৫ পাওয়ায় ৫/৬টি কলেজে আবেদন করলেই হবে। আর বেশি করার দরকার নেই। কিন্তু যেসব কলেজে তারা আবেদন করেছে সেসব কলেজে তাদের তুলনায় বেশি নম্বরপ্রাপ্ত আবেদনকারীর সংখ্যা হয়তো বেশি ছিল।
যার কারণে আবেদন করা ওই ৫/৬টি কলেজের একটিতেও তাদের সুযোগ হয়নি। কিন্তু সর্বোচ্চ সংখ্যক (দশটি) কলেজে আবেদন করলে এ সমস্যা হতো না। আবেদন চলাকালীন সর্বোচ্চ সংখ্যক কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদন করতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতি আমরা বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু অনেকেই তা করেনি। অতি আত্মবিশ্বাসের কারণেও অনেকে ৫/৬টির বেশি কলেজ পছন্দ দেয়নি। যার কারণে সর্বোচ্চ পয়েন্ট ধারী হয়েও তারা প্রথম পর্যায়ের ফলাফলে ভর্তির জন্য কোনো কলেজে মনোনীত হয়নি।
এরপরও এসব শিক্ষার্থীর কলেজ পাওয়া নিয়ে সমস্যা নেই জানিয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন, সব মিলিয়ে কলেজগুলোর মোট আসন সংখ্যার তুলনায় আবেদনকারীর সংখ্যা কম। যার কারণে সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রামে আসন সংকট হবে না। যদিও কাঙ্ক্ষিত কলেজ হয়তো পাওয়া যাবে না। তবে সব শিক্ষার্থীই কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। যারা প্রথম তালিকায় মনোনয়ন পায়নি তাদের পরবর্তী তালিকায় মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৮৬৬ শিক্ষার্থী প্রথম তালিকায় কলেজ না পেলেও বাকি দুই বিভাগের (মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) জিপিএ-৫ ধারী সব শিক্ষার্থীই ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার মানবিক বিভাগ থেকে ১৫৬ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১ হাজার ৩৪৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়। আর বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজার ২৯১ জন। সব মিলিয়ে এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৭৯১ জন। পুনঃনিরীক্ষার পর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো ১০ জন বেড়েছে। সে হিসেবে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮০১ জনে।
Discussion about this post