তানভীর পিয়াল
করোনার প্রকোপে বাবার ছোট দোকানটা বন্ধ হয়ে যায় আরিফা আক্তার সামান্থার। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় চার ভাই-বোনের সংসারে ঘনিয়ে আসে দুর্যোগ। টিউশন করে এইচএসসির গণ্ডি পার হলেও উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন ক্রমে ফিকে হয়ে আসে তার।
একইরকম সংকটে সানজিদা আলম ও সামিহা আফরোজও। করোনায় বেসরকারি চাকুরে পিতার আয়ে বড়সড় আঘাত তাদের অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা তৈরি করে। এ সময় পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা জানতে পারেন ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি অসচ্ছল কিন্তু সম্ভাবনাময়- এমন নারীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে দিচ্ছে বিশেষ এক বৃত্তি। ‘উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট এন্ড লিডারশিপ ফান্ড’ নামের এ বৃত্তির অধীনে নারীরা বিনাখরচে ইডিইউতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
এদের মধ্যে সামান্থা পড়ছেন বিবিএ নিয়ে। সানজিদা ও সামিহা পড়ছেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। তাদের চার বছরের স্নাতক পর্যায়ের পড়ালেখার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানারকম বৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় শিক্ষাপরিবেশ ও সমাজের সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে চলেছে ইডিইউ, জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের, বিশেষত সম্ভাবনাময় নারীদের সবসময়ই আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছি আমরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ফান্ড তৈরি করে বিষয়টিকে এবারই জনসমক্ষে আনা হলো। যারা কখনো ইডিইউতে পড়ার কথা ভাবতেও পারেনি, তারাও এই বৃত্তির ফলে এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য নারী পারিবারিক অসচ্ছলতা, লিঙ্গবৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হয়ে নিজেদের বিকশিত করতে পারছেন না। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও উন্নত পরিবেশ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সেই সুযোগ করে দিতে বিনাখরচে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে চট্টগ্রামের ইডিইউ।
তবে এক্ষেত্রে নারীদের শুধু আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেই হবে না, একইসাথে ভালো ফল অর্জন, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও সামাজিক পরিসরে নেতৃত্বদানমূলক ভূমিকাও রাখতে হবে। সামান্থা যেমন পড়াশোনা-টিউশনের পাশাপাশি গিটার শিখেছে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনও করছেন নিয়মিত। সামিহা-সানজিদাও স্কুল জীবনে গার্লস গাইড, ইয়েলো গার্ডের মতো সামাজিক কর্মমুখী সংগঠনের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।
বিনাখরচে পড়ার এ বৃত্তিটিকে কেবল সুবিধা হিসেবে নয়, বরং সুযোগ হিসেবেই দেখছে তারা। বৃত্তিপ্রাপ্ত তিনজনই চায় বিদেশে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশের জন্য কিছু করার। তাদের মতো সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উন্নয়নে সাধ্যমতো সুযোগ তৈরি করার স্বপ্ন তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্রতিবছর আবেদনের ভিত্তিতে ১০জন শিক্ষার্থীকে ফান্ডের আওতায় আনা হবে। এ শিক্ষার্থীদের চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামে মোট ৭৫ লক্ষ টাকার আনুমানিক শিক্ষাব্যায় বরাদ্দ করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় গৃহিত এ উদ্যোগে সামর্থবান সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সমন্বিত জিপিএ ন্যূনতম ৯; ও/এ লেভেলের ক্ষেত্রে মোট পয়েন্ট ৩০ হতে হবে। এছাড়া প্রার্থীরা যদি কোনো এনজিও, সামাজিক সংগঠনের সাথে স্বেচ্ছাসেবী কাজে জড়িত থাকে; দারিদ্র্য বিমোচন, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সম্পৃক্ত থাকে; অথবা সমাজে ইতোমধ্যে অসামান্য ভূমিকা রাখা বা উদ্যোক্তা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। যদি প্রার্থী কোনো ধরনের সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে এবং স্বীকৃতি বা অর্জনের অধিকারী হয়- সেসবও বিবেচনা করা হবে।
Discussion about this post