তানভীর পিয়াল
এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই জাহান তাবাসসুম জিসাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার বাবা। কিন্তু জীবন নিয়ে তার স্বপ্নটা ছিলো ভিন্ন। তাই মায়ের অনুপ্রেরণায় ঘর ছাড়লেন জিসা। পরিচিত এক বড় বোনের বাসায় লজিং থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বসেন তিনি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া তাবাসসুম এইচএসসিতে পেলেন গোল্ডেন জিপিএ। জীবন নিয়ে তার অনেক বড় স্বপ্নটা পূরণে উচ্চশিক্ষাটাও তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যয়নির্বাহ করা তার পক্ষে দুষ্করই ছিলো।
এ সময় পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে জানতে পারে ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ) অসচ্ছল কিন্তু সম্ভাবনাময়- এমন নারীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নপূরণে দিচ্ছে বিশেষ এক বৃত্তি। ‘উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট এন্ড লিডারশিপ ফান্ড’ নামের এ বৃত্তির অধীনে নারীরা বিনাখরচে ইডিইউতে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
এইচএসসিতে পাঠরত ফাইজা আকতারের জীবনেও বিপর্যয় নেমে আসে পিতার আকস্মিক মৃত্যুতে। শৈশব থেকেই উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখে আসা ফাইজার উচ্চশিক্ষা নিয়েই দেখা দিয়েছিলো সংশয়। একইরকম সংকটে থাকা সানজিদা আলম, সামিহা আফরোজের মতো ১৪ জন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী বর্তমানে পড়ালেখা করছে ইডিইউতে। প্রয়োজন অনুসারে তাদের কেউ পাচ্ছে শতভাগ বৃত্তি, কেউবা শিক্ষাব্যায়ের সিংহভাগ।
৫ নভেম্বর শনিবার বিকেল ৩টায় উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট এন্ড লিডারশিপ ফান্ড বৃত্তিপ্রাপ্ত এই ১৪ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি অনুভূতি-বিনিময় সভার আয়োজন করা হয় ইডিইউর সেমিনার হলে। এ সময় তারা তাদের জীবনের আখ্যান শোনান উপস্থিত অতিথিদের। ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে তারা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানারকম বৃত্তি ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় শিক্ষাপরিবেশ ও সমাজের সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে চলেছে ইডিইউ, জানালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের, বিশেষত সম্ভাবনাময় নারীদের সবসময়ই আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছি আমরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ফান্ড তৈরি করে বিষয়টিকে এই বৃত্তির মাধ্যমে জনসমক্ষে আনা হলো। যারা কখনো ইডিইউতে পড়ার কথা ভাবতেও পারেনি, তারাও এই বৃত্তির ফলে এখানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য নারী পারিবারিক অসচ্ছলতা, লিঙ্গবৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হয়ে নিজেদের বিকশিত করতে পারছেন না।
মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও উন্নত পরিবেশ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সেই সুযোগ করে দিতে বিনাখরচে পড়ার সুযোগ দিচ্ছে চট্টগ্রামের ইডিইউ। তবে এক্ষেত্রে নারীদের শুধু আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেই হবে না, একইসাথে ভালো ফল অর্জন, সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও সামাজিক পরিসরে নেতৃত্বদানমূলক ভূমিকাও রাখতে হবে। সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় গৃহিত এ উদ্যোগে সামর্থবান সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অনুষ্ঠানে ইডিইউর উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান, ডিন প্রফেসর ড. নাজিম উদ্দিনসহ আরো অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এ বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সমন্বিত জিপিএ ন্যূনতম ৯; ও/এ লেভেলের ক্ষেত্রে মোট পয়েন্ট ৩০ হতে হবে। এছাড়া প্রার্থীরা যদি কোনো এনজিও, সামাজিক সংগঠনের সাথে স্বেচ্ছাসেবী কাজে জড়িত থাকে; দারিদ্র্য বিমোচন, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সম্পৃক্ত থাকে; অথবা সমাজে ইতোমধ্যে অসামান্য ভূমিকা রাখা বা উদ্যোক্তা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। যদি প্রার্থী কোনো ধরনের সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে এবং স্বীকৃতি বা অর্জনের অধিকারী হয়- সেসবও বিবেচনা করা হবে।
Discussion about this post