নিজস্ব প্রতিবেদক
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ঠিক আগের মতই আছে, তবে রঙটা পরিবর্তন হয়েছে। তখন লাল রঙ ছিল এখন তা সাদা হয়েছে। বিজ্ঞান অনুষদেরও রঙটুকুই পরিবর্তন হয়েছে। আমার সহপাঠী দেবাশীষ দেবু আজকে এখানে আছে৷ আজকে যদি সব বন্ধুকে খুঁজে পেতাম খুবই চমৎকার হতো। বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে আড্ডা দিতে পারতাম! ছোটাছুটি করতে পারতাম! কলা ভবনের পাশে গিয়ে ছোটবেলায় হারিয়ে যেতে পারতাম। ট্রেনের কামড়ায় বসে গলা ছেড়ে গান গাওয়া! বন্ধু দেবাশীষ পালও গাইতো৷ সে এখন সিনিয়র শিক্ষক।’ এভাবেই নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিরোমন্থন করেন ড. হাসান মাহমুদ৷ তিনি চবির রসায়ন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ৮০’র দশকে এই ক্যাম্পান ছেড়ে যান। বর্তমান সময়ের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে তিনি তার স্বপ্নের কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নের জন্য দুটি প্রস্তাবনা করে সেগুলো বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ড. হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৮১ সালে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। অনেক আগেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন ছেড়ে চলে গেছি। ১৯৮৮ সালের দিকে মাস্টার্স পাশ করে বের হই। তখনও আনাগোনা ছিল। যদিও আমাদের সময়ে প্রচন্ড সেশনজট ছিল।’
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মন্ত্রী অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘চবি আমার হৃদয়ের মনিকোঠায় সবসময় সবুজ এবং সতেজ। এটিই আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্যাম্পাস৷ প্রকৃতি এই ক্যাম্পাসকে যেভাবে অকাতরে দান করে সাজিয়েছে তা পৃথিবীর খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। আমি হয়তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেই মনে হয়, এর চেয়ে সেরা ক্যাম্পাস আর আমি দেখিনি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মান উন্নয়নকল্পে তার প্রস্তাবনা নিয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু ডিগ্রি প্রদান নয়। আমার প্রস্তাবনা থাকবে, এখানে বিশ্বমানের একটি সেমিনার থাকবে। আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠান হবে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জার্নাল প্রকাশ করা হবে। যা হবে কোয়ালিটি জার্নাল। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও জার্নাল প্রকাশ পাবে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের গবেষণা সেখানে ছাপানো হবে। যাতে বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের গবেষণা থাকবে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যােগ নিতে হবে। এটি নিয়মিতভাবে প্রকাশ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা বাড়াবে। এটি এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব যাতে গবেষকগণ তাদের গবেষণা ছাপানোকে মর্যাদার মনে করবেন৷’
তিনি আরো বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। তা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত উন্নয়ন নয়৷ জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতিগত উন্নয়ন দরকার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনা আমার ভালো লেগেছে। তারা ভালো গায় এবং পরিবেশন করে।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এই দিনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখ্তারের সভাপতিত্বে মুখ্য আলোচক চবি বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান শেষে তিনি সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫৭ নাম্বার রুম পরিদর্শন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সেখানে থাকতেন তিনি। দীর্ঘদিন পর আবারো সেই স্মৃতি বিজড়িত রুমে পদার্পণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। ১৫৭ নাম্বার কক্ষে অবস্থানরত ছাত্রদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেন হাছান মাহমুদ। এসময় ছাত্রদের উপহারও প্রদান করেন তিনি।
এসময় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই কক্ষে ছিল আমার ২য় আবাসস্থল। শহরেও থাকতাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দীর্ঘ সময় আমি এই কক্ষে থেকেছি। এই কক্ষের সাথে আমার হাজারো স্মৃতি জমা আছে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর এখানে আবারো আসতে পেরে আমার খুবই ভাল লাগছে। আমার মনে হচ্ছে আমি আবারো সেই পুরোনো দিনেই ফিরে গেছি।’
এরপর তিনি সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট কক্ষে হল কর্তৃপক্ষের সাথে মতবিনিময় করেন। হল কর্তৃপক্ষ মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
Discussion about this post