চাকুরী পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেটা হতে পারে সরকারী বা বেসরকারী যে কোন চাকুরীই এখন পাওয়াটা যেন সোনার হরিনের মত। প্রতিটি সেক্টরে প্রতিটি পদের জন্য হাজার হাজার আবেদনপত্র নেওয়া হয় এবং তার মধ্য হতে তিন/ চার জন বা একজন হয়ত চাকুরীটি পায়। তো আজ আমি আপনাদের বলব কিভাবে আপনি চাকুরীর জন্য প্রস্তুতি নিবেন, যাতে করে আপনি আপনার সোনার হরিণটাকে ধরতে পারেন এবং তার জন্য কি কি করণীয় পদক্ষেপ আপনাকে নিতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণী।
আপনাকে প্রথমে প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। অর্থ্যাৎ আপনি যে বিষয়ে ইন্টারভিউ দিবেন, সে বিষয়ে আপনার আপনার আরো বেশি জানতে হবে এবং আপনার পরিস্কার একটি ধারনা থাকতে হবে। সেই জন্য আপনাকে বই, নোটবুক এবং যদি পারেন ইন্টারনেট দেখে বেশি বেশি জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
আপনি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এবং আপনার পদ সম্পর্কে আপনি যদি কিছু না জানেন তবে আপনার চাকরি পাবার সম্ভাবনা নেই। ইন্টারভিউতে যাবার পূর্বে আপনি অবশ্যই আপনার সম্ভাব্য পদ এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভাল মত খোঁজ খবর জেনে যাবেন। এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে তাদের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের লিস্ট মুখস্ত করে যেতে হবে কিংবা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস মুখস্ত করে যেতে হবে। আপনি জানার চেষ্টা করবেন যে প্রতিষ্ঠানটি কি ধরণের কাজ করে, আপনি যে পদের জন্য আবেদন করেছেন সেই পদের প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো কি কি এবং আপনার দক্ষতাগুলো আপনি কিভাবে সেই পদের সাথে সমন্বয় ঘটাতে পারবেন। গবেষণাই প্রত্যেকটি ইন্টারভিউয়ের ভিত্তি সুতরাং নিশ্চিত হয়ে জেনে নিন আপনি কি ধরণের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে যাচ্ছেন।
আপনি যে সিভি অর্থ্যাৎ বায়োডাটা বানাবেন সেটা হতে হবে সাজানো ফুলের মত। তার মানে ধরেন প্রথমে থাকবে সুন্দর একটি হাস্যজ্বল ঝকঝকে কালার ছবি। তার পর থাকতে পারে আপনার কিছু ব্যাক্তিগত তথ্যাদী যেমন আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং ঠিকানাটা অবশ্যই হতে হবে বর্তমান ঠিকানা। সিভি যতটা সম্ভব ছোট হয় ততই ভাল তবে প্রয়োজনীয় তথ্যাদী থাকতে হবে। চাকুরী দাতারা দেখতে চান যে, আপনি কতটা দক্ষ এবং সেই জন্য সিভিতে আপনি যে কাজগুলো পারেন এবং ইতিপূর্বে করেছেন সেই সব কাজের তালিকা সংক্ষেপে দিতে হবে।
তারপরে আপনি দিতে পারেন আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার টেবিল ফরমেটে বিবরণী যেমনঃ কোথায় পড়াশুনা করেছেন? কবে পাশ করেছেন? রেজাল্ট কি? ইত্যাদী কারন চাকুরীদাতার জানা প্রয়োজন যে আপনি কতটা শিক্ষিত । এর পরে চাকুরী দাতা জানতে চায় আপনার কোন চাকুরীর অভিজ্ঞতা আছে কিনা। আপনি যদি ফ্রেশার হন সেক্ষেত্রে আপনি শুধু লিখবেন আপনি কি কি পারেন। আপনার পরিকল্পনা কি অর্থ্যাৎে আপনি কোম্পানীর জন্য কি ধরনের কাজ করতে চান এবং নিজে কি কি কাজ করেছেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণী।
আর আপনি যদি অভিজ্ঞ হন তাহলে সিভিতে উল্লেখ করতে হবে যে, আপনার কত বছর অভিজ্ঞতা আছে, কোন কোন বিষয়ে আপনি পারদর্শী এবং আপনি কোন কোম্পানীতে কাজ করেছেন তার একটি পরিস্কার বিবরণী। উল্লেখ্য যে, যখন আপনি যখন কোন ডেটা দিবেন তখন সেটা টেবিল ফরমেটে দিলে চাকুরীদাতাদের জন্য দেখতে সুবিধা হয়। এর বাহিরে আপনি আপনার কাজের তালিকা বুলেট ফরমেটে ও দিতে পারেন। এ জন্য আপনি বিডি জবস সাইটের নির্দেশাবলীও দেখতে পারেন বা গুগলের সাহায্য নিয়ে সিভি ডাউনলোড করে দেখতে পারেন।
আপনি সিভিতে আপনার পার্সোনাল/ব্যাক্তিগত তথ্য ও দিতে পারেন। যেমনঃ আপনার নাম, বাবার নাম, মোবাইল নম্বর প্রয়োজনে ২টি, ই-মেইল, আপনার বর্তমান ঠিকানার পাশাপাশি আপনার স্থায়ী ঠিকানাও ুদিতে পারেন। আপনার সিভির শেষ অংশে রেফারেন্স ব্যাবহার করতে পারেন যা অতী জরুরী একটি বিষয় এবং যার রেফারেন্স দিবেন তাকে অবশ্যই জানিয়ে রাখবেন যে স্যার আমি আপনার নাম, পদবী, ফোন নম্বর সিভিতে দিয়েছি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন আসলে যেন তিনি বলেন আমি তাকে চিনি, সে অনেক ভাল ইত্যাদি। পারিশেষে স্ক্যান করা ডিজিটাল সিগনেচার অথবা অরিজিনাল সিগনেচারও সিভেতে দিতে পারেন।
ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে
ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে আপনার পড়াশুনার প্রস্তুতি ভাল নেওয়ার পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমনঃ আপনার আয়রন করা জামা কাপড়, ঘড়ি, মোবাইল, কাগজ, ২টি কলম যাতে করে একটি কলম শেষ হলেও অন্য কলমটি আপনার ব্যাকআপ হিসাবে কাজ করে।
আপনি একটি সুন্দর টাই এবং কোটও রেডি রাখতে পারেন। তবে অনেকে কোট না পড়ে শুধু টাই পরেন। অনেকে মনে করে কোট পড়লে চাকুরীদাতারা ইন্টারভিউতে ওভার স্মার্ট মনে করতে পারেন তাই কোটটি এডিয়ে চলতে পারলে ভাল। এছাড়াও গরমের সময় আপনি কোট পড়লে ঘেমে যাবেন। তবে সবাই যদি কোট টাই পরে তাহলে আপনি পড়তে পারবেন না কেন ? পদবী যদি বড় হয় সেক্ষেত্রে পরতে পারেন। অর্থ্যাৎ আপনাকে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করতে হবে। আইটি পদের জব হলে আপনার প্রজেক্টটি আপনি পেন ড্রাইভে অথবা ডিভিডিতে রাইট করে নিতে পারেন। অনেকের প্রজেক্ট গুলো নেটে আপলোড করে ও দেখাতে পারেন। অথবা আপনি গুগল ড্রাইভে প্রজেক্ট রেখেও দেখাতে পারেন।
ইন্টারভিউ বোর্ডে যাওয়ার কমপক্ষে ১/২ ঘন্টা আগে আপনার সঠিক লোকেশনে পৌঁছাতে হবে এবং তার জন্য আপনার ঘড়ি দেখে বাসা থেকে বের হতে হবে। আপনি সঠিক সময়ে যেতে পারেন কিনা সেটাও ইন্টারভিউ এর একটি অংশ। আপনাকে যখন তারা ডাকবে ঠিক তখনই আপনার যেতে হবে। দেরী করলে মোটেও চলবে না। ইন্টারভিউ এর আগের দিন আপনি সেই কোম্পানীতে একদিন যেয়ে তাদের ড্রেসকোড দেখতে পারেন। কোম্পানীতে কর্মরত লোকজনের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন যে কোম্পানীটি কেমন এবং সেলারি কেমন দেয় ইত্যাদী।
ইন্টারভিউ বোর্ডে
ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকবার আগে অবশ্যই আপনার মোবাইল ফোন অফ রাখতে হবে। অনুমতি নিয়ে সালাম দিয়ে আদবের সাথে ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢুকতে হবে। তারা বসতে বললে বসবেন। তারা যদি বাংলায় প্রশ্ন করে তাহলে বাংলায় উত্তর দিবেন আর তারা যদি ইংরেজীতে প্রশ্ন করেন তাহলে ইংরেজিীতে উত্তর দিবেন কিন্তু তার আগে একটু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার । আর ইংরেজী না পারলে বলবেন আপনি ইংরেজী বুঝছেন কিন্তু বলতে একটু সমস্যা আছে। বাংলাতে প্রশ্ন করলে আমার জন্য উত্তর দেওয়া সহজ হয়।
আপনি প্রাথমিক ভাবে সে সকল প্রশ্নের উত্তর আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন সেই প্রশ্নগুলো হলোঃ
আপনার নিজের সম্পর্কে বলুন, আপনি কেন আমাদের সাথে কাজ করতে চাচ্ছেন। অর্থ্যাৎ আপনাকে তাদের/কোম্পানীর সাইট থেকে তাদের সম্পর্কে আগে থেকে জানতে হবে। তারা কিকি কাজ করে তাদের কোম্পানীতে কত জন লোক আছে। কার পদবী কি এবং কোম্পানীর মালিকের নাম কি ইত্যাদী।
আপনি যদি কোন প্রশ্নের উত্তর না জানেন তাহলে বলবেন সঠিক উত্তরটি আমার জানা নেই তবে বর্তমান ইন্টারনেট থেকে জেনে আপনাদের জানাতে পারবো। যদি লিখিত পরীক্ষা হয় তাহলে আপনাকে জানতে হবে এর পর ইন্টারভিউ আজকেই হবে কিনা এবং পরীক্ষার ফলাফল কবে দিবে ইত্যাদী। বেতনের কথা বললে বলবেন আমি আসলে জানতে চাই আমার পদের জন্য আপনাদের কোম্পানীতে কত বেতন দেওয়া হয়। একবারে কম বেতন বলবেন না আবার অনেক বেশী বেশী বেতন ও চাবেন না। আবার এইরকম ও বলা ঠিক হবে না যে আপনারা যা দেন তাই। তখন ওনারা আপনাকে হয়তো বলবে আমরা যদি প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা দেই তাহলেও কি আপনি চাকুরী করতে রাজি আছেন? ইন্টারভিউ শেষে সবাইকে সালাম দিবেন।
Discussion about this post