অভিজিৎ বসাক
বাংলা সাহিত্য
আগের দুই পর্বে আমরা বাংলা ব্যাকরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এই অংশে আমরা আলোচনা করব সাহিত্য নিয়ে। বাংলা থেকে সাধারণত দুই ধরনের প্রশ্ন করা হয়। ১. বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ ২. বাংলা সাহিত্য ।
ভাষা অংশে- বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ, লিপি ও ছাপাখানা ইত্যাদি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। আর এর সাথে থাকে ব্যাকরণ। কিন্তু বিগত কয়েক বছরের প্রশ্নগুলো খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন যে- ভাষা ও ব্যাকরণের থেকে সাহিত্য অংশ থেকেই বেশি প্রশ্ন দেওয়া হচ্ছে। তাই সাহিত্য অংশের জন্য বেশি সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।
সাহিত্য অংশে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন হয়- গ্রন্থের নাম ও সেসব গ্রন্থের চরিত্র, মধ্যযুগের সাহিত্য, বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকের উক্তি ও উদ্ধৃতি, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য, বিভিন্ন বাংলা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের নাম, বিভিন্ন রচনার ধরণ(কোনটি কবিতা, কোনটি উপন্যাস ইত্যাদি), রবীন্দ্র-পূর্ববর্তী সাহিত্য, বাংলাদেশের সাহিত্য, নাটকের উৎপত্তি ও বিকাশ, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ সাহিত্য ইত্যাদি থেকে। এই অংশগুলো থেকে প্রচুর প্রশ্ন থাকলেও আমাদের আরও কিছু বিষয় থেকে মাঝে মাঝেই প্রশ্ন আসে। যেমন- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ, আধুনিক যুগ, বাংলা গদ্যের বিকাশ, প্রবন্ধের উৎপত্তি, ছন্দ প্রকরণ, বাংলা গান, বাংলা অভিধান ইত্যাদি। তবে পড়া শুরু করার আগে অবশ্যই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো একবার করে দেখে নেবেন। আর যদি সেগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করতে পারেন তাহলে আরও ভাল হয়। কোন বই দেখে পড়বেন ?
বাংলা সাহিত্যের জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে প্রথমেই ড. হুমায়ুন আজাদের লেখা- “ লাল নীল দীপাবলি” বইটিকে ভালমতো পড়ে ফেলতে হবে। এই বইটিতে লেখক বাংলা সাহিত্যের শুরু, ক্রমবিকাশ ও পরিণতি সম্পর্কে একদম বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বইটিতে বিভিন্ন লেখকের উল্লেখযোগ্য বিভিন্ন সাহিত্যের রচনার সময়ও উল্লেখ করা আছে। তাছাড়া বইটি লেখা হয়েছে খুব সহজভাবে, কিশোরদের জন্য, কিছুটা গল্পের ছলে; ফলে একটু পড়লেই দেখবেন মনে রাখতে সুবিধা হচ্ছে। এই একটি বইয়ের মধ্যেই আপনি বাংলা সাহিত্যের প্রচুর তথ্য খুব গোছান আকারে পেয়ে যাবেন। হুমায়ুন আজাদের বিভিন্ন লেখা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সমালোচনা করেন। তবে সেগুলো খেয়াল করে আমাদের কোন লাভ নেই। আমাদের জানা দরকার হলো- পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য এই বইটি খুবই সহায়ক।
এছাড়াও স্কুল এবং কলেজে আমরা যে বাংলা পাঠ্যপুস্তকগুলো পরেছি সেগুলো একটু করে দেখে নিতে হবে। তবে অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা বইগুলোকে খুব ভালমতো পড়ে নিতে হবে। বিশেষ করে কবি ও লেখক পরিচিতি অংশটুকু খুব ভালমতো পড়তে হবে। লেখক পরিচিতিটুকু পাঠ্য বই থেকে পড়লে গাইড বইয়ের ভুলগুলো সহজেই বুঝতে পারবেন। তাই পাঠ্যপুস্তক আবশ্যিক।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গাইড বই, জব সল্যুশন, সৌমিত্র শেখরের লেখা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন কবি ও সাহিত্যিকের জন্মজয়ন্তী ইত্যাদি সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন ম্যাগাজিন থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পড়তে পারেন।
কিভাবে পড়বেন? বাংলা সাহিত্য আসলে বিশাল এক অধ্যায়। এই বিশাল সাহিত্য ভাণ্ডারের সব তথ্য মনে রাখা আসলে প্রায় অসম্ভব। তাই আপনাকে বুঝতে হবে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটি অপেক্ষাকৃত কম। যেমন- আপনারা খেয়াল করলেই দেখবেন শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপরই প্রতি বছর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থাকে। সুতরাং রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে খুব ভালমতো পড়ে ফেলতে হবে, যেন এক নম্বরও বাদ না পড়ে। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছেমত বা ভাল লাগার উপর সময় না দিয়ে বেছে বেছে কোন অংশ থেকে বেশি প্রশ্ন হয় সেই অংশগুলো একদম ভালমতো পড়তে হবে।
প্রচুর কবি ও সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্ম মনে রাখতে গিয়ে অনেকেই অসুবিধায় পরেন। আসলে এ নিয়ে ভয় পাবার কিছুই নেই। যে জিনিসগুলো আপনার ভাল লাগে না কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে বার বার পড়তে থাকুন। দেখবেন এমনিতেই মনে থাকা শুরু করেছে। আমাদের মস্তিষ্কের কাজই হলো- পরিচিত কিছুকে মনে রাখা। আপনার অপরিচিত বলেই ঐ বিষয়টা মনে থাকছে না। কিন্তু যখন বার বার পড়বেন তখন ঠিকই মস্তিষ্কের কাছে সেটা পরিচিত হয়ে যাবে।
সাহিত্য আসলে আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে। আমাদের জীবনের বিভিন্ন উপাদান, দুঃখ, হাসি, বেদনা ইত্যাদির গল্প নিয়েই সাহিত্যিকরা তাদের উপন্যাস/গল্প/কবিতা সৃষ্টি করেন। বিভিন্ন বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে যদি আগে থেকেই কিছুটা ধারণা থাকে তাহলে সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় পড়ে মজা পাওয়া যায়। আর এই মজা পাওয়াটাই কিন্তু খুব কাজে আসে। আপনি যদি কোন কিছুতে মজা না পান, তাহলে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে- সেখানে আপনার মনোযোগ থাকবে না। আর মনোযোগ না থাকলে কোনকিছুতেই আপনি ভাল করতে পারবেন না। তাই কিছু বিখ্যাত সাহিত্য বিষয়ে ধারণা নিয়ে নিন দেখবেন সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের জীবন ও কর্ম নিয়ে তথ্য মনে রাখতে আর বিরক্তি লাগছে না।
. মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। মধ্যযুগে মূলত বিভিন্ন দেব-দেবী ও ধর্মীয় বিষয় নিয়েই সাহিত্য রচিত হয়েছে। সহজে মনে রাখার জন্য বিভিন্ন মঙ্গল কাব্য, এগুলোর লেখক সময় ইত্যাদি নিয়ে একটি ছকের মত তৈরি করে ফেলতে পারেন। যেন এই ছক দেখলেই মধ্যযুগের সাহিত্য সম্পর্কে সবকিছু একবার ঝালাই করে নিতে পারেন। বিভিন্ন মঙ্গলকাব্য ও একই রকম নামের লেখকদের নিয়ে অনেক সময়ই প্যাচ লেগে যায়। কিন্তু আপনি যদি একটি ছকের মধ্যে তাদের জায়গা দিতে পারেন তাহলে এদের মধ্যে পার্থক্যগুলো আপনার কাছে খুব ভালমতো পরিচিত হয়ে যাবে। মনে রাখার একটি সহজ উপায় হলো- কোন কিছুর সাথে তুলনা দিয়ে বা কোন একটি ছড়ার মত করে মিলিয়ে মনে রাখা। যদিও এই পদ্ধতিটি অনেকেই পছন্দ করেন না, তবে প্রথমদিকে মস্তিষ্ককে পরিচিত করানোর জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন। এতে আপনার সময় কম লাগবে। এভাবে বিভিন্ন ধরণের কৌশল কাজে লাগিয়ে আপনাকে কম সময়ের মধ্যে বেশি তথ্য মনে রাখতে হবে। এজন্য কখনো হয়ত ছক তৈরি করা লাগতে পারে আবার কখনো হয়ত বিখ্যাত একটি সাহিত্যকর্ম পড়েও দেখা লাগতে পারে। লক্ষ্য স্থির করে পড়াশুনা চালিয়ে যান। সফলতা আসবেই।
If you want to make a permanent change, stop focusing on the size of your problems and start focusing on the size of you! ~T. Harv Eker
বাংলা ব্যাকরণ:
ভাষার গঠন ব্যাখ্যা করার জন্যই মূলত ব্যাকরণের সৃষ্টি হয়েছে। এই পর্বে আমরা দেখব বিসিএস ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যাকরণ থেকে কোন ধরণের প্রশ্নগুলো বেশি হয়, আর সেগুলো কিভাবে পড়বেন। কোন ধরণের প্রশ্ন বেশি হয়? বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাব বাংলা ব্যাকরণ অংশে সব থেকে বেশি প্রশ্ন হয়েছে- ১. বাগধারা এবং প্রবাদ ২. শুদ্ধ-অশুদ্ধ ৩. বাংলা ভাষার শব্দ ৪. সমাস ৫. সন্ধি ৬. পদ ৭. সমার্থক শব্দ ৮. বাংলা বানান ৯. উপসর্গ ১০. বর্ণমালা ও ধ্বনি- এগুলো থেকে। উপরের বিষয়গুলো ছাড়াও শব্দ প্রকরণ, পারিভাষিক শব্দ, কারক, প্রত্যয় ইত্যাদি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। বিগত বছরের প্রশ্নগুলো লক্ষ্য করলেই এবিষয়ে আরও ভাল ধারণা পাবেন। তাই ব্যাকরণ পড়া শুরু করার আগে অবশ্যই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো ভালমতো দেখে নেবেন। আর সবথেকে ভাল হয় প্রশ্নগুলো বুঝে বুঝে সমাধান করে নিলে। মনে রাখতে হবে যে- পিএসসি প্রতিবছরই কিছুটা নতুন আঙ্গিকে প্রশ্ন করার চেষ্টা করে। বিগত দুই বছরের প্রশ্ন ভালমতো খেয়াল করলে দেখতে পাবেন-শুধু মুখস্থ করার উপর জোর দিলে পরীক্ষায় ভাল করা যাবে না। তাই প্রথমে প্রশ্নের ধরণ বুঝে নিয়ে ব্যাকরণের নিয়মকানুনগুলো শেখার উপর বেশি করে নজর দিতে হবে।
ধ্বনি ও ধ্বনিতত্ত্ব বাংলা ব্যাকরণের কাঠামো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যাবে এখানে মূলত তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই বাংলা ব্যাকরণ গড়ে উঠেছে। ১. ধ্বনিতত্ত্ব ২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব এবং ৩. বাক্যতত্ত্ব ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কিত তথ্য কিভাবে মনে রাখবেন? বাংলা বর্ণমালা সম্পর্কিত তথ্য মনে রাখার কিন্তু খুবই সহজ। কারণ আমাদের ভাষার বর্নগুল খুব সুন্দর করে সাজানো। এগুলো বিভিন্ন বর্গ অনুসারে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- ক, খ, গ, ঘ, ঙ এই পাঁচটি বর্ণকে বলা হয় ক বর্গীয় বর্ণ। এই সবগুলো বর্ণের উচ্চারণ স্থান জিহ্বামূল। জিহ্বামূল কোথায় থাকে? কণ্ঠে, তাইনা? তাহলে এই বর্নগুলকে বলা হয় কণ্ঠ বা জিহ্বামূলীয় বর্ণ। তাই যদি পরীক্ষায় আসে “গ” এর উৎপত্তিই স্থল কোথায়? আপনি চোখ বুঝে উত্তর দিয়ে দেবেন- “জিহ্বামূল”। আবার সন্ধি পড়তে গেলেও আপনি এই সাজানো বিষয়টির সুবিধা নিতে পারবেন। যেমন- যদি দুটি বর্ণ মিলে সন্ধি গঠন হয় তখন দুটি ধ্বনি মিলে কি হয় সেটা জানতে হয়। যেমন- আপনাকে মনে রাখতে হবে- অ + আ = কত হয়? মজার বিষয় হলো আপনাকে এটা মনে রাখার কোন দরকারই নেই। কারণ বাংলা বর্ণমালা গুলো সব সিরিয়ালে সাজানো। “অ” একটি নিম্ন-ধ্বনি আর “আ “একাটি উচ্চ ধ্বনি। “অ” আছে প্রথমে আর “আ” আছে তার পরে। আপনাকে শুধু জানতে হবে- উচ্চ ধ্বনি + নিম্ন ধ্বনি = উচ্চ ধ্বনি। তাহলে “অ” আর “আ” মিলে অবশ্যই “আ” হবে। সেটা আর আপনার মুখস্থ রাখার দরকার নেই। কারণ “অ” আগে না “আ” আগে সেটা আমরা ভাল করেই জানি। এভাবে বিভিন্ন জিনিসের বেসিক বিষয়টি জেনে পড়তে পারলে আপনাকে আর বেশি পরিশ্রম করে পড়তে হবে না। ধ্বনি সম্পর্কে যা অবশ্যই মনে রাখতে হবে- ধ্বনি হলো ভাষার মূল উপাদান। এই ধ্বনিকে প্রকাশ করার জন্য ব্যাবহার করা হয় বর্ণমালা। বাংলাভাষায় দুই ধরণের ধ্বনি আছে। যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় আমাদের ফুসফুসের বাতাস মুখের কোথাও বাধা পায় না সেগুলোকে স্বরধ্বনি বলা হয়, যেমন- অ, আ, ই, ঈ ইত্যাদি। আর যেগুলো উচ্চারণ করার সময় বাতাস কোথাও না কোথাও বাধা পায় সেগুলোকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলা হয়। স্বরধ্বনির লিখিত রূপকে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনধ্বনির লিখিত রূপকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলা হয়। বাংলা ভাষায় স্বরবর্ণ আছে মোট- ১১ টি আর ব্যঞ্জনবর্ণ আছে মোট ৩৯ টি। এর মধ্যে পূর্ণমাত্রা বর্ণ আছে ৩২ টি, অর্ধমাত্রা বর্ণ আছে- ৮ টি আর মাত্রাহীন বর্ণ আছে- ১০ টি। খেয়াল করলে দেখতে পাবেন আমি উপরে যে তথ্যগুলো দিয়েছি এই লেখাটুকু থেকে প্রায় প্রতিবছরই অন্তত একটি প্রশ্ন পাবেন। তাই এমন কিছু বেসিক বিষয় সম্পর্কে আমাদের খুব ভাল ধারণা থাকতে হবে।
শুদ্ধ-অশুদ্ধ প্রায় প্রতিবছরই শুদ্ধ-অশুদ্ধ অংশ থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই এই অংশটি খুব ভালমতো শিখতে হবে। এই অংশে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুদ্ধ বানান থেকে প্রশ্ন করা হয়। বেশ কয়েকটি অশুদ্ধ বানানের মধ্য থেকে শুদ্ধ বানানের খুঁজে বের করতে হয়। এজন্য আমাদের বানানের গঠনরীতি সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে। দু একটি উদাহরণ দিলে এই ধরণের অশুদ্ধ বানান সম্পর্কে ধারণা পেতে সুবিধা হবে। অশুদ্ধ- একত্রিত, শুদ্ধ- একত্র; অশুদ্ধ- আয়ত্তাধীন, শুদ্ধ-আয়ত্ত; অশুদ্ধ- ইতিপূর্বে, শুদ্ধ- ইতঃপূর্বে বাংলা বানানরীতির সাথে সামঞ্জস্য না থাকায় এই ধরণের ভুলগুলো হয়ে থাকে। এই ধরণের ভুলগুলো ঠিক করতে হলে পড়ার সময় আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কোন বানান কেমন। এছাড়াও ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধানের ব্যাবহারের কারণে অনেক বানান ভুল হয়। ণ-ত্ব বিধান ও ষ-ত্ব বিধানের নিয়ম একটি বিষয় সবসময় মনে রাখবেন- খাটি বাংলা ভাষায় মূর্ধন্য(ণ) এর কোন ব্যাবহার নেই। তাই যেগুলো খাটি বাংলা শব্দ হিসেবে জানেন সেগুলোতে চোখ বন্ধ করে দন্তন্য(ন) ব্যবহার করবেন। তবে বাংলা ভাষার প্রচুর শব্দ সংস্কৃত থেকে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। এগুলোকে বলা হয় তৎসম শব্দ। এই শব্দগুলোতে মূর্ধন্য(ণ) এর ব্যাবহার রয়েছে। আর এসব শব্দে কোথায় মূর্ধন্য(ণ) আর কোথায় দন্তন্য(ন) এর ব্যাবহার হবে সেই নিয়মকেই ণ-ত্ব বিঁধান বলা হয়। নিচে আমি এমন কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো- ১. ট বর্গিয় ধ্বনির আগে যদি ন এর ব্যাবহার দেখতে পান তাহলে কোনকিছু না ভেবেই নিশ্চিন্তে মূর্ধন্য(ণ) ব্যবহার করবেন। খেয়াল করে দেখুন উপরে বর্গিয় ধ্বনি সম্পর্কে লিখেছি। ট বর্গীয় ধ্বনিগুলো হলো- ট, ঠ, ড, ঢ, ণ। এগুলোর আগে সবসময় “ণ” হবে। উদাহরণ- বণ্টন, ঘণ্টা, ঠাণ্ডা, লুণ্ঠন ইত্যাদি। ২. ঋ, র, ষ এর পরে মূর্ধন্য(ণ) হবে। যেমন- ঋণ, তৃণ, বিষ্ণু ইত্যাদি। আবার ঋ, র, ষ এর পর যদি প্রত্যয়ের দন্তন্য(ন) আসে তবে সেটাও মূর্ধন্য(ণ) হয়ে যাবে। এ বিষয়ে একটি সুন্দর বাংলা ছড়া আছে- ঋ কার, র কার, ষ কারের পর যদি ন কার থাকে ঘ্যাঁচ করে তার কাটবে মাথা কোন বাপ তারে রাখে।। এখানে মাথা কাটা বলতে মূলত মাত্রা উঠিয়ে নেওয়া বোঝাচ্ছে। দন্তন্য(ন) এর মাত্রা উঠিয়ে নিলেই তো সেটা মূর্ধন্য(ণ) হয়ে যায়। এখানে মজা করে মাথা কাটার কথা বলা হয়েছে। এমন ছড়াগুলো মনে রাখলে মাঝে মাঝে কাজে আসে। কোনকিছুকে সহজে মনে রাখা যায়। ৩. ঋ, র, ষ এর পরে যদি ক বর্গীয়/প বর্গীয়/শ/ব/হ এর যেকোনো একটা থাকে তবে এগুলোর পরে মূর্ধন্য(ণ) বসে। এই নিয়মগুলো ছাড়াও আরও কয়েকটি নিয়ম আছে। সেগুলো ব্যাকরণ বই থেকে শিখে নেবেন।
ণ-ত্ব বিঁধান ছাড়াও ষ-ত্ব বিধানের নিয়মগুলোও মনে রাখতে হবে। বাংলা ভাষায় স, শ ও ষ এই তিনটিই ব্যাবহার রয়েছে। বানান ভুল বুঝতে হলে আমাদের এই তিনটি স এর ব্যাবহার সম্পর্কে জনতে হবে। কিছু নিয়ম মনে রাখলেই আমরা এই অংশ ভাল করতে পারব- ১. অ, আ ছাড়া অন্য স্বরবর্ণের পরে স, ষ হয়। আবার ক, এর পরেও স, ষ হয়। যেমন- ভবিষ্যৎ, জিগীষা, মুমূর্ষু, বিষয়, সুষমা ইত্যাদি। ২. ই কার ও উ কারের উপসর্গের পর কিছু ধাতুতে ষ হয়। যেমন- প্রতিষ্ঠান, অধিষ্ঠান, অনুষ্ঠান ইত্যাদি। ৩. ট ও ঠ এর আগে ষ হয়। যেমন- কোষ্ঠ, কাষ্ঠ, স্পষ্ট ইত্যাদি। যেকোনো একটা ব্যাকরণ বই থেকে নিয়মগুলো বুঝে নেবেন। প্রয়োজনে একের অধিক ব্যাকরণ বইকে সহায়ক হিসেবে রাখুন। পরবর্তীতে একটা গাইড বই থেকে সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
বাগধারা এবং প্রবাদ সাধারণত খুব বেশি কঠিন আসে না।কিন্তু একটু tricky গুলো এসে থাকে।তাই এক্ষেত্রে ভালো করতে হলে একটু বেশি পড়তে হবে।যে কোন একটি গাইড বইয়ের পাশাপাশি ব্যাকরণ সংক্রান্ত যেকোনো একটি ভালো বই পড়া উচিত।
উপসর্গ ক্লাস ৯ এর পুরনো সিলেবাসের ব্যাকরণ বই থেকে পড়লে সবচেয়ে ভালো হবে। খুব সুন্দর করে এই বইতে উপসর্গ ও অনুসর্গ ব্যাখা করা আছে।প্রত্যয় ও কিন্তু ক্লাস ৯ এর পুরনো সিলেবাসের ব্যাকরণ বই থেকে পরলে সবচেয়ে ভালো হবে।এরপর যেকোনো একটা গাইড বই থেকে practice করতে হবে।
সমার্থক শব্দ কমবেশি সব চাকরির পরীক্ষায় এসে থাকে। এক্ষেত্রে বিস্তর পড়াশোনা করতে হবে। তবে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আসা প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলতে হবে।এরপর যেকোনো একটা গাইড বই থেকে practice করতে হবে।তবে পড়ার সময় যে শব্দটা পড়বো সে শব্দটার একটা প্রতিচ্ছবি নিজের মধ্যে যেন থেকে যায়। তাহলে মনে রাখতে সুবিধা হবে।
আজকে এ পর্যন্তই থাক।
“Winners embrace hard work. They love the discipline of it, the
trade-off they’re making to win. Losers, on the other hand, see it as
punishment. And that’s the difference.”
–Lou Holtz
সবার জন্য শুভকামনা।
Discussion about this post