বর্তমান সময়ে তরুণরা ক্যারিয়ার হিসেবে বিসিএসকেই প্রথমে স্থান দিয়েছে। তবে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখা যতটা সহজ; এ স্বপ্ন পূরণ ততটা বন্ধুর নয়। এর জন্য পরিশ্রমের যেমন প্রয়োজন রয়েছে; তেমনি কৌশলীও হতে হয়। বিসিএস যাত্রায় সফল হওয়া কয়েকজন সেরাদের পরামর্শ
শুরু থেকেই হোক প্রস্তুতি
বিসিএসকে অনেকেই মুখস্থকেন্দ্রিক পরীক্ষা হিসেবে ট্রল করলেও মূলত এখানে আপনার সম্পূর্ণ শিক্ষাজীবনের অর্জিত জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটানো হয়। তাই আপনার জীবনের লক্ষ্য যদি হয় বিসিএস, তবে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান আর বাংলা ব্যাকরণের দুর্বলতা সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে হলেও কাটাতে হবে, কারণ এগুলোই বিসিএসের ফল নির্ধারণী বিষয়। সেই সাথে ইংরেজি ও বাংলা শুদ্ধভাবে বলতে শেখা, হাতের লেখা দ্রুত করা, জীবনবৃত্তান্ত লেখা, মাইক্রোসফট অফিস ও কম্পিউটার স্কিল ডেভেলপ করা জরুরি। নিয়মিত পত্রিকা পড়া, বিশেষ করে সম্পাদকীয়, উপ–সম্পাদকীয়, অর্থনীতি ও বিশ্ব রাজনীতি বিষয়ক আর্টিকেল; সে সাথে একই খবর ইংরেজি পত্রিকা থেকে পড়ে নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ রপ্ত করার বিকল্প নেই। গতানুগতিক না লিখে নিজের মতো গুছিয়ে লেখা একটি আর্ট, সেটা এ সময়টাতেই রপ্ত করা উচিত। খেলা দেখা, মুভি দেখা, ঘুরতে যাওয়া, সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করার অভ্যাস রাখা উচিত। মানসিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন অ্যাপ ও বই থেকে অনুশীলন করতে হবে। পড়াশোনা ও এক্সটা–কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির অভ্যাস রাখার বিকল্প নেই।
বিজ্ঞান ও তথ্য–প্রযুক্তি।
1.বিসিএসে সবচেয়ে মজার বিষয় বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি। অবশ্য অনেকে এটিকে ভীতির পর্যায়ে নিয়ে যায়। সব বিভাগের ছাত্রদের জন্যই এতে ভালো সমান সুযোগ রয়েছে। ভালোভাবে বুঝে পড়লে ৩০ নম্বরের মধ্যে সহজেই ২৫+ নম্বর পাওয়া সম্ভব। প্রথমে সিলেবাস দেখে নেওয়া যাক।
2.বিজ্ঞানে ভৌত বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান নামে তিনটি শাখা রয়েছে। পদার্থ ও রসায়ন মূলত ভৌত বিজ্ঞানের অংশ। কেউ যদি জীববিজ্ঞান বাদ দিয়ে পড়ে, সে পাঁচ নম্বর বাদ দিয়ে পড়ল। কেউ আধুনিক বিজ্ঞান বাদ দিলে সে-ও পাঁচ নম্বর বাদ দেবে। পদার্থ ও রসায়ন মিলে পাঁচ নম্বর। ভালো করতে হলে বুঝে পড়তে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে চিত্র দিতে হবে। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বই সহায়ক হবে।
3.পদার্থবিজ্ঞান অংশে রয়েছে ভৌত বিজ্ঞান, ভৌত রাশির পরিমাপ, শক্তির উত্স প্রয়োগ-রূপান্তর, তাপ, শব্দ, তরঙ্গ, আলো, বিদ্যুৎ, এক্স-রে, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি। রসায়নবিদ্যায় অজৈব যৌগ, জৈব যৌগ, ধাতব পদার্থ ও তাদের যৌগ থেকে প্রশ্ন আসে। এগুলো বুঝে বুঝে পড়তে হবে। কার সঙ্গে কার সম্পর্কে কী উত্পন্ন হয়, নিঃশেষ হয় ইত্যাদি জানতে হবে। একটা অ্যানালাইসিস করে যে টপিকগুলোর ওপর বেশি প্রশ্ন আসে, তা ভালো করে পড়তে হবে।
4.জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চিত্রসহ বুঝে পড়তে হবে। চিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে মনে থাকে বেশি।
5.কম্পিউটারের ইতিহাস, প্রকারভেদ, বিভিন্ন অংশ, প্রগ্রাম, ভাইরাস, ফায়ারওয়াল, ডাটাবেস সিস্টেম সম্পর্কিত প্রশ্ন বেশি আসে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক (ম্যান, ল্যান, ওয়াই-ফাই), সেলুলার ডাটা নেটওয়ার্ক (টুজি, থ্রিজি, ফোরজি), ইন্টারনেট, ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েব, স্মার্টফোন, দৈনন্দিন জীবনে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (আইবিএম, মাইক্রোসফট), ক্লায়েন্ট সার্ভার ম্যানেজমেন্ট, ক্লাউড কম্পিউটিং, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, রোবটিকস, সাইবার ক্রাইম থেকে প্রশ্ন বেশি আসে।
6.প্রথমে তালিকা করে নিন, কোন টপিকে আপনার দুর্বলতা আছে ও কোনগুলো ভালো পারেন। যেসব টপিকে দুবর্লতা আছে, সেসব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। সহজ মনে হয়, এমন বিষয়গুলোও চর্চা করতে হবে।
7.যখন যে টপিক পড়ছেন অষ্টম শ্রেণি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বই থেকে মিলিয়ে পড়লে ভালো। পাশাপাশি ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নিতে পারেন।
8.চিত্র, সূত্র বুঝে পড়লে বেশি মনে থাকবে। বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে মুখস্থ করার চেয়ে বুঝে পড়া বেশি কার্যকর।
9.প্রস্তুতির শুরুতে বিগত বছরের বিসিএসের প্রশ্ন দেখে নেওয়া যেতে পারে। এতে একটি ভালো ধারণা পাওয়া যায়।
10.দুটি সহায়ক বই সংগ্রহ করে এমসিকিউ অনুশীলন করুন। এতে প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝতে সুবিধা হবে।
11.অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান বই (ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, দশম, ১১তম, ১২তম, ১৩তম, ১৪তম অধ্যায়)
12.নবম-দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বই (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম অষ্টম, নবম, দশম, ১১তম, ১২তম, ১৩তম, ১৪তম)।
13.নবম-দশম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান (চতুর্থ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, ১২তম, ১৩তম, ১৪তম)।
14.উচ্চ মাধ্যমিক পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র (চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, নবম, দশম, ১২তম অধ্যায়)।
15.নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন (দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম অধ্যায়)।
16.নবম-দশম শ্রেণির জীববিজ্ঞান (দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, নবম, ১১তম, ১২তম অধ্যায়)।
17.মাধ্যমিক কম্পিউটার শিক্ষা (সব অধ্যায়)।
18.তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি)।
19.অনুশীলনের জন্য দুটি সহায়ক বই
20.বিজ্ঞানের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে দেখেছি, শব্দ, আলো, চুম্বক, ট্রানজিস্টর, বায়ুমণ্ডল, এসিড, ধাতু, প্লান্ট নিউট্রিশন, উদ্ভিদজগৎ, ফুল, মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্র, রক্ত, পুষ্টি, ভাইরাস থেকে প্রশ্ন বেশি আসে। কম্পিউটার ও প্রযুক্তি অংশে কম্পিউটারের ইতিহাস, প্রকারভেদ, বিবর্তন, ইনপুট-আউটপুট, স্মৃতি, স্টোরেজ, অপারেটিং সিস্টেম, ভাইরাস, সংখ্যাপদ্ধতি, ইন্টারনেট, ই-মেইল, ক্লাউড কম্পিউটিং থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। প্রায় ৭০ শতাংশ প্রশ্ন এগুলো থেকেই আসে। তাই এই টপিকগুলো বিস্তারিত পড়েছি। এরপর অন্য টপিকগুলো পড়েছি। বই দাগিয়ে ও নোট করে পড়েছি। সহায়ক ও মডেল টেস্টের বই থেকেও অনুশীলন করেছি। আমার প্রায় ৯০ শতাংশ প্রশ্ন কমন পড়েছিল।
21.বিভিন্ন সহায়ক বইয়ে ভিন্ন রকম উত্তর থাকে। সে ক্ষেত্রে বোর্ড বইয়ের তথ্য সঠিক ধরতে হবে। মানসিক চাপমুক্ত হয়ে পরীক্ষা দিন। নিশ্চিত হয়ে উত্তর করাই ভালো। কারণ একটি ভুল উত্তরে ০.৫ নম্বর কাটা যাবে।
22.খুব প্রয়োজন মনে হলে (যেমন-কাট মার্ক আন্দাজ করে প্রয়োজনে) ৫০-৫০ চান্স থাকলে উত্তর দিতে পারেন। দুটি ভুল উত্তর বের করতে পারলে এটি সম্ভব হবে।
Discussion about this post