বিসিএস বিশেষ আয়োজন-১
————————————————————–
প্রিলিমিনারিতে টিকতে হলে এখন থেকেই চাই জোর প্রস্তুতি।
বিসিএস পরীক্ষার ডিফিকাল্টি লেভেল আমার কাছে কিছুটা ওভাররেটেড বলেই মনে হয়েছে। এটা তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটি পরীক্ষা-এটা যতটা সত্য, সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতায় আসার মতো প্রার্থী খুব বেশি সাধারণত থাকে না, এটা আরো বেশি সত্য। দুটি ফ্যাক্ট শেয়ার করি।
এক. এই এক্সামে ৫০ শতাংশ ক্যান্ডিডেট যায় জাস্ট ঘুরতে, কোনো কারণ ছাড়াই, অনেকটা গেট-টুগেদার করতে। (মজার ব্যাপার হলো, এদের কেউ কেউ সফলও হয়ে যায়! ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ টাইপের আরকি!)
দুই. রিয়েল কম্পিটিটিশনে আসার মতো ক্যান্ডিডেট থাকে মাত্র ৭ শতাংশের মতো। এর মানে, আপনার কম্পিটিটর আপনি যতটা ভাবছেন, তত বেশি না।
প্রিলিমিনারির একটি সিলেবাস পিএসসি প্রণয়ন করে দিলেও প্রকৃত অর্থে বিসিএসের কোনো সুনির্দিষ্ট সিলেবাস নেই। এই পরীক্ষায় শত ভাগ প্রস্তুতি নেওয়া কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। ৩৫তম লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে লিখতে গিয়ে বলেছিলাম, শতভাগ শিখেছি ভেবে তার ৬০ শতাংশ ভুলে গিয়ে বাকি ৪০ শতাংশকে ঠিকমতো কাজে লাগানোই আর্ট। এই পরীক্ষার বেলায়ও কথাটি সমভাবে প্রযোজ্য। প্রিলিমিনারিতে ভালো করার জন্য কী কী পড়বেন, সেটা জানার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, কী কী বাদ দিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করা।
৩৫তম বিসিএস প্রিলি : কিছু পর্যবেক্ষণ
* ক খ গ ঘ-এই সিরিয়ালটা বাম থেকে ডানে না দিয়ে ওপর-নিচে দেওয়ায় অনেক ক্যান্ডিডেটই অন্তত তিন-চারটা জানা প্রশ্নের উত্তর ভুল দাগিয়েছেন।
* এটি ‘এসো নিজেরা করি’ টাইপ কোনো প্রশ্ন না, তাই পরীক্ষার হলে কথা বলেও তেমন কোনো লাভ হয়নি।
* কোচিং সেন্টারে দৌড়ঝাঁপ করে আর গাইড বই পড়ে তেমন কোনো কাজই হবে না, যদি না নিজের মাথায় কিছু থাকে। ভালো প্রস্তুতি নেওয়া অপেক্ষা ভালো পরীক্ষা দেওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
* ‘অমুক কোচিং সেন্টারের সাজেশনে এত পার্সেন্ট কমন’, ‘তমুক গাইডের এতসংখ্যক প্রশ্ন কমন’-
এসব কথা বলার দিন শেষ হতে চলেছে, এটা আমার মনে হয়েছে।
* একেকভাবে ভাবলে একেক রকম উত্তর হয়-এমন প্রশ্ন অন্যান্যবারের তুলনায় গেল প্রিলিমিনারিতে বেশি ছিল। পিএসসি ইচ্ছা করেই এ গেমটা খেলে, যাতে কেউ সেগুলো উত্তর না করে। নেগেটিভ মার্কিংয়ের ফাঁদে পড়ে বিসিএসের আসর থেকে ছিটকে পড়েছেন অনেকেই। লোভে পাপ, পাপে নেগেটিভ মার্কস!
* প্রশ্নটি ভালোভাবে দেখলে খেয়াল করবেন, আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড যা-ই হোক না কেন, আপনি কোনো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন না।
* এখন থেকে সব সময় পরীক্ষা এ স্টাইলেই হলে প্রশ্নব্যাংক, ডাইজেস্ট, জব সলিউশন, কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ম্য কমে যাবে কিংবা ওদের সেবাদানের ধরন বদলাতে হবে। স্রেফ মুখস্থ বিদ্যার জোরে আমলাতন্ত্রে আসারও দিন শেষ।
ধারাবাহিক আয়োজনে বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে লিখব। আজ প্রথম পর্বে থাকছে বাংলা বিষয়ে কিছু আলোচনা। বাংলা মাতৃভাষা হওয়ায় অনেকের কাছেই মনে হতে পারে, ভালো প্রস্তুতি না নিয়েও এ বিষয়ে ভালো মার্কস পাওয়া যাবে। কিন্তু প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নিয়মই হলো, সহজ মার্কসটি যায় না পাওয়া সহজে।
বাংলার জন্য
আগের বিসিএস পরীক্ষা
আর জব সলিউশনের ভাষা ও সাহিত্যের প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলুন।
ওখান থেকে অত
কমন হয়তো পাবেন
না, কিন্তু একটা
ধারণা পাবেন-কোন
ধরনের প্রশ্ন আপনি
পড়বেন কিংবা বাদ
দিয়ে পড়বেন! যেকোনো
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে এ
প্রশ্নের প্যাটার্ন ম্যাপিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভাষা
কোথা থেকে পড়বেন?
আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+ জব সলিউশন+ নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ বই+ হায়াৎ মামুদের ভাষা-শিক্ষা+গাইড বই
কিভাবে পড়বেন?
সিলেবাসটা ভালো করে দেখে নিন। কোন কোন টপিক আছে তা একটা কাগজে লিখে ফেলুন। এরপর টপিক ধরে ধরে ব্যাকরণ আর গাইড বইয়ের সেই অধ্যায়গুলো ভালোভাবে দাগিয়ে বারবার পড়ুন। যে প্রশ্নগুলো বারবার পড়লেও মনে থাকে না, সেগুলো মনে রাখার চিন্তা বাদ দিন। একটা কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, একটা সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর। ৫ নম্বরের কঠিন প্রশ্নের পেছনে সময় দেওয়ার চেয়ে বরং ২০ নম্বরের সহজ প্রশ্নের পেছনে সেই একই সময় দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। জোর করে আর আবেগ দিয়ে নয়, বুদ্ধি দিয়ে বুঝেশুনে পড়ুন।
কোথা থেকে পড়বেন?
আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+জব সলিউশন+সৌমিত্র শেখরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা+হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি+মাহবুবুল আলমের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস+গাইড বই
কিভাবে পড়বেন?
আগের বিসিএস প্রিলিমিনারি আর লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন স্টাডি করে কোন ধরনের প্রশ্ন আসে, কোন ধরনের প্রশ্ন আসে না, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা নিন। এরপর রেফারেন্স বই দাগিয়ে বাদ দিয়ে দিয়ে পড়বেন। রেফারেন্স বইয়ের সবটুকু কাজে লাগে না, তাই সবটুকু পড়ার সহজাত লোভ সামলাতে শিখুন। খুবই ভালো হয়, যদি সাহিত্য অংশটি পড়ার সময় লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলা যায়। কারণ এর জন্য বাড়তি কোনো কষ্ট করতে হবে না আপনাকে।
মুখস্থ করার চেষ্টা না করে বারবার পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করা উত্তম। পরীক্ষার হলে কিছু প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই পারবেন না-এটা মাথায় রেখে সাহিত্য অংশের প্রস্তুতি নিন, দেখবেন মাথা ঠাণ্ডা থাকবে, অন্যান্য বিষয়ের প্রস্তুতিও ভালো হবে।
আগামী পর্বে লিখব ইংরেজি বিষয়ের প্রস্তুতি নিয়ে। সে পর্যন্ত পড়তে থাকুন, ভালো থাকুন। গুড লাক!
কিছু টিপস
* দুই-তিনটা জব সলিউশন কিনে দশম থেকে ৩৫তম বিসিএস ও পিএসসির নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নগুলো (সম্ভব হলে অন্তত ২৫০-৩০০ সেট) বুঝে সলভ করে ফেলুন। দাগিয়ে রিভিশন দিন অন্তত দুই-তিনবার।
* দুই সেট রিটেনের গাইড বই কিনে আগের বছরের প্রশ্ন পড়ে ফেলুন। যে টপিকগুলো প্রিলির সঙ্গে মিলে সেগুলো সিলেবাস ধরে পড়ে শেষ করে ফেলুন। এতে আপনার রিটেনের অর্ধেকেরও বেশি পড়া হয়ে যাবে। রিটেনের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি পড়া প্রিলির সঙ্গে মিলে যায়।
* প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে দৈনিক পত্রিকা, ইন্টারনেট আর রেফারেন্স বই। কষ্ট হলেও রেফারেন্স বই ওল্টাতে পারলে প্রিলিমিনারি আর রিটেন দুটোতেই লাভ হবে।
* অনেকে প্রথমে রেফারেন্স বই পড়ে, পরে প্রশ্ন সলভ করে। এতে দুইটা সমস্যা আছে। এক. বেশি প্রশ্ন সলভ করার সময় পাওয়া যায় না। যত বেশি প্রশ্ন সলভ করবেন, ততই লাভ। দুই. রেফারেন্স বইগুলোর বেশির ভাগ অংশই বিসিএস পরীক্ষার জন্য কাজে লাগে না, অথচ পুরো বই পড়তে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং বিসিএস নিয়ে অহেতুক ভীতি তৈরি হয়। তা ছাড়া অত কিছু মনে রাখার দরকারও নেই। তাই উল্টো পথে হাঁটুন। আমিও তা-ই করেছিলাম।
——————————————-
—————————————————-
বিসিএস বিশেষ আয়োজন-২
ইংরেজিতে ভালো করার মূলমন্ত্র দুটি
পার্থক্যটা কোথায়? Stop-এর পর কি সব সময়ই verb+(-ing) হবেই? এটা বুঝতে কী লাগে? শুধুই গ্রামার? নাহ! কমনসেন্সও লাগে। ইংরেজিতে ভালো করার মূলমন্ত্র দুটি-
এক. বানান ভুল করা যাবে না।
দুই. গ্রামাটিক্যাল ভুল করা যাবে না।
এ দুটি ব্যাপার মাথায় রেখে একেবারে সহজ ভাষায় ইংরেজিতে লেখার চর্চা করুন। ফেসবুকে সহজ ইংরেজিতে একটু বড় বড় স্টেটাস আর কমেন্ট লিখুন।
ওপরের কথাগুলো কেন বললাম? এবারের লিখিত পরীক্ষার ইংরেজি প্রশ্নটা দেখলে বুঝতে পারবেন, লিখিত পরীক্ষার কিছু কিছু ব্যাপার মাথায় রেখে প্রিলির প্রস্তুতি নিলে চাকরি পাওয়াটা সহজ হবে। বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অনুবাদ। খুব একটা সহজ অনুবাদ বিসিএসে সাধারণত কখনোই আসে না। এ অংশটি এখন থেকেই একটু ভিন্নভাবে পড়ে রাখতে পারেন। বিভিন্ন ইংরেজি আর বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় নিয়মিত অনুবাদ করুন। কাজটি করা কষ্টকর, কিন্তু বাজি ধরে বলতে পারি, খুবই কাজে দেবে।
এখন প্রিলি নিয়ে কথা বলছি। ল্যাংগুয়েজ পার্টে গ্রামার ও ইউসেজের ওপর প্রশ্ন আসবে। কয়েকটি গাইড বই ও জব সলিউশন থেকে প্রচুর প্র্যাকটিস করুন। ইংলিশ ফর দ্য কম্পিটিটিভ এক্সামস, অ্যা প্যাসেজ টু দ্য ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ, অক্সফোর্ড অ্যাডভান্সড লার্নারস ডিকশনারি, লংম্যান ডিকশনারি অব কনটেম্পোরারি ইংলিশ, মাইকেল সোয়ানের প্রাক্টিক্যাল ইংলিশ ইউসেজ, রেইমন্ড মারফির ইংলিশ গ্রামার ইন ইউজ, জন ইস্টউডের অক্সফোর্ড প্র্যাকটিস গ্রামারসহ আরো কিছু প্রামাণ্য বই হাতের কাছে রাখবেন। এসব বই কষ্ট করে উল্টেপাল্টে উত্তর খোঁজার অভ্যাস করুন, অনেক কাজে আসবে। যেমন-এনট্রাস্ট শব্দটির পর ‘টু’ হয়, আবার ‘উইথ’ও হয়। ডিকশনারির উদাহরণ দেখে লিখে লিখে শিখলে ভুলে যাওয়ার কথা না।
ভোকাবুলারির জন্য ম্যাক ক্যারথি এবং ও-ডেলের ইংলিশ ভোকাবুলারি ইন ইউজ (সব খণ্ড), নর্ম্যান লুইসের ওয়ার্ড পাওয়ার মেইড ইজিসহ দু-একটি দেশি বইও দেখতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার আগের বছরের প্রশ্নগুলো থেকে শুধু ভোকাবুলারি সেগমেন্টটা সলভ করলে কাজে লাগবে। নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়ুন। বিভিন্ন ইস্যুর ওপর রিপোর্ট, সম্পাদকীয় আর চিঠিপত্র অর্থ বুঝে সময় নিয়ে পড়ুন, রিটেনেও কাজে লাগবে।
লিটারেচারের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মাথায় রাখবেন, দু-একটি প্রশ্নের উত্তর যাঁরা ইংরেজিতে অনার্স-মাস্টার্স, তাঁরাও পারবেন না। নেগেটিভ মার্কিং হয় এমন কম্পিটিটিভ পরীক্ষার নিয়মই হলো, সব কটার উত্তর করা যাবে না। আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন+জব সলিউশন+গাইড বই আর সঙ্গে ইন্টারনেটে ইংলিশ লিটারেচার বেসিকস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে কাজে আসবে।
৩৫তম বিসিএস প্রিলিতে একটা প্রশ্ন ছিল এ রকম-Women are too often ___ by family commitments. (ক) confused
(খ) controlled (গ) contaminated (ঘ) constrained
এটা কেন
লিখলাম? আমাকে একটা
প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে
হয়, ‘ভাইয়া, ইংলিশ
গ্রামারের জন্য কোন
বইটা পড়ব?’ আমি
দুইটা বইয়ের নাম
বলি-Oxford Advanced
Learner’s Dictionary আর Longman Dictionary of
Contemporary English. সঙ্গে আরো কিছু
বইয়ের কথাও বলি।
কিন্তু কে শোনে
কার কথা! ওরা
তো আমার কাছ
থেকে গাইড বইয়ের
নামই জানতে চেয়েছিল। আর আমি কিনা!
অথচ গতবার গাইড
বই থেকে কয়টা
প্রশ্ন ‘কমন’ এসেছে?
আপনি লংম্যানের ডিকশনারির constrain এন্ট্রিটাতে গিয়ে দেখুন। ওই
এন্ট্রির শেষ এক্সাম্পলটা- Women’s employment opportunities are often severely
constrained ‘by’ family commitments. কী বুঝলেন?
প্রশ্ন কোথা থেকে
হয়? যাঁরা প্রশ্ন
করেন, তাঁদের কী
সময় আছে গাইড
বই দেখে প্রশ্ন
করার? কিংবা কোচিং
সেন্টারের গাদা গাদা
‘শিটমার্কা’ শিট পড়ার?
সত্যিই নেই। গতবারের
বিসিএস পরীক্ষা সেটা
প্রমাণ করে দিয়েছে।
একটা গ্রামারের প্রশ্ন
না পারলে আমরা
গাইড বই খুঁজতে
শুরু করি। একেক
গাইডে একেক রকমের
উত্তর। এরপর কোচিংয়ের স্যারদের পেছনে ছুটি।
কী দরকার, ভাই?
ওই গাইড বইয়ের
লেখক কিংবা ওই
কোচিংয়ের স্যার কি
আপনার চেয়ে খুব
বেশি জানেন? কী
হয় একটু কষ্ট
করে ডিকশনারির এন্ট্রিতে গিয়ে এক্সাম্পলগুলো স্টাডি
করে শিখলে? একটা
প্রশ্ন কিন্তু আরো
কয়েকটা প্রশ্নের সূতিকাগার। ওই বইগুলো হচ্ছে
সব গাইড বইয়ের
বাইবেল। ওখানে যা
আছে সেটাই কারেক্ট। ব্যাপারটা খুব কঠিন
কিছু না। বই
দুটির পৃষ্ঠা উল্টে
উল্টে প্রশ্ন সলভ
করার প্র্যাকটিস করবেন।
প্রথম প্রথম একটু
বিরক্ত লাগবে, আস্তে
আস্তে অভ্যাস হয়ে
গেলে সেটি নেশায়
পরিণত হবে। আমি
‘আপনি আচরি ধর্ম
অপরে শেখাও’ নীতিতে
বিশ্বাসী। আমি নিজে
ওই কাজটা করেছি,
তাই আপনাদেরও করতে
বলছি। এই কষ্টটা
করতে না পারলে,
আপনার জন্য একটাই
পরামর্শ-ভুল শিখুন,
ভুল করুন, ফেল
করুন।
—————————–
————————————————–
বিসিএস বিশেষ আয়োজন ৩
গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতার জন্য চাই বারবার চর্চা
বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নিয়ে লিখছেন ৩০তম বিসিএসে প্রথম সুশান্ত পাল। ছয় পর্বের ধারাবাহিকে আজ থাকছে গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা
৩৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারির আগে যে সময়টা আছে, তা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রিলির সঙ্গে মিলে রিটেনের এমন কিছু পড়াসহ প্রিলির প্রস্তুতি খুব ভালোভাবে নেওয়া সম্ভব। প্রিলি হচ্ছে রিটেনের পাসপোর্ট। এটিতে পাস করা শুধু নিজের যোগ্যতার ওপরই নির্ভর করে না, ভাগ্যের ওপরও অনেকটুকু নির্ভর করে। প্রিলিতে পাস করা যতটা আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, রিটেনে ভালো করা ততটাই আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। তাই খুব হিসাব করে প্রিলির জন্য প্রস্তুতি নিন। অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের না হয়ে বাসায় অন্তত ১৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করুন। প্রতিদিন আগের দিনের চেয়ে অন্তত ১৫ মিনিট হলেও বেশি পড়ুন। একটা পড়া শেষ করার টার্গেট পূরণ করতে পারলে নিজেকে ছোটখাটো কিছু উপহার দিন; বই কেনা, মুভি দেখা, ঘুরে আসা, ফেসবুকিং করা, ফোনে কথা বলা-এ রকম কিছু। এতে পড়ার উৎসাহ আর গতি দুই-ই বাড়বে। মানুষ তো প্রণোদনায় কাজ করে। একটা পড়া পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে অন্য একটা সহজ পড়া হাতে নিন। আপনি যা হতে চান, কিছু সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন, সেটা হয়ে গেলে আপনি আর আপনার চারপাশের মানুষের কেমন লাগবে, জীবনটা কেমন করে বদলে যাবে। এতে পড়ার ক্লান্তি কেটে যাবে অনেকখানি। মনোযোগ নষ্ট করে-এমন কোনো কিছু হাতের কাছে না রেখে পড়তে বসুন।
অনেক কথা হলো। এখন গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা নিয়ে বলছি।
#গাণিতিক যুক্তি
পরীক্ষায় যে ম্যাথস আসে, সেগুলো সহজ, আপনি নিশ্চয়ই পারবেন; কিন্তু হয়তো গড়ে ১ মিনিটে পারবেন না। এর জন্য আগে থেকে প্র্যাকটিস করার সময় শর্টকাটে সলভ করা শিখতে হবে। প্রিলিতে এমন একটিও ম্যাথস আসে না, যা শর্টকাটে করা যায় না। পদ্ধতি শিখে নিন, নিজের পদ্ধতি নিজে বানিয়ে নিতে পারলে খুব ভালো হয়। তাহলে আর ওই ধরনের ম্যাথস ভুল হবে না। শর্টকাট পদ্ধতির কোনো গ্রামার নেই, আপনার উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি আরেকজনের সঙ্গে নাও মিলতে পারে, অঙ্ক মিললেই হলো। বইয়ের পাতায় পাতায় প্রশ্নের পাশেই শর্টকাট ফর্মুলা লিখে মান বসিয়ে সলভ করুন। শুধু ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে আর প্রশ্নের পাশের ছোট জায়গাটি ব্যবহার করে যদি সব ম্যাথস সলভ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন, তবে আমি বলব, আপনার প্রস্তুতি বেশ ভালো। প্রিলির প্রায় ম্যাথসই ব্যাকট্র্যাকিং মেথডে করা যায়। মানে অপশনের উত্তরগুলো সূত্রে কিংবা প্রশ্নে বসিয়ে সলভ করা যায়। এ ছাড়া POE মেথড কাজে লাগাতে পারেন। এটি হলো, চারটি অপশনের মধ্যে যে দুটি উত্তর হওয়ার সম্ভাবনা কম, সেগুলো বাদ দিয়ে বাকি দুটি নিয়ে ভাবা। এই দুটি টেকনিক কাজে লাগাতে পারলে কম সময়ে ম্যাথস সলভ করতে পারবেন। ম্যাথসের জন্য অনেকেই বোর্ডের টেক্সট বই পড়েন। এতে সমস্যা হলো, বাড়তি অনেক কিছু পড়া হয়ে যাবে, যেগুলো পড়ার আদৌ কোনো দরকার নেই। এত সময়ও পাবেন না। তার চেয়ে কমপক্ষে দুটি ভালো গাইড বইয়ের কিংবা জব সলিউশনের একেবারে সব ম্যাথস সলভ করে ফেলতে পারেন। ভালো বই মানে প্র্যাকটিস করার জন্য অনেক বেশি প্রশ্ন আছে, এমন। কোনো চ্যাপ্টার শুরু করলে শেষ না করে টেবিল থেকে উঠবেন না। প্রিলির পড়া পড়তে হয় একটানা, বাসা থেকে বের না হয়ে, টেবিল থেকে না উঠে। এরপর দুটি মডেল টেস্টের বইয়ের সব টেস্ট দিন। আপনি সব ম্যাথসই পারেন, কিন্তু খুব দ্রুত সলভ করতে পারেন না-এভাবে প্রস্তুতি নেওয়া আর না নেওয়া একই কথা।
এ অংশের
প্রশ্নগুলো একটু ট্রিকি
হওয়ারই কথা। মাথা
ঠাণ্ডা রেখে, ভালোভাবে প্রশ্ন পড়ে, পূর্ণ
মনোযোগ দিয়ে উত্তর
করতে হবে। এ
অংশের প্রশ্ন হবে
সহজ, এতটাই সহজ
যে কঠিনের চেয়েও
কঠিন। তিন-চার
সেট গাইড বই
কিনুন, সঙ্গে তিন-চারটি আইকিউ
টেস্টের বই। এগুলো
ছাড়াও আগের বিসিএস
লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিং
এমবিএ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নব্যাংক সলভ করে
ফেলুন। এ অংশে
ফুল মার্কস পাবেন
না, এটা মাথায়
রেখে প্রস্তুতি নিন।
গাইড বই, আইকিউ
টেস্টের বই, আর
গুগলে ইংরেজিতে ‘ভার্বাল/অ্যাবস্ট্র্যাক্ট/মেকানিক্যাল রিজনিং/স্পেস রিলেশনস/নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি/স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্র্যাকটিস’ কিংবা ার্বাল/অ্যাবস্ট্র্যাক্ট/মেকানিক্যাল রিজনিং/স্পেস রিলেশনস/নিউমারিক্যাল অ্যাবিলিটি/স্পেলিং অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট’ লিখে সার্চ
করে বিভিন্ন সাইটে
ঢুকে নিয়মিত সলভ
করুন। এ অংশে
প্রশ্ন ‘কমন’ আসার
কথা নয়, তাই
ভালো করতে হলে
অনেক বেশি প্র্যাকটিস করার কোনো বিকল্প
নেই। এ অংশে
ভালো করার জন্য
নলেজের চেয়ে কমনসেন্স বেশি কাজে লাগবে।
——————————————————
———————————————————–
বিসিএস বিশেষ আয়োজন- ৪
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভালো করতে হলে বিজ্ঞানের ছাত্র হতে হয় না
বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি নিয়ে লিখছেন ৩০তম বিসিএসে প্রথম সুশান্ত পাল। ছয় পর্বের ধারাবাহিকে আজ থাকছে সাধারণ বিজ্ঞান এবং কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি
প্রিলি হলো স্রেফ পাস করার পরীক্ষা, জাস্ট রিটেন দেওয়ার পাসপোর্ট। এর কাছে ওর কাছে শুনে অন্ধের মতো না পড়ে একটু বুঝেশুনে প্রিপারেশন নিলে প্রিলিতে ফেল করা সত্যিই কঠিন। এ ক্ষেত্রে সব কিছু পড়ে বেশি খুশি হওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। কী কী পড়বেন, সেটা ঠিক করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কী কী বাদ দিয়ে পড়বেন সেটা ঠিক করা। যা কিছুই পড়ুন না কেন, আগে ঠিক করে নিন, সেটা পড়া আদৌ দরকার কি না। চাকরিটা পেয়ে গেলে জ্ঞানী হওয়ার জন্য অন্তত ৩০ বছর সময় পাবেন। জ্ঞান অর্জন করলে জ্ঞানী হবেন, আর মার্কস অর্জন করলে ক্যাডার হবেন-এটা মাথায় রাখুন।
সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা ছাত্র না-এটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেবেন না। বিজ্ঞানের ছাত্ররা এ অংশটিতে অবহেলা করলে এতে মার্কস কম পাবেন। বিশ্বাস না হলে করেই দেখুন! এ অংশটির প্রশ্নগুলো এমনভাবে করা হয়, যাতে যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্যান্ডিডেটই একই সুবিধা কিংবা অসুবিধা ভোগ করেন। এ অংশের জন্য দুটি ভালো প্রকাশনীর অনেক বেশি প্রশ্ন দেওয়া আছে-এমন গাইড বইয়ের সব প্রশ্নের উত্তর শিখে ফেলুন। একটা বুদ্ধি দিই। দুটি গাইডের আলোচনা অংশ পড়ার চেয়ে তৃতীয় একটি গাইডের প্রশ্নগুলো পড়ে ফেলা ভালো। এতে নতুন কিছু প্রশ্নের উত্তর জেনে যাবেন। সঙ্গে একটা জব সলিউশনের প্রশ্নগুলোও পড়ে ফেলুন। প্রিলির জন্য যত বেশি প্রশ্ন পড়বেন, ততই লাভ। সিলেবাস দেখে টপিক ধরে ধরে কী কী দরকার, শুধু ওইটুকুই পড়বেন। গাইডেও অনেক কিছু দেওয়া থাকে, যেগুলোর কোনো দরকারই নেই। দুটি লিখিত পরীক্ষার গাইড বই থেকে শুধু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও টীকাগুলো পড়ে ফেলুন, খুবই কাজে লাগবে। পত্রিকা আর ইন্টারনেট থেকে প্রযুক্তি বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করে নিতে পারেন।
প্রিলির জন্য হিসাব করে পড়ুন।
প্রতিদিনের পড়ার মোট সময়ের এক-তৃতীয়াংশ সময় রিটেনের জন্য দেবেন। তবে রিটেনের সব পড়া না পড়ে দুই ধরনের পড়া এ সময় রেডি করে রাখতে পারেন।
এক. যে অংশগুলো প্রিলির সিলেবাসের সঙ্গে মেলে, সেগুলো পড়ে ফেলুন। সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা, শর্ট নোটস, ব্যাকরণসহ আরো কিছু অংশ পড়ে ফেলতে পারেন।
দুই. যেসব
সেগমেন্টে ক্যান্ডিডেটরা সাধারণত
কম মার্কস পায়,
কিন্তু বেশি মার্কস
তোলা সম্ভব, সেগুলো
নির্ধারণ করুন এবং
নিজেকে ওই সেগমেন্টগুলোতে ভালোভাবে প্রস্তুত করে কম্পিটিশনে আসার চেষ্টা করুন।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন, টীকা,
শর্ট নোটস, সারাংশ,
সারমর্ম, ভাবসমপ্রসারণ, অনুবাদ
ও ব্যাকরণ ইত্যাদি
ভালোভাবে পড়ুন। এ
সময় বড় প্রশ্ন
পড়ার কোনো দরকার
নেই।
——————————————————-
—————————————————————————-
বিসিএস বিশেষ আয়োজন (৫)
সাধারণ জ্ঞানে অতি পরিশ্রম নয়, হিসেবি পরিশ্রম করুন
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির প্রস্তুতির জন্য আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন, অন্তত দুটি জব সলিউশন, পেপার, ইন্টারনেট, অন্তত তিন-চারটি গাইড বই আর কিছু রেফারেন্স বইয়ের দরকার হবে। কিছু টিপস দিচ্ছি, এগুলো পড়ে নিজের মতো করে কাজে লাগাবেন।
* প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন। একেবারেই সামপ্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসবে বড়জোর সাত-আটটি, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্তত দুই-তিনটি পত্রিকা পড়ে উত্তর করা যায়। বাকি চার-পাঁচটিকে মাফ করে দিলে কী হয়!
* গাইড বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রেফারেন্স বই-যেমন, মোজাম্মেল হকের উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি দ্বিতীয়পত্র, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে বই (যেমন, আরিফ খানের সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান), মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই (যেমন, মঈদুল হাসানের মূলধারা : ‘৭১), নীহারকুমার সরকারের ছোটদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নাগরিকদের জানা ভালো, আকবর আলি খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি, আব্দুল হাইয়ের বাংলাদেশ বিষয়াবলি ইত্যাদি বই পড়ে ফেলুন। বিসিএস পরীক্ষার জন্য যেকোনো বিষয়ের রেফারেন্স পড়ার একটা ভালো টেকনিক হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের জন্য না পড়ে, মার্কস অর্জনের জন্য পড়া। এটি করার জন্য প্রচুর প্রশ্ন স্টাডি করে খুব ভালোভাবে জেনে নেবেন কোন কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে না। প্রশ্নগুলো ভালোভাবে দেখে, এর পর রেফারেন্স বই থেকে বাদ দিয়ে-দিয়ে পড়ুন। এতে অল্প সময়ে বেশি পড়তে পারবেন।
* চার ঘণ্টা না বুঝে স্টাডি করার চেয়ে এক ঘণ্টা প্রশ্ন স্টাডি করা অনেক ভালো। বুঝে পড়লে চার ঘণ্টার পড়া দুই ঘণ্টায় সম্ভব। বেশি বেশি প্রশ্নের প্যাটার্ন স্টাডি করলে, কিভাবে অপ্রয়োজনীয় টপিক বাদ দিয়ে পড়া যায়, সেটি শিখতে পারবেন। এটি প্রস্তুতি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ। এর জন্য যথেষ্ট সময় দিন। অন্যরা যা যা পড়ছে, আমাকেও তা-ই তা-ই পড়তে হবে-এ ধারণা ঝেড়ে ফেলুন। সব কিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। একটি অপ্রয়োজনীয় টপিক একবার পড়ার চেয়ে প্রয়োজনীয় টপিকগুলো বারবার পড়ুন।
* অনলাইনে চার-পাঁচটি পত্রিকা পড়বেন। পুরো পত্রিকা না পড়ে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় টপিকের আর্টিকেলগুলোই শুধু পড়বেন। একটি পত্রিকায় এ ধরনের দরকারি লেখা থাকে খুব বেশি হলে দুই-তিনটি। প্রয়োজনে সেগুলোকে ওয়ার্ড ফাইলে সেভ করে রাখুন, পরে পড়ে ফেলুন।
* একটি জিনিস মনে রাখতে না পারলে আবারও পড়ুন। এর পরও মনে রাখতে না পারলে আরো একবার পড়ুন। যদি এর পরও মনে না থাকে, তবে সেটি মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন। একটি কঠিন প্রশ্ন মনে রাখার চেষ্টা পাঁচটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়। কী লাভ! কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর।
* সাল-তারিখ মনে থাকে না। এটি কারোরই থাকে না। বারবার পড়তে হয়। অনেক সেট প্রশ্ন পড়ার সময় ও রকম সাল-তারিখ বারবার আসবে। বিভিন্ন তথ্য মনে না থাকলে বারবার রিভিশন দিন। মুখস্থ না করে প্রশ্নের একটি ছবি মনে গেঁথে নিন। ফেসবুকে সামপ্রতিক নানা তথ্যসংবলিত পোস্টগুলো বেশি বেশি পড়ুন।
* আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির কিছু কিছু প্রশ্ন সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিকতা হারায়। সেগুলো বাদ দিন। সব চেয়ে ভালো হয়, যদি বিভিন্ন টপিক ধরে ধরে গুগলে সার্চ করে করে পড়েন। প্রয়োজনে টপিকের নাম ইউনিকোডে বাংলায় টাইপ করে সার্চ করুন। গুগলে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই পাবেন।
* বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতা নিয়মিত দেখবেন। সামপ্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানা আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদর দপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
* ম্যাপ মুখস্থ করতে বসবেন না যেন! ওটি করতে যে সময় নষ্ট হবে, ওই সময় পড়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। ছড়া-গান-কবিতা দিয়ে মুখস্থ করা স্রেফ সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছুই না।
* গ্রুপ স্টাডির একটি বাজে দিক হচ্ছে, যে যা-ই বলে, সেটিকে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। এই যেমন ‘সংবিধান মুখস্থ করতে না পারলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যাবে না’-এ রকম কিছু ভুল কথাকেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। পাবলিক লাইব্রেরিতে কিংবা এর সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেও কোনো কাজ হবে না, যদি নিজে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করে পড়াশোনা না করেন।
অঙ্ক-ইংরেজি ভালো জানলে ভালো মার্কস পাওয়া যাবেই-তা বলা যায়। কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে খুব দক্ষ হলেই যে ভালো মার্কস পাওয়া যাবে-এমনটা নাও হতে পারে। তাই সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় আবেগ নয়, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পড়ুন। সাধারণ জ্ঞানে অতি-পরিশ্রম নয়, হিসেবি-পরিশ্রম করুন। আর একটি ব্যাপার মাথায় রাখবেন-সাধারণ জ্ঞানে আপনার চেয়ে অনেক ভালো জানেন-এমন কারোর সঙ্গে যত কম আলোচনা করবেন, আপনার প্রস্তুতি ততই ভালো হবে! সাধারণ জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যাতে আপনার জানার পরিধি একেবারে জিরো লেভেলে থাকলেও আপনি সেটিকে পরিশ্রম করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় লেভেলে উন্নীত করতে পারবেন।
দুই-তিন সেট মডেল টেস্টের গাইড থেকে প্রতিদিনই অন্তত দুই-তিনটি টেস্ট দিয়ে দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন। সব কথার শেষ কথা : বিসিএস মানেই সাধারণ জ্ঞান-এ ভুল আপ্তবাক্যটি মাথায় না রেখে সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রস্তুতি নিন।
Discussion about this post