আপনার জীবনবৃত্তান্ত একটি সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার একটি কাজের জন্য একটি প্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন প্রাথমিক মাধ্যম। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীরা অনেক সঠিক মনোযোগ দিতে এবং সঠিকভাবে তাদের জীবনবৃত্তান্ত প্রস্তুত না। এর ফলে, অনেক সম্ভাবনাময় চাকরিপ্রার্থীরা তাদের সম্ভাব্য উপস্থাপন ও প্রমাণ করার সুযোগ পেতে কাজের সাক্ষাতকার জন্য কল পাবেন না।
জীবনবৃত্তান্ত তৈরির সময় নিচের বিষয়গুলোতে মনযোগ দিতে হবেঃ
- সাধারণত একজন নিয়োগদাতা একটা জীবনবৃত্তান্ত দেখতে ৩০ সেকেন্ডের বেশী সময় দেন না।সুতরাং জীবনবৃত্তান্ত হতে হবে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট। অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক তথ্য পরিহার করা উচিত।।
- একজন সদ্য পাশ করা অথবা অনভিজ্ঞ চাকুরিপ্রাথীর জীবনবৃত্তান্ত এক থেকে দুই পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
- আপনার জীবনবৃতান্ত হচ্ছে আপনাকে তুলে ধরার একটি উপায়। তাই এটি আকর্ষনীয় হওয়া বাঞ্চনীয়। কিন্তু রঙিন কাগজ বা রঙিন কালির ব্যবহার করা উচিত নয়। কোনো তথ্য হাইলাইট করার জন্য বোল্ড, ইটালিক বা আন্ডারলাইন হতে হবে
- মনে রাখবেন জীবনবৃত্তান্তে যেকোন প্রকার ব্যাকারণগত অথবা বানানগত ভুল নিয়োগদাতার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আনতে পারে। এটি থেকে ধারণা লাভ করা যায় যে আপনি কোনো কাজই সঠিকভাবে করতে পারেন না। সুতরাং জীবনবৃতান্ত তৈরি করার পর, খুব ভালোভাবে নিজে এবং ইংরেজীতে দক্ষ এমন কারো দ্বারা যাচাই করে নিন।
- যখন কোনো নির্দিষ্ট চাকুরীর বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করবেন, চেষ্টা করবেন চাকুরীর চাহিদানু্যায়ী আপনার জীবনবৃত্তান্তটি সাজাতে। চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি ভালোভাবে পড়ুন এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য অনুসন্ধান করুন।
- সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার উচিত হবে সঠিক এবং সত্য তথ্য দিয়ে জীবনবৃত্তান্তটি সাজানো। ।আপনার এমন কোন তথ্য দেওয়া উচিত হবে না যেটা চাকরি ইন্টারভিউ এ মিথ্যা প্রমাণিতহয়।
একটি জীবনবৃত্তান্তের বিভন্ন অংশ
নিচের তথ্যগুলো জীবনবৃত্তান্তে সুগঠিতভাবে সাজাতে হবেঃ
- শিরোনাম
- কর্মজীবনের সারাংশ
- কর্মজীবনের লক্ষ্য
- অভিজ্ঞতা
- শিক্ষা
- আনুষঙ্গিক
- ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি
- রেফারেন্স
শিরোনাম
আপনার নাম প্রথমেই থাকবে। এটা হওয়া উচিত ‘বোল্ড’ ফরম্যাটে এবং ফন্টের সাইজ বড় হবে (ডাক নাম ব্যবহার থেকে পরিহার করুন)। তারপর আপনার ঠিকানা লিখুন (আপনার বর্তমান ঠিকানা যেখানে কিনা আপনার মেইল আসবে)। ফোন নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা লিখুন।এই অংশ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পৃষ্ঠার কেন্দ্রে থাকা ভালো।
চাকরীর সারাংশ
৪-৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে এরকম ব্যাক্তিদের জন্য এটি উপযুক্ত। সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ লাইনের মধ্যে আপনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। আপনার কর্ম জীবনের অর্জন ছোট করে তুলে ধরুন (যদি থাকে)
কর্মজীবনের লক্ষ্য
এই অনুচ্ছেদ সাধারণত সদ্য চাকরি প্রার্থীদের জন্য উপযুক্ত অথবা যাদের ১ থেকে ২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। আপনার কর্ম জীবনের লক্ষ্য এই অণুচ্ছেদ এ তুলে ধরুন। সাথে তুলে ধরুন কিভাবে আপনার অভিজ্ঞতা এবং পদবীর জন্য কার্যকর অর্জনের মিল রয়েছে। চাকুরির বিজ্ঞপ্তির সাথে মিল রেখে আপানার কর্মজীবনের উদ্দ্যেশ্য ঠিক করুন। আপনি কিভাবে কোম্পানির কাজের জন্য উপযুক্ত এবং আপনি কোম্পানি থেকে কি আশা করেন তাতে জোড় দিন।
অভিজ্ঞতা
যাদের চাকরির অভিজ্ঞতা আছে তাদের জন্য এই অনুচ্ছেদ শিক্ষাগত যোগ্যতার আগে আসবে। যেসকল জিনিস এই অনুচ্ছেদে বিবরণ করতে হবেঃ
- প্রতিষ্ঠানের নাম।
- পদবি
- সময়সীমা – শুরু ও শেষ তারিখ
- চাকরীর দ্বায়িত্বাবলী
- বিশেষ অর্জন
আপনার যদি একই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্নক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে সেগুলো আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করুন। আপনার সর্বপ্রথম কাজের ক্ষেত্রটি এক্ষেত্রে সবার শেষে রাখুন। ছোট এবং অর্থহীন অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভাল। কর্মসংস্থানের মধ্যে ফাঁক যেন দীর্ঘ সময় না হয় সেটার চেষ্টা করুন।
শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ
- শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক তথ্যটি অভিজ্ঞতা অংশের আগে আসবে নতুন চাকুরী প্রার্থীর জন্য।
- ডিগ্রীর নাম (যেমন এস.এস.সি, এইস.এস.সি, বি.কম)।
- কোর্সের সময়কাল।
- প্রতিষ্ঠানের নাম এবং বোর্ড।
- পরীক্ষা পাসের সাল এবং ফলাফল প্রকাশের তারিখ(যদি প্রয়োজন হয়)।
- ফলাফল এবং কোন বিশেষ অর্জন(যদি থাকে)।
আপনার সদ্যপ্রাপ্ত অথবা অধ্যয়নরত ডিগ্রী নাম অভজ্ঞতা অংশের মতো সর্বপ্রথম উল্লেখ করা উচিত এবং তারপর ক্রমানুসারে অন্যান্য ডিগ্রীসমূহ তুলে ধরুন। মনে রাখুন, যদি আপনার চূড়ান্ত ফলাফল না প্রকাশিত হয় তবে আপনার উচিত হবে “Appeared” উল্লেখ করা। যদি আপনি কোন প্রোগ্রাম এ অধ্যয়নরত থাকেন তবে “Ongoing” লিখুন। যদি কোন ডিগ্রীর ফলাফল ভাল না হয় তবে আপনার এটি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। মনে রাখবেন যে, যদি আপনি একটি ডিগ্রীর ফলাফল উল্লেখ করেন এবং অন্য একটির ফলাফল এড়িয়ে যান তাহলে এটা খারাপ দেখাবে। আপনার কর্ম অভিজ্ঞতাকে সমর্থন করে এমন কোন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এ যদি আপনি অংশগ্রহণ করে থাকেন তাহলে এটি উপস্থাপন করুন। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান,বিষয় এবং প্রশিক্ষণের সময়কাল তুলে ধরুন। শিক্ষা অংশের পরে আপনার প্রশিক্ষণের তালিকা উপস্থাপন করতে পারেন।
আনুষঙ্গিক তথ্য
যেই তথ্যগুলো আপনার উপরের উল্ল্যেখিত অনুচ্ছেদে আসেনি কিন্তু আপনার চাকুরির সাথে সম্পৃক্ত সেগুলো এই অনুচ্ছেদে উল্ল্যেখ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ:
- পেশাগত সাফল্য
- পুরষ্কার
- ভাষাগত দক্ষতা
- কম্পিউটার জ্ঞান
- অনুমতিপত্র, সরকারী পরিচয়পত্র, প্রকাশনা, কর্তৃত্বদান
- সেচ্ছাসেবকমূলক কাজ ইত্যাদি
ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি
আপনি আপনার বাবা মায়ের নাম, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, ভ্রমনকৃত জায়গা (দেশ) যদি থাকে, শখ ইত্যাদি এই অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
রেফারেন্স
আপনার অতি নিকট আত্মীয়কে রেফারি অথবা রেফারেন্স অংশে উল্ল্যেখ করা উচিত না। রেফারি হতে হবে সে যে কিনা আপনাকে খুবই কাছ থেকে আপনার ছাত্রজীবন এবং কর্মজীবন দেখেছে। আপনাকে অবশ্যই তাঁর ফোন নাম্বার, ঠিকানা, এবং ই-মেইল এড্রেস (যদি থাকে) উল্ল্যেখ করতে হবে। দুই থেকে তিনজনকে রেফারি হিসাবে উল্ল্যেখ করা ভালো। রেফারিদেরকে জানিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি তাদেরকে রেফারি হিসাবে জীবনবৃত্তান্তে রেখেছেন।
Discussion about this post