নিউজ ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি অনুষদের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান। শুয়ে–বসে সময় কাটছিল না। পরে অবসরকে কাজে লাগাতে সবজি চাষ করেন তিনি।
মাস তিনেক আগেও জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত। আগাছা, গাছের ডালপালা, কাঠের টুকরাসহ বিভিন্ন জিনিস পড়ে ছিল। মানুষ দাঁড়াত না। এখন সেখানে মনোরম সবজিখেত। ধরেছে লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়া, কাকরোল, চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজি। পরিবারের চাহিদা তো মিটছেই, সঙ্গে কিছু অংশ বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
এ দৃশ্য গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বানারহাওলা (দাওরা) গ্রামে। করোনাকালের অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে পরিত্যক্ত জমিতে ওই সবজি চাষ করেছেন নাজমুল হাসান নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী। এতে পরিবারের সবজির চাহিদা মেটার পাশাপাশি কিছু সবজি বাজারে বিক্রি করে মিলছে আর্থিক সচ্ছলতা। সেই সঙ্গে অবসরটাও ভালো কাটছে তাঁর।
নাজমুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি অনুষদের শিক্ষার্থী। ফার্মাসি বিভাগ থেকে বি-ফার্ম (প্রফেশনাল) শেষ করে বর্তমানে এম-ফার্মে (ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ) পড়ছেন। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে। করোনার প্রকোপ শুরু হলে গত ১৮ মার্চ বাড়ি আসেন তিনি। এরপর ২৬ মার্চ সরকারের অঘোষিত লকডাউন শুরু হলে ঘরবন্দী হয়ে পড়েন তিনি। দিন–রাত কাটছিল শুয়ে–বসে। এরপর সময়টাকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে শুরু করেন কৃষিকাজ।
শুরুর গল্পে নাজমুল বলছিলেন, বাড়ি আসার এক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হয় লকডাউন। প্রথম কয়েক দিন ভালো কাটলেও পরে অস্থিরতা কাজ করছিল ভেতরে। এ ছাড়া সঙ্গে প্রয়োজনীয় বই–পুস্তক না থাকায় পড়াশোনাও জমছিল না। সামাজিক দূরত্বের প্রশ্ন থাকায় বন্ধু বা প্রতিবেশীদের সঙ্গেও দেখা করার সুযোগ ছিল কম। এরপর হঠাৎ করেই মাথায় কৃষিকাজের চিন্তা আসে তাঁর। এরপর বাজার থেকে বীজ সংগ্রহ করে শুরু করেন সবজি চাষ। এরপর এই পরিত্যক্ত জায়গা প্রস্তুত করেই সবজি চাষ শুরু করেন।
নাজমুল বলেন, ‘করোনার প্রকোপ দেখে স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারছিলাম, পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় খাদ্যসংকট দেখা দেবে, এমন ভাবনা থেকেই কৃষিকাজের চিন্তা মাথায় আসে আমার। আর এটার জন্য সবচেয়ে ভালো হলো সবজি চাষ। এরপর লকডাউনের মধ্যেই বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ শুরু করি। বর্তমানে যে পরিমাণ সবজি আছে, তাতে আমার নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়েও ৮ থেকে ১০টি পরিবার চালানো সম্ভব।’
গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, সবজিখেতটি নাজমুলের বাড়ির পাশেই। প্রায় এক বিঘা জমিকে বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ করে চাষ করা হয়েছে লাউ, মরিচ, লালশাক, পাটশাক, শসা, বেগুন, মিষ্টিকুমড়া, চিচিঙ্গা, কাকরোল, কচু, বরবটিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। প্রতিটি গাছেই ঝুলছে এসব সবজি। পাশেই রয়েছে কলাবাগান। সেখানেও ধরেছে নানা জাতের কলা। এ ছাড়া এক পাশে নিজেই তৈরি করেছেন কমপোস্ট সার। এতে সার বাবদ তাঁর কোনো বাড়তি খরচ হয় না।
কৃষিকাজ বা সবজি চাষের ব্যাপারে নাজমুল হাসানের পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে সবজি চাষের পরিকল্পনা মাথায় আসার পর থেকেই তিনি কৃষিবিষয়ক বিভিন্ন অ্যাপ (সফটওয়্যার) ও ইন্টারনেটের সহযোগিতা নেন। জমির মাটি বা ধরনের সঙ্গে মিল রেখে বীজ কেনা, লাগানো বা পরিচর্যা—সবকিছুই করেন ইন্টারনেট দেখে। এতে অন্যান্য কৃষকের তুলনায় দ্রুত ফলন পেয়েছেন বলে দাবি তাঁর।
নাজমুল বলেন, ‘কৃষি এখন অনেক উন্নত। গ্রামের সাধারণ কৃষকেরা অনেকেই জানেন বা বোঝেন না। তাঁরা বীজ বপন বা পরিচর্যা করেন অনুমানের ভিত্তিতে। এতে সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসের ব্যবহার হয় না অনেক সময়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পান না। কিন্তু আমি বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল ফলার আগ পর্যন্ত সব কাজ করেছি ইন্টারনেট দেখে ও নিজের অর্জিত জ্ঞান থেকে। সে ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো কৃষকের চেয়ে আমার জমিতে ফসল ফলে আগে।’
নাজমুল আরও বলেন, ‘আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে এসে এই লকডাউনে কৃষিকাজ করছি, এটা দেখে অনেকেই অবাক হন। আমার বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই মজা করে বলেন আমি “গ্র্যাজুয়েট” কৃষক। তাতে আমার ভালোই লাগে। এ ছাড়া আমি মনে করি, এই অবসর সময়ে শুধু সোশ্যাল মিডিয়া বা গল্পগুজবে না কাটিয়ে, চাইলেই কাজে লাগানো যায়। সেটা হতে পারে কৃষি বা অন্য যেকোনো কাজ। এতে সময়টাও ভালো কাটে।’
Discussion about this post