নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী বেকার যুবক-যুবতিদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন মেয়াদে চারটি ট্রেডে মোট ৭৩৮০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত দেশের ৬৪টি জেলা কার্যালয় ও যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ বাস্তবায়ন করা হবে। আগ্রহীরা নিজ জেলা বা উপজেলা কার্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবে ৮ জুলাই ২০২০ পর্যন্ত।
প্রশিক্ষণ ও মেয়াদকাল
মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ট্রেডের মেয়াদ ৬ মাস। এ ট্রেডে ২৭টি জেলার ৩৪টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পাবে মোট ১৪৮০ জন। এতে প্রতি কেন্দ্রে সুযোগ পাবে ৪০ জন। ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্ট ট্রেডের প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৪ মাস। দেশের বিভাগীয় শহরের ১০টি কেন্দ্রে ২৫ জন করে মোট ২৫০ জনকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তৈরি পোশাক ট্রেডে প্রশিক্ষণের মেয়াদকাল ৩ মাস। দেশের ৬৪টি জেলার মোট ৭০টি কেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এতে প্রতি কেন্দ্রে ২৫ জন করে প্রশিক্ষণ পাবে মোট ১৭৫০ জন। তিন মাস মেয়াদি গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক ট্রেডে ৬৪ জেলার ৬৪টি কেন্দ্রে ৬০ জন করে মোট ৩৯০০ জন প্রশিক্ষণ পাবে।
ট্রেডভেদে যোগ্যতা
মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ট্রেডে ভর্তি হতে পারবে এইচএসসি উত্তীর্ণরা। ‘ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং’, ‘তৈরি পোশাক’ এবং ‘গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি’—এ তিনটি ট্রেডের প্রার্থীদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে অষ্টম বা সমমানের পাস। বয়স থাকতে হবে ১৮ থেকে ৩৫-এর মধ্যে এবং বেকার নারী বা পুরুষ হতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীদের বয়স শিথিলযোগ্য।
আবেদন পদ্ধতি
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের নির্ধারিত আবেদন ফরম পাওয়া যাবে www.dyd.gov.bd ওয়েবসাইটে। এ ছাড়া প্রতি জেলার উপপরিচালকের কার্যালয়, যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর/ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর এবং উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিনা মূল্যে আবেদন ফরম সংগ্রহ করা যাবে। আবেদন পূরণ করে নিজ নিজ জেলা বা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দপ্তরে ৮ জুলাই ২০২০ অফিস চলাকালে জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌর কমিশনার কর্তৃক জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি এবং সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
বাছাই প্রক্রিয়া ও সাক্ষাৎকার
আবেদন জমা নেওয়ার পর জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রার্থীর আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রতিটি ট্রেডে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য মৌখিক পরীক্ষা বা সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে অধিদপ্তরের নিজ নিজ জেলা কার্যালয়ে। মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং এবং তৈরি পোশাক—এ তিন ট্রেডের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে ১২ জুলাই ২০২০। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি ট্রেডের সাক্ষাৎকার বা মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে ৯ জুলাই, ২০২০ তারিখে। মৌখিক পরীক্ষার সময় এবং পরবর্তী সময়ে বাছাইকৃতদের ভর্তির সময় সব মূল কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। ভর্তির ব্যাপারে নির্বাচনী বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে গণ্য হবে। তবে কোনো যুব সংগঠন কর্তৃক মনোনীত ও নারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
প্রশিক্ষণ ফি
১৫ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া এসব প্রশিক্ষণের সব খরচ বহন করবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। প্রার্থীদের কাছ থেকে নামমাত্র প্রশিক্ষণ ফি নেওয়া হবে। মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন ট্রেডের ভর্তি ফি নেওয়া হবে ৫০০ টাকা। ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং এবং তৈরি পোশাক ট্রেডের কোর্স ফি দিতে হবে ৫০ টাকা। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক ট্রেডে ভর্তি ফি বাবদ ১০০ টাকা জামানত হিসেবে জমা দিতে হবে এবং তা কোর্স শেষে ফেরত দেওয়া হবে। সব ট্রেডে ভর্তির সময় ভর্তি ফি পরিশোধ করতে হবে।
আছে আবাসন ও সম্মানী ভাতা
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং এবং তৈরি পোশাক—এ তিন ট্রেডের প্রার্থীদের আবাসিক সুবিধা না থাকলেও গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি ট্রেডের জন্য আবাসন সুবিধা রয়েছে। ভর্তি ও সুযোগ পাওয়া প্রশিক্ষণার্থীরা বিনা খরচে যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্রে থাকার সুযোগ পাবে। সে ক্ষেত্রে খাওয়াসহ অন্যান্য খরচ নিজে বহন করতে হবে। তা ছাড়া এ ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থীদের উপস্থিতির ভিত্তিতে প্রতি মাসে জনপ্রতি ৩০০০ টাকা করে সম্মানী দেওয়া হবে। নিয়মিত ক্লাস করলে তিন মাসে মোট ৯০০০ টাকা সম্মানী ভাতা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আছে ঋণপ্রাপ্তির সুবিধাও
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, কর্মমুখী এসব বিষয়ের প্রশিক্ষণ শেষে রয়েছে কর্মসংস্থানের বেশ সুযোগ। হাতে-কলমে কাজ শেখানো হয় বলে অভিজ্ঞতার দিক থেকে অন্যদের চেয়ে বেশি এগিয়ে থাকে। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তারা যেমন নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কাজ শুরু করতে পারে, তেমনি রয়েছে চাকরির সুযোগ। তা ছাড়া প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর অসচ্ছলদের জন্য স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। কোনো কর্মমুখী কাজের জন্য তিন বা ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রার্থীদের সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফান্ড থেকে এ ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ গ্রহীতাকে এ ঋণের টাকা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করার সুযোগ দেয় অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।
যোগাযোগ
প্রশিক্ষণ ও ভর্তির জন্য যোগাযোগ করতে হবে নিজ নিজ জেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ে। এ ছাড়া নিজ জেলার প্রতি উপজেলা যুব প্রশিক্ষণকেন্দ্রের কো-অর্ডিনেটর/ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর এবং নিজ উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার দপ্তরেও মিলবে দরকারি তথ্য। অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট (www.dyd.gov.bd) এবং ২৭ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে পাওয়া যাবে ভর্তির তথ্য।
Discussion about this post